আমিই আমার অহংকার

এই সুন্দর পৃথিবীর বুকে আমাদের জন্ম হতে পারে কোনো প্রাণী কিংবা মনুষ্য জাতির যেকোনো লিঙ্গের একজন হিসেবে। আবার কখনো জন্মসূত্রেই আমরা কেউ ধনীর ঘরের দুলাল/দুলালী কিংবা কোনো রাজ পরিবারের সদস্য অথবা একজন দিনমজুরের ঘরের অপ্রত্যাশিত ও অকাঙ্ক্ষিত সন্তান হিসেবে পৃথিবীর আলো দেখি। তারপর নির্ধারিত হয় আমার তোমার নাম, আমরা কোনো মানচিত্রের অংশীদার ও কোনো পতাকার কর্ণধার। এই পরিচয়ের রেশ ধরে আমরা আমাদের নাগরিক অধিকারগুলো ভোগ করি।

পৃথিবীর অন্য কোনো ভূমিতে আমাদের যথেচ্ছায় প্রবেশ অনুমোদিত নয়, যেকোনো দেশের পতাকা নিজ কাঁধে চড়িয়ে নিলেই আমরা সেই পতাকার কর্ণধার নয়। আমাদের জন্মই যার যার পরিচয় নির্ধারণ করে দেয়, সেটা সৌভাগ্যক্রমে অথবা দুর্ভাগ্যক্রমে হলেও সত্য। আর কার কোথায় জন্ম হবে, তা নির্ধারণ করবার দায়ভার পুরোপুরি উপরওয়ালার হাতে।

একটি গোত্রের যারা এই জন্মসূত্রে মানচিত্র ও পতাকা নির্ধারণ নিয়ে টানাপোড়েন মনস্তাত্ত্বিক দীনতায় ভোগেন, তাদের অনেকে ছুটে যান তাদের সন্তানকে অন্য কোনো মানচিত্রের পরিচয়ে জন্ম দিতে। একটি পরিচয়পত্র যোগাড় করতে হাজার কিলোমিটার দূরের পথের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন নিজের জন্মস্থানকে বৃদ্ধাআঙ্গুল দেখিয়ে। আর যাদের সামর্থ্য নেই তাদের অনেকে সন্তান জন্ম দেবার পর থেকেই নিজের সুপ্ত ইচ্ছা পূর্ণ করবার জন্য সন্তানকে বিদেশপ্রীতি ব্যাক্তিত্ববান করে তুলতে কোমরে কাপড় বেঁধে নামেন।

আফসোস উভয় পক্ষই ভুলে যান যে, একবার জন্মসূত্রে কোন দেশের নাগরিক হওয়ার পর কখনই সম্ভব নয় সেই পরিচয়কে অস্বীকার কিংবা গোপন করা। পুরো বিশ্ব ঘুরে কোনো দেশও পাওয়া যাবে না যারা তোমার নিজের দেশের পরিচয়কে ঊহ্য রেখে তোমায় গ্রহণ করবে। শুধু ভুলে যাও- যেই ভূখণ্ডেই তুমি ভ্রমণ কর না কেন এই তোমার নামের সঙ্গে সঙ্গে তোমার দেশের নামটিও উচ্চারিত হয়।

আর তোমরা অনেকেই যখন নিজের দেশের মাটিতে বসে অন্য দেশের পতাকা, বিশেষত যদি সেটি হয় নিজ দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রতিপক্ষ দেশের পতাকা এবং সেটি নিজের গালে এঁকে ও শক্ত হাতে তা ধরে উন্মাদের মতো চিৎকার করে ওই দেশের প্রতি তীব্র ভালোবাসার প্রকাশ করো, তখন বড্ড বেশি অচেনা লাগে তোমাদের। নিজেদের পরিচয়কে তখন প্রশ্নবিদ্ধ করো, তোমাদের এই উন্মাদনার মাঝে ফুটে ঊঠে ৭১’এর হায়েনাদের সেই গণহত্যা পরবর্তী উল্লাসের প্রতিচ্ছবি। মনে হয় এ ভূখণ্ডে তোমার জন্ম যেন এক কলঙ্কময় অধ্যায়।

বিজয়ের মাসে আজ সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়াবার, নিজেকে নিয়ে ও নিজের দেশ নিয়ে অহংকার করবার, জন্মসূত্রে বাংলাদেশী নাগরিকত্ব নিয়ে গর্বিত হবার। তুমি, আমি আমরাই আমাদের অহংকার এবং সব চাইতে মূল্যবান অলঙ্কার আমাদের এই সোনা ফোলা জন্মভূমিতে। এসো আজ উল্লাস করি আমাদের সোনার বাংলার ৪৩ বছরের প্রাপ্তি গুলো নিয়ে, আন্দোলন করি আরও বেশি উন্নয়নের পথ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। তবেই হবে আমাদের জয়।

এলিজা আজাদ টুম্পা, সিডনি প্রবাসী



মন্তব্য চালু নেই