আমি ২৬ বছর বয়সী কুমার, প্রেমে পড়েছি দ্বিগুন বয়সী নারীর

আমার বয়স ২৬। তিন বছর আগে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের পর আমার বাবা-মার বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়ার পর জীবনে এক কঠিন সময় পার করছিলাম।

আমার এক সহকর্মী নারী আমাকে তার বন্ধু বানান। ওই প্রেমময়ী নারীর বয়স এখন ৫০।
আমরা পরস্পরের খুবই ঘনিষ্ঠ হই। কিন্তু শারীরিকভাবে নয়। আমি একজন কুমার। আমার কখনোই শারীরিক ঘনিষ্ঠতার অভিজ্ঞতা হয়নি। ওই বয়স্ক নারীটির সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্রে আমি তার প্রতি প্রণয়াবেগে আকৃষ্ট হই। কিন্তু আমি বুঝতে পারি আমার প্রতি ওই নারীর বন্ধুত্বের বাইরে আর কোনো আবেগ নেই। আমিই শুধু একতরফাভাবে তার প্রতি প্রেম অনুভব করছি।
সম্প্রতি এক পুরুষের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। তিনি আমাকে বলেন যে, তিনি ওই পুরুষটিকে ভালোবাসেন। এটা আমার জন্য বেশ বেদনাদায়ক হয়। এতে আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে পীড়িত হই। অন্য পুরুষের সঙ্গে তার ভালোবাসার কথা ভাবতে গেলেই আমার কান্না পায়। হৃদপিণ্ডে ধুকপুকানি শুরু হয়। এবং রাতের ঘুম উবে যায়।
আমি তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চাই। কিন্তু তাকে দেখলেই আমার একটি হারানো প্রেমের অপ্রতিরোধ্য অনুভূতি হয়। আমি কীভাবে এই বিষাদ ও ক্ষতির অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করব, তার ক্ষতি না করেই আমার ঈর্ষার মোকাবিল করব, এবং আমার স্বার্থপর অনুর্ভূতির জায়গায় স্বার্থহীন অনুভূতি স্থাপন করব?
উত্তর দিচ্ছেন ম্যারিয়েলা
আমার মনে হচ্ছে আপনি অনেক লম্বা সময় ধরে জল মাড়িয়েছেন। আর এই ঘটনার আপনার সময় হয়ে এসেছে আশেপাশের অন্যান্যদের সঙ্গে আরো বেশি ফলপ্রসূ মিথষ্ক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়ার বা সম্পর্ক গড়ে তোলার। আর আমার মনে হয়না আপনি এই নারীর সঙ্গে কোনো প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়েছেন। তারচেয়ে বরং আমার মনে হয় আপনি সম্ভবত তার প্রতি শারীরিকভাবে আকৃষ্ট ছিলেন। আর তিনি অন্য কারো সঙ্গে রোমান্সে জড়িয়ে পড়ার আগে আপনি হয়তো তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দেখেননি।
আর আপনি ব্যাখ্যা করে বলেননি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও কেন আপনি এখনো কুমার রয়ে গেছেন। বিষয়টি আমার মধ্যে নানা আতঙ্কজাগানিয়া প্রশ্ন উস্কে দিচ্ছে। আপনি কি ধর্মীয় কারণে এখনো কুমার রয়ে গেছেন? নাকি নারীদের সঙ্গে যৌনতায় আপনার কোনো আগ্রহ নেই? বিকল্প কোনো উপায় অবলম্বন কি সাংস্কৃতিক কারণে আপনার জন্য সম্ভব নয়? নাকি যৌনতার প্রতি আপনার তেমন কোনো আগ্রহ নেই?
নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করুন। এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর থেকে আপনি আপনার বর্তমান পরিস্থিতিটা বুঝতে পারবেন। যা আপনার বৃহত্তর ভবিষ্যতের সুখ নিশ্চিত করতেও সহায়ক হবে। আর আপনাকে বুঝতে হবে আপনি কেন একটা ভেঙ্গে পড়েছেন। আমারে মনে বিষয়টা এতো সরল নয় যতটা আপনি ভাবছেন।
আর তাকে হারানোর বেদনায় ক্লিষ্ট না হয়ে আপনার বরং তার সঙ্গে যে বন্ধুত্ব উপভোগ করেছেন সে বিষয়টিকেই উদযাপন করা উচিৎ ছিল। আমরা আসলে আমাদের আশীর্বাদগুলো কমই গণ্য করি। কিন্তু এটা এমন একটা পরিস্থিতি যখন আপনার উচিৎ ছিল ওই নারীকে প্রয়োজনের সময় নিজের পাশে পাওয়ার জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া। অব্যশ্য তিনি এখনো আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখেছেন।
তার নতুন সম্পর্ক হয়তো আপনাদের বন্ধুত্বের জন্য তেমন কোনো হুমকি হবে না। সুতরাং তার সৌভাগ্য উদযাপন করুন। এবং আগের মতোই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব বজায় রাখুন।
আর আপনি সত্যিই আসলে একজন ভাগ্যবান মানুষ। কারণ বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর দুঃসময়ে আপনি ওই নারীর মতো একজন ভালো মানুষের কাঁধে মাথা রাখতে পেরেছেন। নয়তো আপনি হয়তো কোনো বিপজ্জনক মানুষের খপ্পরেও পড়তে পারতেন। আর তাছাড়া আপনারা যদি প্রেমের সম্পর্কে জড়াতেন তাহলে হয়তো আপনাদের সম্পর্ক খুব বেশিদিন স্থায়ী হত না। সুতরাং তার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখলে ভবিষ্যতেও আপনি উপকৃত হবেন। আর আপনি নিজেও কোনো নারীর সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ুন।
আর তার সঙ্গে আপনার দুঃখের বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলুন। তার কাছে মানসিক সহযোগিতা চান। এবং নিজের জন্য একজন প্রেমিকা বা জীবনসঙ্গিনী খুঁজুন। তিনি হয়তো আপনাকে আগের মতোই সহয়তা দেবেন। কারণ তিনি আপনার চেয়ে অনেক বেশি পরিপক্ক এবং প্রাজ্ঞ। আর তিনিও আপনার কাছে তার সম্পর্কের ব্যাপারে কোনো লুকোচুরি করেননি। সুতরাং তার কাছে গেলে তিনি আপনার সমস্যাটি বুঝতে পারবেন এবং ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবেন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান



মন্তব্য চালু নেই