আপনি কি জানেন আমাদের রান্নায় ব্যবহৃত মসলা বা গাছ কাঁচা অবস্থায় দেখতে কেমন?
দক্ষিন এশিয়াতে বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে নানা প্রজাতির মসলা জন্মে।তাই যারা এ অঞ্চলের মানুষ অ্থাৎ আমরা ,খাবারে নানা প্রকার মসলা ব্যবহার করে অভ্যস্ত।আর নানা রকম সুগন্ধি মসলা ব্যবহার হয় বলে আমাদের খাবার হয় যেমন সুস্বাদু তেমনি তাতে যুক্ত হয় জিভে জল আনা ঘ্রান। আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ এসব রসাল মসলা তো আছেই সেই সাথে আছে আরো অনেক শুকনো মসলা। এলাচ,দারুচিনি,গোলমরিচ বা লবঙ্গ ছাড়া কাবাব বা ভুনা মাংসের কথা কল্পনাই করা যায় না কিন্ত আমরা কি ভেবে দেখেছি যে এসব মসলা কাঁচা অবস্থায় দেখতে কেমন কিংবা এসবের গাছই বা কেমন হয়?
এলাচ
প্রথমেই যে মসলাটির কথা বলবো সেটা হচ্ছে এলাচ বা এলাচী।মিষ্টি বা ঝাল সব রকম খাবারেই এটির ব্যপক ব্যবহার লক্ষিত হয়।এর বোটানিকাল নাম এলেটারিয়া কার্ডামোমাম (Elettaria cardamomum)ইংরেজিতে বলা হয় কার্ডামন (Cardamon)এটি মূলত আদা জাতীয় একটি গাছ যার গোড়ার দিক থেকে লম্বা ফুলের স্টিক বের হয়।এই ফুলের ফলই হচ্ছে আমাদের পরিচিত এলাচ
লবঙ্গ
লবঙ্গ হচ্ছে একধরনের ছোট চিরহরিত বৃক্ষের ফুল।বৃক্ষটি মূলত ইন্দোনেশিয়ার কিন্ত ইন্ডিয়া,শ্রীলংকা,মাদাগাস্কার,পাকিস্থান,জাঞ্জিবার এবং তাঞ্জানিয়াতে ব্যপখারে জন্মে।এর বোটানিকাল নাম সিজিজিয়াম এরোমেটিকাম (Syzigium aromaticum) ।ইংরেজিতে পরিচিত ক্লোভ (Clove) নামে।উল্লেখ্য এটি কিন্ত কালোজামের পরিবারের বৃক্ষ।বৈজ্ঞানিক নাম তো বটেই গাছের পাতা এবং আকারেও অনেক মিল লক্ষ্য করা যায়।
গোলমরিচ
চাইনিজ খাবার বা স্যুপের স্বাদ গোলমরিচ ছাড়া অপূ্নই রয়ে যায়।মাংশ,কাবার বা বিরিয়ানিতেও গোলমরিচ ছাড়া চলে না।ইন্ডিয়ার দক্ষিন ভাগ মূলত এর জন্মস্থান এছাড়াও অনেক দেশে এটি জন্মে।মজার ব্যাপার হচ্ছে এটি মুলত লতা জাতীয় একটি উদ্ভিদ।লতানো গাছের লম্বা স্টিকে গুচ্ছ গুচ্ছ ফল ঝুলে থাকে।এই ফল পাকলে হয় লাল আর শুকনো ফল দেখায় কালো।এই ফলই আমরা মসলা হিসাবে ব্যবহার করি।এর ইংরেজি নাম ব্ল্যাক পিপার (black pepper) এবং বোটানিকাল নাম পিপার নিগ্রাম (Piper nigram)
দারুচিনি এবং তেজপাতা
দারুচিনি এবং তেজপাতা মূলত একই ধরনের গাছে জন্মে।লরেসি পরিবারভুক্ত বেশ কিছু গাছ এইধরনের সুগন্ধ বহন করে।তবুও তেজপাতা বলতে সিন্নামোমাম ট্যামেলা (Cinnamomum tamala) নামক গাছটিকে বোঝায়।এটি ইংরেজিতে পরিচিত ইন্ডিয়ান বে লিফ (Indian bay leaf) নামে।দারুচিনি মুলত এই ধরনের গাছের বাকল।তবে সত্যিকারের দারুচিনি বলতে সিন্নামোমাম ভেরনামকে (Cinnamomum vernum) বোঝায় যা ভাল জন্মায় শ্রীলংকাতে।ইংরেজিতে দারুচিনি পরিচিত সিন্নামন (Cinnamon) নামে।এসকল গাছের বাকল এবং পাতা সুগন্ধি হলেও সুগন্ধের গুনাগুনের উপর ভিত্তি করে সত্যিকারের তেজপাতা এবং দারুচিনি গাছ আলাদা করা যায়
কালোজিরা
কালোজিরা শুধু মসলা হিসাবেই ব্যবহৃত হয়না ঔষধ হিসাবেও এর কদর অনেক বেশি।কালজিরার তেল এবং মধুকে একত্রে বলা হয় সর্ব রোগের মহৌষধ।কালোজিরা হচ্ছে বর্ষজীবি একপ্রকার বিরুত জাতীয় উদ্ভিদের বীজ।চমতকার হালকা নীল রঙের ফুল হয় এই গাছে।এই ফুল থেকেই হয় ফল যার মাঝে সারিসারি বীজ সজ্জিত থাকে।এর বোটানিকাল নেম নাইজেলা স্যাটিভা (Nigella sativa) ইংরেজিতে পরিচিত ব্লাক কিউমিন (Black cumin) নামে।
জিরা
বাঙ্গালীদের প্রতিদিনের রান্নায় জিরার ব্যবহার অপরিসীম।মাছ,মাংস এবং সবজি বা ভাজিতে জিরা ছাড়া চলেনা।জিরাও একধরনের একবর্ষজীবি বিরুত।গাছ দুই তিন ফুট লম্বা হয়।গাছে গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা ফুল ধরে।জিরা মূলত গাছের ক্ষুদ্র ফল।জিরার বোটানিকাল নাম কিউমিনাম সায়ামিনাম (Cuminum cyminum) ।ইংরেজিতে পরিচিত কিউমিন নামে(Cumin) ।
ধনিয়া
ধনিয়াও জিরার মত একবর্ষজীবি উদ্ভিদ।এরা শুধু এক পরিবার ভুক্ত ই নয় তাদের ফুলও দেখতে একই রকম।ধনিয়ার শুকনো ফল মসলা হিসাবে খাওয়া হয় আর কচি পাতা ব্যবহৃত হয় সালাদ,চাটনি,সবজি আরো অনেক কিছুর সাথে।এর ইংরেজি নাম করিয়ান্ডার (Coriander) এবং বোটানিকাল নাম করিয়ান্ড্রাম স্যাটিভাম (Coriandrum sativum)।
জয়ফল,জয়ত্রী
সবশেষে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি আমার সবচেয়ে প্রিয় মসলার সাথে।জয়ফলের বোটানিকাল নাম মাইরেস্টিকা ফ্রেগরেন্স (Myristica fragrans) ।লক্ষ্য করে দেখুন এর নামের সাথেই সুগন্ধি কথাটা যুক্ত রয়েছে।অসম্ভব সুন্দর সুগন্ধের এই মসলাটির ব্যবহার হয় নানারকম রাজকীয় মোগলাই ধরনের রান্নাতে।রোস্ট, কোরমা বিরিয়ানি,কাবাব ইত্যাদি খাবারের জিভে জল আনা বিশেষ ঘ্রানটি আসে এই মসলা থেকে।যত যাই দেয়া হোক সামান্য একটু জয়ফল যোগ না করলে বিরিয়ানি কে বিরিয়ানি মনেই হয় না।জয়ফলের আদি বাসস্থান ইন্দোনেশিয়া।এটি বৃক্ষ জাতীয় চিরচহরিত গাছ।গাছে রসালো খোসাযুক্ত ফল হয়।যার খোসা ছাড়ালে দেখা যায় রক্তবর্ন পাপড়ির মত আবরন যুক্ত গোলাকার একটা বীজ।এই পাপড়িই হচ্ছে জয়ত্রি যা ভেতরের শক্ত খোসা ভাংলে যে জয়ফল পাওয়া যায় তার মতই সুগন্ধি।ইংরেজিতে পরিচিত Nutmeg নামে।
আজকাল সকলেই স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক সচেতন তাই মসলা খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন।এটা ঠিক যে অতিরিক্ত কিছুই ভাল নয় তবে মসলা যে শুধু খাবারের স্বাদ বাড়াই তাইই না এর প্রত্যেকটির রয়েছে নানা রকম ঔষধিগুন।আমরা এত ধরনের মসলা খাই বলেই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি।ভেবে দেখুন দক্ষিন এশিয়ার মানুষ সবচেয়ে অস্বাস্থকর পরিবেশে থাকে তবুও তারা যতটা সুস্থ থাকে ততটা ইউরোপ আমেরিকার লোক এ পরিবেশে থাকলে পারতোনা।যে পরিমান মসলা খাদ্য হিসাবে আমরা খাই তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যবহৃত হয় ঔষধ শিল্পে।তাই মসলা দেখে ভয় পেয়ে ইউরোপিয়ানদের মত বিস্বাদ খাবারে অভ্যস্ত হয়ে লাভ নেই।আপনি এশিয়ান হয়ে জন্মেছেন তো কেন শুধু শুধু খাবারের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবেন? তার চেয়ে বরং সঠিক উপায়ে রান্না করা খাবার পরিমিত পরিমানে খান,খাঁটি খাবার খান ,সুস্থ থাকুন।
তথ্যসূত্রঃইন্টারনেট
মন্তব্য চালু নেই