আমাদের প্রাত্যাহিক যে বিষয়গুলোই অতীতে ছিল ভয়ের কারণ
বর্তমানে প্রযুক্তি ও উন্নত সভ্যতার কারণে চাইলেই সবকিছু আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসে। প্রতিনিয়ত একটু একটু করে সবকিছুকে কী করে আরো একটু ভালো করে তোলা যায় সেটার চেষ্টা করে চলেছেন সবাই। কিন্তু আপনি কি জানেন যে বর্তমান যুগের অনেক মানুষের চেষ্টায় হাতের মুঠোয় পাওয়া এই সমস্ত স্বাভাবিক সুবিধাগুলোই একটা সময় সবার কাছে ছিল বেশ ভয়ের বিষয়? চলুন জেনে আসি এমন কিছু মজার বিষয়কে।
১. মশলা
প্রতিদিন রান্নায় নানারকম মশলা ব্যবহার করি আমরা স্বাদবর্ধক হিসেবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের খাবার আর সেটাতে একটু বেশি ঝাল-মশলা হবেনা তা কি হয়? কিন্তু আপনি কি জানেন যে, বর্তমান সময়ে এসে মশলাকে খুবই সহজ্প্রাপ্য একটি বিষয় মনে হলেও একটা সময় এই মশলাকে ঘিরে হয়ে গিয়েছে বিশালরকম যুদ্ধ? শুধু তাই নয়, সোনা-রুপার চাইতে মশলার ভান্ডার ছিল ইউরোপের গর্বের বিষয়। খুব বেশি আগে কথা নয় সেটা। মধ্যযুগের সেই সময়টাতে মশলাকে ব্যবহার করা হত মাদক, মুদ্রা কিংবা মৃত্যুর কারণ হিসেবেও। খাবারে জয়ফলের দরকার পড়লে হয়তো দৌড় গিয়ে দোকান থেকে কিনে আনতে পারছেন আপনি। কিন্তু সেসময় জয়ফল পাওয়া যেত অনেক দূরে অবস্থিত মশলার দ্বীপ নামে খ্যাত বান্ডা দ্বীপে। তাই বুঝতেই পারছেন, আজকের দিনের এত সাধারণ মশলা কেন অতীতে ভয়ের কারণ ছিল। সত্যিই তো, মারামারি আর যুদ্ধের কারণ হতেপারে যে জিনিস সেটাকে ভয় পাবেনা কে?
২. পুলিশ
নামটা শুনে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটিয়ে হয়তো আপনি ভাবছেন- এ আর নতুন কী? পুলিশকে মানুষ ভয় পাবেনা এমনটা আবার হয় নাকি? তবে যে সময় ও স্থানের কথা বলব সেখানে মানুষের পুলিশকে অতিরিক্ত রকমের ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। ১৮ শতকের কথা। লন্ডনে সেসময় পুলিশ দেখলেই উল্টো ঘুরে যেত মানুষ। কারণ আর কিছু নয়, ছদ্মবেশ। বাস্তবে সেসময় পুলিশ না হয়েও পুলিশের পোশাক পরিধান করে মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার একটা বিষয় চালু হয়। চোর-গুন্ডারা পুলিশের ব্যবহৃত ব্যাজকে নকল করে নিজেরা পুলিশ সেজে সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করার পথ অবলম্বন করে তখন। ফলে পুলিশ নয়, পুলিশের ভান করে দাড়িয়ে থাকা চোর-গুন্ডাদের কারণে পুলিশ হয়ে ওঠে সেসময় লন্ডনের মানুষের জন্যে প্রচন্ড ভয়ের ব্যাপার।
৩. ভোট প্রদান
বর্তমানে ভোট দিতে গেলে সবচাইতে বেশি হলেও কোন খারাপ বিষয়টি ঘটার আশা করেন আপনি? একটু হাতাহাতি কিংবা জালভোট, এইতো? কিন্তু একটা সময় ছিল যখন ভোট বিষয়টি ছিল এখনকার চাইতেও অনেকগুন বেশি ভয়ের। কেন? কারণ সেসময় ভোট মানেই ছিল নির্যাতন। বলছি ১৯ শতকের কথা। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষেরাও নেহাত ঝামেলায় না পড়লে বাইরে বেরোবার সাহস করতেন না ভোটের দিনে। কারণ সেসময় ভোটের দিনে বাড়ি থেকে বেরোন মানেই প্রার্থীদের দলের লোকজনের হাতে ধরা পড়ে যাওয়া। আর কোনভাবে যদি ধরা পড়েই যেত কেউ তাহলে প্রথমে দলের লোকেরা তাকে একটি অন্ধকার ঘরে রেখে আসতো। এরপর প্রচুর ধমক আর জোরপূর্বক মদ্যপানের পর নিজেদের পছন্দমতন মানুষকে ভোট দেওয়াতে বাধ্য করতো তারা বন্দীকে। একবার ভোট দেওয়া হয়ে গেলেই পরিষ্কার কাপড় পরিয়ে আবার বেশ কয়েকবার ভোট দেওয়ানো হত মানুষটিকে দিয়ে। এভাবে কয়েকবার ভোট দেওয়া হলে তবে মুক্তি মিলতো বন্দীর।
মন্তব্য চালু নেই