আপাতত খালেদাকে গ্রেফতার নয়

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এখনই গ্রেফতার করতে চায় না সরকার। অন্তত চলতি সপ্তাহে তিনি গ্রেফতার হচ্ছেন না। দেশী-বিদেশী চাপ সামলাতে সক্ষম হলেই খালেদাকে গ্রেফতার করা হবে।

সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নীতিনির্ধারক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।

একাধিক কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করলে বাংলাদেশের চলমান অস্থিতিশীলতা আরও চরম পর্যায়ে পৌঁছতে পারে এবং গণতন্ত্রের যাত্রা বাধা পাবে— এমন একটি বার্তা ঢাকায় অবস্থিত কূটনীতিকরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন। এ দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১৬ দেশের কূটনীতিকরা মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ কারণে ওই বার্তাটিতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি খালেদা জিয়ার গ্রেফতার প্রসঙ্গে মন্তব্য করে মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্রাইসিস গ্রুপ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সরকারবিরোধী আন্দোলনে গত জানুয়ারি থেকে ১০০ জনেরও বেশি লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের আদালত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট আরও বাড়বে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখনই ইতিবাচক পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ কঠিন অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে।’

তবে ভিন্ন কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, কোনো রকম আইনি ফাঁক রেখে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারে ইচ্ছুক নন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে তার নীতি হচ্ছে, এখন থেকে খালেদা জিয়াকে সব ধরনের আইনি সুযোগ দেওয়া হবে। সুযোগ দেওয়া শেষ হলেই গ্রেফতার।

জানা গেছে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী চলতি সপ্তাহে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে একদফা তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হতে পারে। ওই তল্লাশিতে কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়া ওখানে অবস্থানরত সকলকে বের করে দেওয়া হবে। এমন পরিস্থিতিতে কমপক্ষে দুই-এক সপ্তাহ তাকে একা থাকতে হতে পারে।

পরের ধাপে বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের মোবাইল, টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, দৈনিক পত্রিকা সরবরাহসহ সকল যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হবে। এর পরের ধাপে, তার সঙ্গে দেশী-বিদেশী কোনো ব্যক্তির সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হবে না। শেষ ধাপে আদালতের নির্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার করা হবে।

সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারে দেশে-বিদেশে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করতে চায় সরকার। গ্রেফতারের আগে প্রভাবশালী কয়েকটি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা নিশ্চিত করে বলেছেন, গ্রেফতারের ঝুঁকি এখনই নেওয়া হবে না। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে। আ্ওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতাদের মতে তার উস্কানি থেকে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাই খালেদা জিয়াকে ছাড় দিতে চায় না সরকার।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেফতারে সরকারের ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর এই নির্দেশ পালন করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখানে সরকারের কোনো রিস্ক ফ্যাক্টর নেই।’



মন্তব্য চালু নেই