আয়নাবাজিতে ‘বাম্পার’ ব্যবসা

নিউমার্কেটের বলাকা সিনেমা হলের গেটের সামনে হঠাৎ হৈ-চৈ। দারোয়ানরা নিজেদের ভেতর ঝগড়ায় ব্যস্ত। কাছে যেয়ে বোঝা গেল কিছু একটা হিসাব-নিকাশে গড়মিল বাধিয়েছেন তারা। ঝগড়া দেখতে দেখতে ‘আয়নাবাজি’র হালচাল জানতে ভেতরে ঢুকলাম। হল কর্মকর্তারা সব খোশ মেজাজে।

কথা হলো টিকিট বিক্রির সঙ্গে জড়িত কর্মচারী মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে। চোখে-মুখে তার ‘পৌষ মাস’। মনে হল এত খুশি জীবনে আর কখনো হননি।

‘একদম বাম্পার। কতদিন যে এমন ব্যবসা হয়নি, তা মনে করতে পারছি না। আয়নাবাজির মতো একখান ছবি হলেই হয়। পুরো সুপারহিট। প্রথম দিন থেকেই হাউজফুল।’ বলতে বলতে সিরাজের গলা চওড়া হয়, ‘বাংলাদেশের খেলার দিন একটু কম বিক্রি ছিল। জানতাম এমন হবে। তবে (রবিবার) অনুমানের চেয়ে বেশি মানুষ হয়েছে।’

সিরাজরা মূলত হল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাইকারিতে টিকিট কিনে নেন। তারপর নিজেরা বিক্রি করেন। ১ অক্টোবর বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ফাইনাল খেলা ছিল। ওই দিন প্রত্যাশামতো টিকিট বিক্রি করতে পারেননি তারা। তবে ২ অক্টোবর আবার সেই প্রত্যাশা পূরণ তো হয়েছেই, বরং ছাড়িয়ে গেছে। সেই ছাড়ানোর অঙ্কটা টাকার হিসাবে কত, সিরাজ অবশ্য সেই ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারলেন না।

বাধ্য হয়ে যোগাযোগ করা হয় মালিকপক্ষ এবং ছবির এজেন্টদের সঙ্গে।

জানা যায়, ছবি মুক্তির দিন (৩০ সেপ্টেম্বর) এই প্রেক্ষাগৃহে চার লাখ ৪৯ হাজার ৪০ টাকার টিকিটি বিক্রি হয়েছিল। দ্বিতীয় দিন টিকিট যায় ৫ লাখ ৫২ হাজার ৪৮০ টাকার।

গতকাল ছিল তৃতীয়দিন। এদিন বিক্রি হয় ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮০ টাকার টিকিট। বলাকা সিনেমা গত কয়েক বছরে এমন ব্যবসা করতে পারেনি।

আয়নাবাজির এজেন্টদের দাবি, সব প্রেক্ষাগৃহে এই হারে টিকিট বিক্রি হয়েছে। কোথাও কোথাও বেশি।

অমিতাভ রেজা পরিচালিত এই ছবির চিত্রনাট্য করেছেন গাউসুল আলম ও অনম বিশ্বাস। আর ছবিটি প্রযোজনা করেছে কনটেন্ট ম্যাটার্স লিমিটেড। এই ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শক্তিমান অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। সঙ্গে আছেন নাবিলা। মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার ধাঁচের এই ছবির অন্য অভিনয়শিল্পীরা হলেন পার্থ বড়ুয়া, লুৎফর রহমান জর্জ, বৃন্দাবন দাশ ও গাউসুল আলম প্রমুখ।

গতকাল বলাকা সিনেমা হলে যেয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সের মানুষ টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ এসেছেন পুরো পরিবার নিয়ে।

দুপুরের ‘শো’ শেষ করে বেরিয়ে আসলেন সামিয়া জাহান নামের এক তরুণী। ‘আয়নাবাজি’ কেমন লেগেছে প্রশ্ন করতেই তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন, ‘বাংলা ছবির পাশাপাশি অনেক ভাষার ছবি দেখি। সেই তালিকায় হিন্দি, ইংলিশ, জাপানি, তামিল এগিয়ে। অনেক ছবি ভালো লাগে। কিন্তু দেখার পর মনে হয় সেই ভালো লাগায় আমার কথা নেই। আয়নাবাজি এই জায়গায় ব্যতিক্রম। কস্টিউম, লোকেশন আমাকে পাগল করে দিয়েছে। কাহিনী এমন যে শেষ পর্যন্ত আপনাকে বসে থাকতেই হবে। পুরো ছবি দেখে মনে হয়েছে, এই ছবিতে আমিও আছি!’

তরুণীর কথা শুনতে শুনতে পরিবারসহ গাড়ি থেকে নামলেন মেহেদি হাসান নামের এক ব্যক্তি। টিকিট পাচ্ছেন না। তাই চিন্তিত। আলাপকালে বললেন, ‘চঞ্চলের অভিনয় দেখতেই এসেছি। শুনেছি পরিবার নিয়ে দেখার মতো ছবি। কতকাল যে পরিবার নিয়ে হলে আসতে পারি না, তার ইয়ত্তা নেই। আজ টিকিট পেলে তো কথা নেই। না হলে কাল আবার আসতে হবে!’ বলেই মেহেদি হাসান টিকিটের সন্ধানে ছুটলেন। ততক্ষণেও গেটের সামনে দারোয়ানদের সেই ঝগড়া থামেনি। দূরে বসে মিটিমিটি হাসছেন মালিকপক্ষের একজন। বড় অদ্ভুত দৃশ্য। কর্মচারীরা ঝগড়া করছেন আর তিনি হাসছেন! কাছে যেয়ে পরিচয় দিতেই কৌতূহল মেটালেন, ‘ওরা হয়তো টিকিট বিক্রির টাকা নিয়ে ঝগড়া করছে। একটা সময় এসব কাণ্ড সামলাতে সামলাতে আমাদের দফারফা হয়ে যেত। এখন আর সেই ছবি নেই, আর এমন ব্লাকও নেই। অনেকদিন পর আয়নাবাজির কল্যাণে এই দৃশ্য দেখে ভালো লাগছে।’ ভদ্রলোকের হাসি কিছুতেই থামে না। তাকে শুনতে শুনতে মনে হয় হল প্রাঙ্গণও মেতে উঠছে ওই হাসিতে।

স্বস্তির হাসি!



মন্তব্য চালু নেই