আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইতিহাসে পাওয়া মজার কিছু ঘটনা

আমেরিকার নির্বাচনকে নিয়ে কত মাতামাতিই না হল কিছুদিন আগে পৃথিবীর সবখানে। এখন সেই নির্বাচনী উত্তেজনা থিতিয়ে গিয়েছে, কমে গিয়েছে বক্তব্য আর পাল্টা বক্তব্যের ঝাঁঝালো মৌখিক যুদ্ধও। কিন্তু নির্বাচন হয়ে গেলেই কি এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব ঘটনা ভুলে যাওয়া যায়? একদম না। আর তাই চলুন এক পলকে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া মজার ঘটনাগুলোকে দেখে আসি।

১. আমেরিকার একমাত্র নির্ভেজাল নির্বাচন

নির্বাচন মানেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি আর নোংরা সব বিষয়ের জগাখিচুড়ি। তাই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে নির্বাচিত হতে গিয়ে অনেক সময় অনেক অসদুপায় অবলম্বন করে থাকেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহনকারীরা। নির্বাচন হয়ে পড়ে অস্বচ্ছ। এমন নির্বাচনের নজির আমেরিকার ইতিহাসে অনেক। তবে এবার যে নির্বাচনটির কথা বলব সেটা আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হলেও দেশটির ইতিহসে এটিকেই প্রথম ও একমাত্র নির্ভেজাল ও স্বচ্ছ নির্বাচন বলে মনে করা হয়। নির্বাচনটি হচ্ছে ১৭৮৮ থেকে ১৭৮৯ সাল। নির্বাচনে জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকান জনগনের শতভাগ সমর্থন পেয়ে রাষ্ট্রপতির আসনে বসেন। আর কেনইবা সেটা হবেনা? এটিই যে আমেরিকার প্রথম রাষ্ট্রপতির নির্বাচন ছিল। ভাবছেন, জর্জ ওয়াশিংটনই সব ভোট পেয়ে গেলেন? তার প্রতিপক্ষ কি একটা ভোটও পেল না? নাহ! পাবেই বা কী করে। নির্বাচনে জর্জ ওয়াশিংটনের যে কোন প্রতিপক্ষই ছিল না!

২. সমানে সমান লড়াই

প্রথম নির্বাচনটি এমন হলে কী হবে? ১৮০০ সালের আমেরিকান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনটি কিন্তু মোটেই খুব একটা সহজ ব্যাপার ছিল না। প্রচন্ড লড়াই হয় সেবার থমাস জেফারসন আর অ্যারন বারের ভেতরে। তাও আবার রাষ্ট্রপতি আর সহ-রাষ্ট্রপতি পদের জন্যে। সব ঠিকঠাক থাকলে জেফারসনেরই একটি ভোট বেশি পেয়ে রাষ্ট্রপতির আসনে বসবার কথা ছিল। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত গোলমাল হয়ে যায় সবকিছু আর দুজনেই মোট ৭৩ টি ভোট পেয়ে টাই করেন। পরবর্তী সাতদিন সবাই বেশ অস্বস্তি আর দ্বিধায় ভুগলেও শেষ পর্যন্ত জেফারসন এগিয়ে যান আর জিতে নেন রাষ্ট্রপতির আসন।

৩. কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির নির্বাচন

ব্যাপারটার শুরু হয়েছিল ১৮২৪ সালের নির্বাচন থেকে। সেসময় অ্যান্ড্রু জ্যাকসন আর জন কুইন্সি অ্যাডামসের ভেতরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় এবং শেষ অব্দি হেনরি ক্লের কাস্টিং ভোটে জিতে জান জ্যাকসন। ফলে জ্যাকসন হেনরি ক্লে কে সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে অভিষিক্ত করেন। বাজারের দরকষাকষি হয়েছে জ্যাকসন আর ক্লের ভেতরে- এমনটাই কথা ছড়ান অ্যাডামস তখন। পরবর্তীতে ১৮২৮ সালের নির্বাচনের বেশ আগে আগে আবার পুরোন শত্রুতা মাথাচড়া দিয়ে ওঠে। সেসময় জ্যাকসনের স্ত্রী র‍্যাচেল মারা যান। র‍্যাচেলের শেষকৃত্যে অ্যাডামস আসেন আর বলেন- আশা করি ঈশ্বর রেচেলের হত্যাকারীকে ক্ষমতা করবেন। কথাটা যে জ্যাকসনকে উদ্দেশ্য করেই বলেছিলেন অ্যাডামস সেটা আলাদা করে বলে দেওয়ার দরকার ছিলনা। জ্যাকসনও অবশ্য পাল্টা জবাব দেন এই উক্তির। তিনি বলেন- আমি চাই না তার হত্যাকারীর সাজা না হোক। অবশ্যই কথাটা অ্যাডামসকে লক্ষ্য করেই বলা হয়েছিল।

৪. মৃত্যু মাধ্যমে জয়

১৮৭২ সালের কথা। সেবার নির্বাচনে উলিসেস এস. গ্রান্ট খুব সহজেই জিতে যান। যদিও শুরু থেকেই বেশ লড়াই চলছিল তার আর প্রতিপক্ষ আর হোরাস গ্রিলির ভেতরে। তবে হুট করেই পুরো চিত্রটা বদলে যায় যখন শেষ ভোটের আগেই মারা যান গ্রিলি। বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় জিতে যান গ্রান্ট। গ্রিলিকেই আমেরিকার ইতিহাসের একমাত্র মানুষ হিসেবে মনে করা হয় যার মৃত্যু হয়েছিল নির্বাচন শেষ হওয়ার একদম শেষ পর্যায়ে।

৫. কলম যুদ্ধ

১৭৭৬ সালের কথা। সেবার নির্বাচন প্রচারণার সময় প্রতিপক্ষ জন অ্যাডামসকে কুপোকাত করার জন্যে গোপনে জেমস ক্যালেন্ডার নামে একজন লেখকে ভাড়া করেন থমাস জেফারসন। অ্যাডামসকে নিয়ে পত্রিকার পাতায় বাজে খবর ছড়ানোটাই ছিল জেমসের কাজ। পরবর্তীতে অবশ্য সে ধরা পড়ে আর জেল খাটতে বাধ্য হয়।

৬. অচেনা প্রার্থী

খানিকটা নিজস্ব স্বার্থরক্ষার খাতিরেই সেবার রিচার্ড নিক্সন একদম অচেনা এক রাজনীতিবিদকে নির্বাচনের জন্যে তালিকাভুক্ত করেন। স্পিরো অ্যাগনিউ নামক এই রাজনৈতিকের নির্বাচনে দাঁড়ানোর কথা শুনে সাংবাদিকেরা প্রথমে এতটাই অবাক হয়েছিলেন যে তাদের কথাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি প্রথম স্পিরো অ্যাগনিউয়ের নামটি শুনে তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন এসেছিল- এটি কি কোন ডিমের জাত? এটি কি কোন রোগ?



মন্তব্য চালু নেই