আপনি কি শপাহোলিক? জেনে নিন লক্ষণগুলো
কেনাকাটা আমাদের জীবনের অংশ। আমরা পোশাক কিনি, খাবার কিনি, উপহার কিনি। কিন্তু সব কেনাকাটা কি প্রয়োজনে? নাকি অপ্রয়োজনেও কিনি অনেক সময়? মাঝে মাঝে প্রয়োজন ছাড়াও ভাল লেগে গেল বলে একটা কানের দুল কিনে ফেলা বা একটা পারফিউম কিনে ফেলা দোষের কিছু নয়। কিন্তু এটি যখন হয়ে দাঁড়ায় অভ্যাস তখন বিবেচ্য হতে পারে মানসিক ব্যাধি হিসেবে। পশ্চিমা বিশ্বে শপিং আসক্তির কারণে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হয় অনেককে। বিজ্ঞাপনের রমরমা প্রচারে লোভে পড়ে কেনাকাটা এখন আমাদেরও বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আসুন জেনে নিই, কখন বুঝবেন অভ্যাসটি পরিণত হচ্ছে ব্যাধিতে!
১। কিনছেন কিন্তু ব্যবহার করছেন না
আপনি হয়ত প্রায়ই এটা সেটা কেনেন। কেনার পর ঢুকিয়ে রাখেন আলমারিতে। আর খুলেও দেখেন না বা দেখলেও ব্যবহার করেন না। অনলাইন শপিং এর যুগে ফেসবুক বা অন্য যে কোন সাইটে প্রবেশ করলেই পাশে ঘুরতে থাকে বিজ্ঞাপন। বসে বসেই পেজ বা সাইটে ঘুরে অর্ডার দিয়ে কিনে ফেলা যায় যে কোন পণ্য। আপনি কিনে এনে জমিয়ে রাখছেন মানে, দেখে দরকারি মনে হলেও আসলে দরকারি নয় পণ্যটি। নিজের প্রয়োজন বুঝতে না পারা, নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা সব কিছুই আপনাকে নিয়ে যাচ্ছে শপিং এডিকশনের দিকে।
২। পরিকল্পনা ছাড়াই কেনাকাটা
আপনি প্রায়ই কোন পরিকল্পনা ছাড়াই পণ্য কিনে ফেলছেন কি? শখের বসে এমনটা হতে পারে দুই একবার। কিন্তু বার বারই যদি হতে থাকে তাহলে চিন্তা করে দেখুন এই বিষয়ে। খেয়াল করে দেখুন, আপনি হয়ত বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছেন। বন্ধুর দেখাদেখি কিনে ফেললেন ফোনের জন্য নতুন একটি কভার। আপনার কভারটি ভাল থাকা স্বত্বেও। এমন হয়ত প্রতিদিনই করছেন, যা একদমই স্বাভাবিক আচরণ নয়।
৩। মন খারাপ হলেই কেনাকাটা
আপনি বিষন্ন/হতাশ বোধ করলে বা মন খারাপ হলেই কেনাকাটা করতে চলে যান? নতুন জিনিস কিনতে পেরে একটা ভাল লাগা তৈরি হয়? এই ভাল লাগাই নেশা তৈরি করছে আপনার মনে। আবার উল্টোটাও হতে পারে। শপাহোলিকরা অনেক সময় কিনতে না পারার কারণে মুড ডিসঅর্ডারে ভোগে। খেয়াল করুন, আপনার ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটছে না তো?
৪। কেনাকাটার সময় আপনি খুব এক্সাইটেড বোধ করেন
শপাহোলিকরা কেনাকাটা করার সময় খুব তাড়া বোধ করে। এজন্য না যে তারা নতুন জিনিসের মালিক হচ্ছেন। বরং এজন্য যে, কেনার কাজটাই তাদের ভাল লাগে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আনন্দের অনুভূতির সাথে ডোপামাইন নামক একটি রাসায়নিকের সংযোগ রয়েছে, যা মস্তিষ্ক থেকে নিঃসরণ হয়। ক্রেতা যখন তার চাহিদামত পণ্য পেয়ে যায় তখন তার মস্তিষ্ক এই রাসায়নিক নিঃসরণ করে। আর যিনি শপিং এ আসক্ত তার ক্ষেত্রে তো এটি আরও বেশী হয়।
৫। আপনি অভ্যাসটি লুকিয়ে রাখেন
আপনি কেনাকাটার পর সেটা কাউকে দেখাতে চান না। কারও সাথে ক্রয় করা বস্তু নিয়ে গল্প করা নিয়ে আপনি অস্বস্তি বোধ করেন। এর দু’টো দিক আছে। হয়ত আপনি শো অফ করা পছন্দ করেন না। অথবা হয়ত আপনি কেনার পর আবারও অপ্র্যোজনে ব্যয় করেছেন বলে নিজেই বিব্রত বোধ করেন এবং চান আর কেউ সেটি দেখে কোন মন্তব্য না করুক।
৬। ঋণ করে কেনাকাটা
হয়ত আপনার হাতে টাকা নেই। অথচ যেটা পছন্দ হয়েছে সেটা কিনতেই হবে। এজন্য আপনি ধারও করতে পারেন। এ ধরণের কাজ আমরা সবাই করি আসলে। হাতে টাকা এলে ফেরতও দিয়ে দিই। কিন্তু শপাহোলিক একজন ব্যক্তি ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলেও ঋণ করে। প্রয়োজনে মিথ্যে বলে। কিন্তু যা কিনতে চায় তা কিনেই ছাড়ে।
৭। উদ্বিগ্ন বোধ করা
কেনাকাটা করতে না পারলে আপনি কি উদ্বিগ্ন বোধ করেন? একজন ক্রয়াসক্ত ব্যক্তির মানসিক আনন্দ নির্ভর করে কেনাকাটার উপর। সকালে যেমন এক মগ দারুণ কফি আপনার মুড ভাল করে দেয় তেমনি যে কোন একটি পণ্য ক্রয় মন ভাল করে দেয় শপাহলিকদের। এটি এক প্রকার ব্যাধি।
এই লক্ষণগুলো যদি আপনার মাঝেও বিদ্যমাণ হয়ে থাকে তাহলে অবস্থা আরও খারপ হয়ে যাবার আগে নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিন। অন্য কোন কাজে আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করুন। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরী। তাই দ্রুতই সচেতন হন। সুস্থ্য জীবনযাপন করুন।
মন্তব্য চালু নেই