আমি অনেক কেঁদেছি, কিন্তু সেই জানোয়ার আমাকে…

“আপু,আমি আজকে যে ঘটনাটা শেয়ার করবো তা শুনার পর হয়ত প্রত্যেকটা মানুষই আমাকে ঘৃণা করবে। কিন্তু আমি তাও আজ বলবোই।

আমার রিলেশন চলছে প্রায় তিনবছর ধরে। আসলে চলছে না বলে কোন রকম ভাবে চলছে বলাই ভাল। আর যাই হোক,মিথ্যার উপর তো আর ভালবাসার সম্পর্ক হয় না। আমার প্রেমিক আমার প্রতি বেশ উদাসীন বলা যায় প্রায় শুরু থেকেই। সে তাঁর ফ্রেন্ডস নিয়ে খুব বিজি থাকে। আর যখন ও ফ্রেন্ডের সাথে থাকে তখন আমার ফোন রিসিভ করে না,বিরক্তও হয়। আমাকে ও প্রায়ই বলতো তুমিও ফ্রেন্ড বানাও,ওদের সাথে টাইম দাও, সবসময় তো আর আমি তোমাকেই সময় দিব না।

রিলেশনের শুরুতে আমি ওর অবহেলা সহ্য করতেই পারতাম না। তখন আমার নতুন নতুন ভার্সিটি ক্লাশ খুলেছে। আমি নতুন ফ্রেন্ড বানানোর চেষ্টা করতাম, কিন্তু কেন যেন হচ্ছিল না। সবাইকে খুব সেলফিস মনে হত। আমার তখন একটা মাত্র ছেলেবন্ধু ছিল। দেখা যেত কাজ নাই, প্রেমিককে ফোনে পেতাম না বন্ধুটাকেই ফোন দিতাম। আড্ডা দিতাম। সেও আমাকে খুব সময় দিত। ওর যখন ব্রেকাপ হয় তখন আমি ওকে খুব সাপোর্টও দিই। ওর ব্রেকাপের পর ছেলেটা খুব ভেঙে পড়ে যা দেখে আমি খুব ইমোশনাল হয়ে পড়ি ওর প্রতি। বাট আপি, বিলিভ মি আমি ওকে ভালবাসতাম না। আমি জানতাম আমি কী ফিল করতাম, জাস্ট সিমপ্যাথি। বাট আমার ফ্রেন্ডটা সব ভুল বুঝতে শুরু করে। ও আমাকে প্রোপোজ করে। তখন ওর ব্রেকাপের প্রায় ৬ মাস হবে। আমি রাজি হই না। কন্ট্যাক্ট অফ করে দিই আমার প্রেমিকের পরামর্শ নিয়ে।

কিন্তু তার একমাস পরে কোইন্সিডেন্টলি অনেকটাই আমার বোকামিতে ওর সাথে দেখা হয়ে যায়। ওই ফ্রেন্ডটা তখন এত রিকোয়েস্ট করে যেন আমি ফ্রেন্ডশিপটা রাখি। সে বলে যে জীবনেও আমার আর আমার ভালবাসার মাঝে আসবেনা। আমি শুধু এই শর্তেই রাজি হই আবার ফ্রেন্ডশিপ করতে। কিন্তু আমি বুঝতেও পারিনি ওর মূল উদ্দেশ্য কী ছিল।

ও প্রথম কয়েকটা মাস খুব ফ্রেন্ডলি বিহেইভ করে। তারপর রোজার ঈদ এর ছুটিতে ওর সাথে দেখা করার প্ল্যান হয়। কিন্তু আমি যাই না কিছু প্রব্লেমের জন্য। তখন ও নিজেই আসে আমাদের এলাকায়। আমি পাবলিক প্লেসেই দেখা করি। কিন্তু সেখান থেকে ও আমাকে না বলে আগে থেকেই প্ল্যানিং করে রেখেছিল এমন জায়গায় নিয়ে আটকে ফেলে। আমি অনেক বাঁধা দিয়েছিলাম আপু। অনেক কেঁদেছি, তাও ওই জানোয়ার আমাকে ধর্ষণ করে। আপু আমি আজ পর্যন্ত এই ঘটনাটা কাউকেই বলতে পারিনি।

খুব ভয় করে আপু। আমার কনজারভেটিভ ফ্যামিলি আমাকে কখনওই মানবেনা। কিন্তু আপু আমি তো কাউকে ঠকাতেও চাইনা। আমার প্রেমিকের সাথে আমার এখনো অনেক ঝামেলা হয়। ওই ঘটনার পর থেকে আমি অনেক চেষ্টা করি ব্রেকাপের কিন্তু ও কারণ চায়। আমি ওকে বলতেও পারি না আবার ঠকাচ্ছি বলে প্রচন্ড লজ্জাও লাগে। খুব ঘৃণা হয় আপু নিজেকে। মরে যেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আমার সাহসে কুলায় না।

আমি তো আপু চাইনি নষ্ট হতে। কেন এমন হলো! আমি কেন ওইদিন গেলাম দেখা করতে এসব ভাবলে পাগল হয়ে যাই। ভয়ে লজ্জায়, না কাউকে বলতে পারলাম, না ওই জানোয়ারকে উচিত শাস্তি দিতে পারলাম। আমি কী করবো আপু? সবকিছুই গোলোকধাঁধা লাগে। আমি আপু কাউকে হারাতেও চাইনা, ঠকাতেও পারছি না।”

পরামর্শ:
আপু, আমি আপনাকে খুব সহজ ভাবে একটি কথা বলছি। সেই কথা, যা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। একজন মানুষের সম্মান তাঁর যৌনাঙ্গে না। একজন নারীর সম্মান কখনোই তাঁর যোনিতে না। আপনার সাথে যা হয়েছে, সেটা একটি বিরাট দুর্ঘটনা। এটা তো আপনার ইচ্ছায় হয়নি আপু, আপনি তো চান নি ধর্ষিতা হতে। কেউ আপনাকে ধর্ষণ করলো বলেই আপনি নষ্ট মেয়ে নন আপু। বরং নষ্ট সেই জানোয়ারটা, যে আপনার সাথে এই জঘন্য কাজ করেছে। কখনোই কোন অবস্থাতে নিজেকে ছোট ভাববেন না আপু। নষ্ট মানুষ তাঁরা, যারা নিজের লালসা মেটাতে একাধিক জনের সাথে প্রেমের নাটক করেন, প্রতারণা দেন, ধোঁকা দেন, যৌন সম্পর্ক করেন, ধর্ষণ করেন। যিনি দুর্ঘটনার শিকার, তিনি কিছুতেই নষ্ট নন। নিজেকে ছোট ভাবা বন্ধ করুন, প্লিজ!

আমার যা মনে হচ্ছে, বিষয়টি আপনার পরিবারে জানানো মোটেও উচিত হবে না। আপনি নিজেই ছেলেটির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, এই বাহানায় পরিবার আপনাকেই দুষবে। অন্যদিকে আপনার জীবনটা পরিবারের অত্যাচারে দোজখ হয়ে উঠবে। আর যেখানে আপনার প্রেমিকের প্রশ্ন, সেখানে তাঁকে সত্য কথাটা বলতে পারেন আপনি। ৩ বছর যাবত সম্পর্ক টিকে আছে, আপনি সরে যেতে চাইলেও তিনি দেন না ইত্যাদি সবই প্রমাণ করে যে তিনি আপনাকে যথেষ্ট ভালোবাসেন। তাঁকে সমস্ত সত্য খুলে বলুন, সাথে এটাও বলুন যে আপনি ছেলেটির উচিত শিক্ষা চান। তারপর সিদ্ধান্ত প্রেমিককে নিতে দিন।

সে যদি সবকিছু জানার পর আপনাকে ছেড়ে চলে যায়, সেটা তাঁর ইচ্ছা। এই ইচ্ছায় আপনি বাঁধা দিতে পারেন না। মিথ্যা বলে তাঁকে নিজের কাছে ধরে রাখাটাও অনুচিত। তখন সবকিছু ভুলে জীবনকে নতুনভাবে শুরু করতে হবে আপনার। তবে সাহস হারাবেন না। আমাদের সমাজে যেমন জানোয়ার আছে অনেক, তেমনই অসংখ্য বড় মনের পুরুষ আছেন যারা নারীকে সম্মান ও ভালোবাসা দিতে জানেন।

তবে আমার মনে হচ্ছে সব জেনেও তিনি হয়তো আপনার পাশেই থাকবেন। যদি তাই হয়, তাহলে জানবেন মানুষটি আপনাকে অনেক বেশী ভালোবাসে। তখন সেই মানুষটি যা পরামর্শ দেবেন, তাঁর পরামর্শ মেনেই চলবেন। দুজনে বুদ্ধি করে জীবনকে সুন্দর করে তুলবেন, ছেলেটির সাজার ব্যবস্থা করতে চাইলেও দুজনেই মিলেই করবেন সব।

আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা থেরাপিও নিতে পারেন আপু। আপনার ভালো লাগবে, স্বস্তি আসবে মনে।

এই লেখার মাধ্যমে সমস্ত মেয়েদেরকেই বলছি, কার সাথে মেলামেশ করছেন, একটু খেয়াল করবেন প্লিজ। একটা সুন্দর চেহারার পেছনে একজন হায়েনা লুকিয়ে থাকতেই পারে। কেবল একলা লাগছে বলেই অচেনা অজানা কারো সাথে ঘুরতে চলে যাবেন না। চোখ বন্ধ করে কাউকে বিশ্বাস করে বসবেন না প্লিজ।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:
আমি কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক বা আইনজীবী নই। কেবলই একজন সাধারণ লেখক আমি, যিনি বন্ধুর মত সমস্যাটি শুনতে পারেন ও তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু পরামর্শ দিতে পারেন। পরামর্শ গুলো কাউকে মানতেই হবে এমন কোন কথা নেই। কেউ যদি নতুন কোন দিক নির্দেশনা পান বা নিজের সমস্যাটি বলতে পেরে কারো মন হালকা লাগে, সেটুকুই আমাদের সার্থকতা।প্রিয়ডটকম



মন্তব্য চালু নেই