আমাকে ‘টাচ’ করবেন না
প্রেমিকার রোম্যান্স ঠাসা মেসেজ পথ ভুলে সোজা পাড়ি দেয় গুরুগম্ভীর বসের ইনবক্সে। কিংবা দেদার ভুলভাল লেখার তোড়ে ভেসে চলে যায় দিনভরের ক্লান্তি। ছোট্ট ছোট্ট ভুলে দিব্যি জুটে যায় পাহাড়প্রমাণ হাসির খোরাক। রামগরুড়ের ছানা হওয়া তখন স্ট্রিক্টলি মানা।
পথভোলা এক মেসেজ এসেছি…
রোদজ্বলা এক দুপুরে হঠাৎ ঝুপ্পুস বৃষ্টি। তুমুল ভিজে মন জুড়ে ভেজা ভেজা প্রেম নিয়ে অফিস কিউবিকলে ফিরেই জয়কে মেসেজটা পাঠিয়ে ফেলেছিল তিতির। উত্তর আর আসে কই! একরাশ রাগ নিয়ে মেসেজবক্স খুলেই ঘেমেনেয়ে একশা। জয় নয়, আহ্লাদে আটখানা সেই মেসেজ চলে গিয়েছে জয়দীপ, মানে বসের কাছে।
তার পর? বসের দেদার ঠাট্টা তো বটেই, অন্তত বছর দুয়েক অফিস কলিগদের আড্ডাতেও ঘুরেফিরে এসেছে তিতিরের কীর্তি। এবং ছুটেছে হাসির ফোয়ারা। এখন তো জয়-তিতিরের সংসারেও ওই গল্পটাই জমিয়ে বসেছে চিরকালের মতো।
বিজনেস অ্যানালিস্ট আজাদের সহকর্মী আঁখির রোগটাও এক্কেবারে এক। টাচস্ক্রিনের সৌজন্যে এলোমেলো স্ক্রল। ‘‘প্রথম প্রথম একেবারে ঘেঁটে ঘ হয়ে যেতাম। কারণ আমার ইনবক্সে আঁখির যে মেসেজটা জ্বলজ্বল করছে, তার সঙ্গে আমার তো কোথাও কোনো সম্পর্কই নেই! জিজ্ঞাসা করে বুঝতাম, ওটা আসলে অন্য কাউকে লেখা। এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। মেসেজের মাথামুণ্ডু নেই দেখলেই বুঝে ফেলি ওটা আমার জন্য নয়!’’ হেসে ফেলে আজাদ। আঁখি অবশ্য থোড়াই কেয়ার— ‘‘বা রে, ভুল করে পাঠানো ভালো গানগুলোও যে পাও! তার বেলা?’’
ভুল-ভুলাইয়া
টাচস্ক্রিন ব্যাপারটা যে ‘অঙ্ক কী কঠিন’-এর মতোই গোলমেলে, হাড়ে হাড়ে বুঝে গিয়েছে ভারতের কলকাতার যাদবপুর ইউনিভার্সিটির প্রাক্তনীদের এক হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ। না বুঝে উপায়ই বা কী! গ্রুপের সদস্য কলেজশিক্ষিকা সংহিতার আঙুলগুলো কিছুতেই যে ঠিক বোতামটায় পড়তে চায় না। আগে-পিছে, উপরে-নীচে কোথায় কখন আঙুল পড়বে, সংহিতা নিজেও খেয়াল করে উঠতে পারে কই! আর সেই ফাঁকেই আরশোলা কখন ‘আরশোকা’ হয়ে যায়, পাগল হয় ‘পাহিক’, জঘন্য হয়ে যায় ‘জঘমঘ’-এর মতো কঠিন কঠিন সব ‘টাইপো’। আর সে শব্দ আসলে কী জানতে কি-প্যাড আঁতিপাঁতি খুঁজে গেসওয়ার্কে নামতে হয় বাকিদের। কখনও বা ইমোটিকন হয়ে হলদেরঙা হাসিমুখের বদলে হাজির হয় বেগুনও! এমনকী খোদ ‘টাইপো’ই হয়ে যায় ‘টুপো’।
‘‘তবে এর জন্য সংহিতার পিছনে লেগেই আমাদের দারুণ কাটে কিন্তু। আমরা ঠাট্টা করলেই বেচারি রেগে যায়, আরও উত্তেজিত হয়, আর আরও ভুলভাল লেখে! ব্যস, আবার তুমুল হাসি। আর সেই হাসিটাই সারাদিনের খাটনির মধ্যে অ-নে-ক-টা অক্সিজেন।’’ একবাক্যে বলে ফেলে ব্যস্ত কপোর্রেট সোহিনী, দেবর্ষিরা। ‘‘আমরাও কিন্তু এখন ওর ভাষাটাই রপ্ত করে ফেলেছি। গ্রুপে কথার্বাতা মানেই এখন ভুলভাল লেখা। ‘টাইপো’র কল্যাণে আমাদের সবার এখন রোজ নতুন নতুন নামকরণ হয়। সংহিতার মেসেজ কে কতটা ডিকোড করতে পারল, তা নিয়ে কম্পিটিশনও হয় কিন্তু, ’’ আর একপ্রস্থ হেসে নেয় স্কুলশিক্ষিকা ঐন্দ্রিলা।
ভুল, প্রেম এবং…
একটা ভুল মেসেজ। মানে ভুল করে পাঠিয়ে ফেলা। আর তাতেই জমে গেল ‘এক ছোট্ট লাভস্টোরি’। আসলে ফার্স্ট ইয়ারের সেই প্রথম দিনটা থেকেই দিয়ার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল শামীম। ক্লাসে দিয়া ঢুকলেই চারপাশটা কেমন আলো-আলো। মনের ব্যাকগ্রাউন্ডে গিটারের সুর। কিন্তু ওইখানেই শুরু এবং শেষ। ক্লাস, ক্যান্টিন, সকালের রোদ, দুপুরের আড্ডা, বিকেলের মন-কেমন আলো সব পেরিয়েও তো গড়িয়ে গেল তিন-তিনটা বছর। বলে ওঠা আর হলো কই!
আরও বছর তিনেক পরের কথা। মাস্টার্সের পরে তখন ছড়িয়েছিটিয়ে যাওয়া বন্ধুত্বগুলো আবার ডানা মেলছে ফেসবুকের হাত ধরে, ফের টুকটাক জোগাড় হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া ফোন নম্বর। আলসেমি ভরা এক দুপুরে দিয়াকে মনের কথা বলা মেসেজটা লিখেই ফেলেছিল অর্জুন। পাঠাবে না-ই ঠিক ছিল।
কিন্তু কী করে যে কী হয়ে যায়! ডিলিটের বদলে হাত পড়ল সেন্ড বোতামে। ব্যাস!
দিয়া-শামীমের বিয়ের কার্ড ছাপতে গিয়েছে দিন কয়েক হলো।– ওয়েবসাইট।
মন্তব্য চালু নেই