আসছে আওয়ামী লীগের ভিশন-২০৪১

রাজনীতির নতুন ইস্যু এখন দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক রূপকল্প। রাজনৈতিক নেতারা এজন্য এর নাম দিয়েছেন ‘ভিশন’। ইতিমধ্যে দেশের বড় দুই দলই নিজেদের রূপকল্প বা ভিশন প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। রূপকল্প-২০২১ এর মত আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মত রূপকল্প-২০৪১ প্রণয়নের কাজ শুরু করছে।

অন্যদিকে, বিএনপি র্দীঘমেয়াদি রাজনৈতিক রূপকল্প-২০৩০ প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। এর আগে দলটি সরকার মেয়াদের ইশতেহার দিলেও এবারই প্রথম প্রথমবারের মত দলটি দীর্ঘমেয়াদের রাজনৈতিক রূপকল্প নিয়ে জনগণের সামনে আসছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বড় দুই দলের রাজনৈতিক রূপকল্প ইস্যুটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তারা বলছেন, রাজনৈতিক রূপকল্প মানে দেশের উন্নয়নে রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিভঙ্গি। রাজনৈতিক রূপকল্প জনগনের সামনে উপস্থাপন করলে সবাই জানতে পারবে কোন দল কোন ইস্যুগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে উন্নয়নের জন্য। তবে উপস্থাপনের পর ক্ষমতায় গিয়ে তা বাস্তবায়ন করলেই হবে রূপকল্পের সার্থকতা।

আওয়ামী লীগের ভিশন ২০৪১ সম্পর্কে বলতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গণমাধ্যমকে জানান, ২০২২ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ২০ বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা সম্পন্ন করতে করতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সাল থেকেই সেই ইশতেহার (ভিশন ডকুমেন্ট) তৈরির কাজ শুরু হবে। ৩ বছরে সম্পন্ন হবে পুরো প্রক্রিয়া। এই ইশতেহারের সারসংক্ষেপ জনসাধারণের জন্য উন্মোক্ত করে দেয়া হবে। তবে পরিকল্পনার পুরোটা জানবেন প্রধানমন্ত্রীসহ মাত্র তিন-চারজন মানুষ।

অর্থমন্ত্রী ভিশন ২০২১ সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, ২০০৪ সালে যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন না, তখনও এমন একটি ইশতেহার তৈরি করেছিলেন তারা। ২০০৮ সালে গিয়ে সেই ডকুমেন্ট তৈরির কাজ শেষ হয়েছিল। উল্লেখ্য, ভিশন-২০২১ই ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল।

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যকার বসন্তকালীন বার্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন অর্থমন্ত্রী। সেখানেই গণমাধ্যমের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে। আমরা সরকার হিসেবে নয়, দল হিসেবে কাজ শুরু করব। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদই কিছু মেনিফেস্টো ও কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করব আমরা।তিনি জানান, ২০০৮ সালে একইরকমের একটি ইশতেহার তৈরি করেছিলেন তারা। এতে সময় লেগেছিল ৪ বছর। মুহিত বলেন, জনসাধারণের কাছে এটি ১৬ পৃষ্ঠার একটি ডকুমেন্ট হলেও কয়েকজনের কাছে তা ১০০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট।
প্রধানমন্ত্রীসহ কেবল তিন-চারজন মানুষ এ ধরনের পরিকল্পনার বিস্তারিত জেনে থাকেন বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

মুহিত জানান, প্রধানমন্ত্রী একইভাবে নতুন পরিকল্পনাটি সম্পন্ন করতে চাইছেন। এবং এবারও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া মাত্র ৩/৪জন মানুষ এই প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকবেন। তিনি বলেন, একইরমের একটি ডকুমেন্ট ২০২১ সাল নাগাদ তৈরি করতে চান তিনি (প্রধানমন্ত্রী)। এটি হলো ২০৪১ সালের জন্য ভিশন ডকুমেন্ট। আমার মতে, দলের জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আগের পরিকল্পনাটিও আমি করেছিলান, তাই জানি এর সঙ্গে কতটা নিষ্ঠার সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে হয়। এসময় ২০১৮ সালে তিনি অবসরে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।

রাজনৈতিক দলের রূপকল্প প্রণয়ন নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই চর্চাটি রাজনীতি ও উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক। আগে সরকারে ক্ষমতার মেয়াদ পর্যন্ত অর্থাৎ পাঁচ বছরে রাজনৈতিক দলগুলো কে কি করবে তা উপস্থাপন করতো। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কোন ভিশন ছিল না। তাই দেশের প্রধান দুট বড় দল যখন দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক রূপকল্প নিয়ে কাজ করছে, তখন অবশ্যই এটি রাজনীতির জন্য, জনগনের জন্য ইতিবাচক। তিনি বলেন, রূপকল্প প্রনয়ন করলেই হবে না। রূপকল্পের বাস্তবায়নও করতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই