আন্দোলন মোকাবিলায় কৌশলী হচ্ছে ক্ষমতাসীন জোট
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলায় জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কৌশলী হচ্ছে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোটের চলমান আন্দোলন প্রতিহতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীনরা। ১৪ দলীয় জোটের একাধিক নেতা এ তথ্য জানান।
শুক্রবার সকাল ১১টায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নারী সংগঠনসহ ঢাকা মহানগরীর নিজ দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বসবে ১৪ দলের নেতারা। একই দিন বিকেল ৪টায় পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত বুধবার ১৪ দলের এক বৈঠকে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন। জোটগতভাবে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, এসব কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও দলের অঙ্গসংগঠনগুলো মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সব শক্তিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকবে। পাশাপাশি নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করবে জোটের নেতা-কর্মীরা।
এতদিন বিএনপি-জামায়াত জোটের চলমান আন্দোলন বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন ক্ষমতাসীন জোটের নীতিনির্ধারকরা। বিশেষ করে তারা জনগণের মনোভাবের বিষয়টি খেয়াল করে আন্দোলনের গতিবিধি লক্ষ্য করছিলেন। এক্ষেত্রে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার সময়কে জনপ্রতিরোধ গড়ার মোক্ষম সময় হিসেবে কাজে লাগাতে চায়। কারণ সরকার দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, ইতিমধ্যে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে মানুষ এই নাশকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ও প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। এমনকি কোনো কোনো এলাকায় সাধারণ মানুষ নাশকতাকারীরে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করছে। এসব ঘটনা ১৪ দলীয় জোটকে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন মোকাবিলায় সাহস যোগাচ্ছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা হবে। বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় জনমত গঠনে স্থানীয় নেতা, সংসদ সদস্য এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দিয়ে সামাজিক সচেতনতা এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলার জোরালো নির্দেশনা দেবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, আগামীকাল কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে কয়েকটি সমন্বয় দল গঠন করা হতে পারে। এসব দলে সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম ছাড়াও প্রাক্তন ছাত্রনেতাদের নিয়ে সমন্বয় করে বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে কাজ করার নির্দেশনা আসতে পারে।
এর আগেও এমন কিছু নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। গত রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দলীয় সংসদ সদস্যসের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার নির্দেশনা দেন।
তাই দলীয় সংসদ সদস্য ও নেতাদের এলাকায় গিয়ে অবস্থানের সুযোগ দিতে দশম জাতীয় সংসদের চলমান পঞ্চম অধিবেশন ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। ১৩তম বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা শেষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া অধিবেশনের মেয়াদ ছিল ৫ মার্চ পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দাবি করেন, বিএনপিকে জঙ্গি দল ঘোষণা করে ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি যদি আপনার দলকে জঙ্গি দল হিসেবে প্রমাণ করেন, তাহলে আপনার দলকে জঙ্গি দল হিসেবে ঘোষণা করে ব্যবস্থা নেওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। সময় হলেই সেটা দেখা যাবে। জনগণ এখন এই সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিদের ব্যাপারে সচেতন হয়েছে। জনগণ যেভাবে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারী সন্ত্রাসীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোর্পদ করছে, এভাবে চলতে থাকলে আপনার সামনে খুব খারাপ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।’
মন্তব্য চালু নেই