আর কত আঘাত নেবে বাংলাদেশ?
মাটিতে লুটিয়ে পড়েই চোখ বন্ধ করে ফেললেন মুশফিকুর রহিম। মুখে যন্ত্রণার অভিব্যক্তি। একটু দূর থেকে তাঁর অবস্থা দেখেই সাউদার্ন এন্ডের দিকে আম্পায়ারের ইশারা। বিজ্ঞাপনের বোর্ড সরিয়ে দেওয়া হলো। আস্তে আস্তে মাঠে ঢুকল হলুদ একটি অ্যাম্বুলেন্স। ক্রিকেট মাঠে অ্যাম্বুলেন্স ঢোকা নতুন কিছু নয়। তবে বেসিন রিজার্ভের ইতিহাসে এই প্রথম।খবর প্রথম আলো’র।
গতকাল স্ট্রেচার ঢুকেছে। আজ ঢুকল অ্যাম্বুলেন্স। এরপর কী? ওয়েলিংটন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ দলের যে অবস্থা, তাতে এই প্রশ্নই আসছে মনে। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালের উইকেট বেসিন রিজার্ভের চেয়েও অনেক বেশি বাউন্সি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আরও কঠিন সময় পার করার কথা সেখানে।
নিউজিল্যান্ডের পেসারদের মুহুর্মুহু বাউন্সারের সামনে ওয়েলিংটন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অসহায় সময় পার করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। একদিকে উইকেট পড়ছে, আরেকদিকে একের পর এক ব্যাটসম্যান মাঠ ছাড়ছেন আহত হয়ে। আঘাতের পর আঘাতে জর্জরিত এবারের নিউজিল্যান্ড সফরে শুধু মুশফিকই এ নিয়ে তৃতীয়বার চোটে পড়লেন। ইমরুল কায়েস দুবার।
ওয়েলিংটন টেস্টে পালা করে হাসপাতালেও যেতে হচ্ছে তাদের। প্রথম ইনিংসে আঙুলে ব্যথা পেয়ে হাসপাতালে যেতে হয় মুশফিককে। সেই চোটকে হারিয়ে তিনি যখন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে প্রস্তুত, তখনই ঊরুর চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন ইমরুল। রাত কেটেছে ইমরুল আর ব্যাট করতে পারবেন কিনা সেই দুশ্চিন্তায়। তবে সকালে জানা গেল, প্রয়োজন পড়লে তিনি ব্যাট করবেন। কিন্তু সেই প্রয়োজন যে এভাবে পড়বে, সেটা কে জানত!
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে আজ সকাল থেকেই বাউন্সারের অস্ত্র তাক করেন নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। মূল দায়িত্বটা যথারীতি নিল ওয়াগনারই নিলেন। টিম সাউদিও কম যাননি। মুশফিককে হাসপাতালে পাঠিয়েছে তাঁর বিদ্যুৎ গতির বাউন্সারই।
বাউন্সর বুঝে ডাক করে মাথা ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন মুশফিক। বল আঘাত করে হেলমেটের পেছন দিকে। সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। মাঠে ছুটে যান দুই দলের ফিজিও আর বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ১০-১২ মিনিটের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মুশফিককে। দর্শকদের মধ্যে তখন চরম উত্কণ্ঠা। বাংলাদেশি সাংবাদিকদের দেখে অনেকেই মুশফিকের ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন। তাদেরও প্রার্থনা ছিল, মুশফিক দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।
মুশফিকের অ্যাম্বুলেন্স মাঠ ছাড়ার পর তামিম ইকবাল সবাইকে আশ্বস্ত করেন, ‘চোট গুরুতর নয়। মাথায় বল লাগাতেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’ হাসপাতাল থেকেও কোনো খারাপ খবর আসেনি। ঘাড়ের এক্স-রে করানোর পর ডাক্তাররা চোট মারাত্মক নয় বলেই জানিয়েছেন। ভবিষ্যতেও কোনো বিপদের শঙ্কা নেই। হাসপাতাল থেকে মাঠে ফিরে ড্রেসিংরুমে বসেই বাকি খেলা দেখেছেন মুশফিক।
মুশফিককে নিয়ে যখন বেসিন রিজার্ভে চরম উদ্বেগ, মাঠে অ্যাম্বুলেন্সের প্রবেশ; ঠিক তখন বাংলাদেশ দলের আরেক ক্রিকেটারও হাসপাতালে। তিনি টেস্ট দলের বাইরে থাকা মোস্তাফিজুর রহমান। কাঁধের এক্স-রে করাতে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন ম্যানেজার সাব্বির রহমান।
মোস্তাফিজকে দিয়েই নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দলের চোট-জর্জর হওয়ার শুরু। মুশফিক, মাশরাফি, তামিম, ইমরুল হয়ে সেটা যেন মহামারির মতোই ছড়িয়ে পড়ল বাংলাদেশ শিবিরে। কাল সকালে ওয়েলিংটন থেকে ক্রাইস্টচার্চ যাওয়ার বিমানে তাই একটা প্রশ্নও সঙ্গী হবে দলের—এরপর কে?
একটা বুকচেরা হতাশাও কি থাকবে না সঙ্গে? যে দল প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রান করে ৫৬ রানের লিড নিতে পারে, তারাই কীভাবে দ্বিতীয় ইনিংসে তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ে ১৬০ রানে অলআউট? জয়ের স্বপ্ন ড্রয়ে নেমে আসতে পারে। তাই বলে মাত্র ২১৬ রানের লিড নিয়ে পরাজয়ের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে যাবে শেষ দিনের চা বিরতির এত আগেই!
মুশফিক না হয় চোটে পড়েছেন, ইমরুল না হয় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়েছেন, বাকিরা? দুই সতীর্থের চোটের ধাক্কায় তারাও কি খেলা ভুলে গেলেন! দ্বিতীয় ইনিংসে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়েই নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস খেলা টেস্টেও হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো। মুশফিক, ইমরুলদের শরীরের ব্যথা হয়তো বেশি দিন থাকবে না। কিন্তু মনের এই আঘাত কত দিন বয়ে বেড়াতে হয় কে জানে।
মন্তব্য চালু নেই