আ.লীগের ইশতেহারে কী থাকছে এবার?
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে তিন বছর পূর্ণ করেই পরবর্তী নির্বাচনের জন্য বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। আগামী ২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আবারো জয়ের স্বপ্ন দেখছে দলটি। আর সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচনের।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির তাগিদও দিয়েছেন। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছেন এরই মধ্যে। এ ব্যাপারে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
তবে সেসব বক্তব্য নিয়ে ইতোমধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সবারই কৌতুহল কী থাকছে এবারের ইশতেহারে। বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুটিই ছিল মুখ্য। এবার জঙ্গিদমন কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। শীর্ষ নেতারা সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ, জেলায় জেলায় দলের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের নির্দেশনা দিচ্ছেন। এসবই আগাম নির্বাচনের ইঙ্গিতকে জোরালো করে তুলেছে।
সম্প্রতি ঢাকায় ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন। তার আগে গেল বছরের অক্টোবরে দলের জাতীয় সম্মেলনে নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও ঘোষণা দিয়েছেন আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হবে।
এরপরই বিভিন্ন মহলে আগাম নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে কী থাকছে সে ব্যাপারেও আলোচনা চলছে। বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ইশতেহারে স্লোগান ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। ৪৮ পাতার ওই ইশতেহারে দূরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে ২০৪১ সালের অর্জনের কথা উল্লেখ ছিল। যাকে রূপকল্প ২০৪১ হিসেবে দাবি করা হয়েছে। তাতে অগ্রাধিকার পেয়েছিল, প্রশাসন, গণতন্ত্র, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীয়করণ, কৃষি, ধর্মীয় স্বাধীনতা, দারিদ্র্যের হার ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, নগরায়ণ, পরিকল্পতি উন্নয়ন, ১০ হাজার থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। সেই সঙ্গে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রথম সারির উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ে বাংলাদেশকে উন্নত করা।
ওই ইশতেহারে বলা হয়েছে- আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। শুরু হয়েছে দারিদ্র্য ও পশ্চাৎপদতা থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের ঐতিহাসিক কালপর্ব।
ঘোষিত ওই ইশতেহারের অনেকাংশই বাস্তাবায়ন করা হয়েছে বলে দাবি দলের নেতাদের। তবে এবার একাদশ নির্বাচন ঘিরে ইশতেহারে আরো অগ্রগতির দিক তুলে ধরা হবে। যা লক্ষ্য হিসেবে থাকবে। এর মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার মূল লক্ষ্য থাকতে পারে। সেই সঙ্গে শান্তি আর সম্প্রীতির বিষয়ে জোর দেয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, নির্বাচন আগাম না হলেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি যে আরম্ভ হয়ে গেছে, তা বলা যায়। আবার অন্যদিক থেকে ধরা হলে, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এত বড় সংগঠনকে নির্বাচন উপযোগী করতে সময় প্রয়োজন। তাই একটু আগেই প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে।
তবে নির্বাচনের প্রায় দুই বছর আগে এমন তোড়জোড়কে খুব একটা স্বাভাবিক মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এত আগেই কেন নির্বাচনমুখী হচ্ছে, তা আমার বোধগম্য নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলছেন, জানি না আগাম নির্বাচন হবে কি না। তবে এটা ঠিক যে আমরা আগাম প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছি। তারা আরো বলেন, আমরা ইশতেহার করার কাজ শুরু করেছি, নির্বাচন মাথায় নিয়ে নেতাকর্মীদের রাজনীতি করার নির্দেশনা পাঠাচ্ছি। দলের এই কর্মযজ্ঞকে অনেকেই আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে মনে করতে পারেন।
এত আগে ইশতেহার ও কর্মীদের নির্দেশনা কেন, এই প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, আমরা একটি নির্বাচন পার করেই আরেকটি নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকি। এই ব্যস্ততা তারই অংশ। আমাদের এই ব্যস্ততা নিয়ে অনেকের ভেতরে আগাম নির্বাচনের ‘খোয়াব’ দেখা দিতে পারে। এটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, সুবিধামতো সময়ে নির্বাচন হতে পারে। তবে সেটা কখন, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তাই যেকোনো সময়ে নির্বাচন হতে পারে, এমন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে প্রস্তুতি সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে। এর ফলে সর্বস্তরে সংগঠনও চাঙ্গা হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটা রাজনৈতিক দল, যারা একটা নির্বাচন শেষ করে আরেকটা নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। আমাদের সব মন্ত্রী ইশতেহার পকেটে রাখেন। তারা প্রতিদিন দেখেন, ইশতেহারের কতটা কাজ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি।
দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, এটা সত্যি যে আওয়ামী লীগ পরবর্তী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই কাজ শুরু করেছে। কিন্তু এটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই যে কালই নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের কাজ শুরু করার একমাত্র লক্ষ্য, কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত নেতাকর্মীদের চাঙা রাখা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রমকে আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে অনেকেই দেখতে পারেন। এটা ঠিক যে নির্বাচন সময় মতো হবে। তবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা মানে সাংগঠনিক চর্চা।
মন্তব্য চালু নেই