আন্দোলন চাঙা করতে নতুন কৌশল!

টানা দুই মাস আন্দোলন টেনে নিয়ে যাওয়ার পর যখন দেশব্যাপী এর প্রভাব কমতে শুরু করেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে তাদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

সশরীরে তাদের কাছে না যেতে পারলেও দীর্ঘ আন্দোলনের সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত নেতা-কর্মী ও তাদের পরিবার-পরিজনের পাশে দাঁড়াতে দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা, বিশেষ করে যারা প্রাক্তন সাংসদ তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এই নির্দেশনার কোনো ব্যত্যয় ঘটলে ভবিষ্যতে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দলের বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের চলমান আন্দোলনের দীর্ঘসূত্রতার কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর যে ব্যাপকতা ছিল, তা কমতে শুরু করেছে। তাই চলমান আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের সঙ্গে নতুন নতুন কর্মসূচি যোগ করার চিন্তা ভাবনা করছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে হরতাল-অবরোধের সঙ্গে গত সপ্তাহে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে রোববার গণমিছিল করার ঘোষনা দিয়েছে দলের মুখপাত্র সালাউদ্দিন আহমেদ। মূলত এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের মাঠে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন স্পটে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও রাজপথে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, আগামী সপ্তাহ থেকে রাজধানীতে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি জোরদারের লক্ষ্যে নতুন কৌশল নির্ধারণ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিশেষ করে খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলেই ঢাকার রাজপথে নামবে তারা। কেন্দ্রীয় এসব নেতাদের উপস্থিতিতে হরতালের পক্ষে রাজধানীর নির্ধারিত কিছু স্পটে মিছিল করার চিন্তা-ভাবনাও চলছে। ঢাকা মহানগর বিএনপির ৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ থানা-ওয়ার্ডের নেতাদের মাঠে থাকার জন্য বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনাও রয়েছে। এছাড়া থানা পর্যায়ে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ সংগঠনগুলো পৃথক স্পট নির্ধারণ করে মিছিল-সমাবেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

দলের গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের চলমান আন্দোলনে বেশ সংখ্যক নেতা-কর্মী গুম, হত্যা, নির্যাতন, গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের পরিবার। অনেকে কারাগারে থেকে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন না। আর্থিকভাবেও অসহায় হয়ে পড়েছেন অনেকে। এই অবস্থায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ এসব নেতাকর্মীদের পাশে থাকতে। একই সঙ্গে সারাদেশে দলের যেসব আইনজীবী আছেন তাদের আইনি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি প্রধান। একই সঙ্গে ক্ষতগ্রস্থ নেতাকর্মীদের পরিবার কি অবস্থায় আছে সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া।

সূত্র বলছে, ক্ষতিগ্রস্থ নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশের কোনো ব্যতয় ঘটলে ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে বা বিএনপির কোনো নেতাকর্মী ও তাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে তা তাৎক্ষনিকভাবে দলীয় নেতৃবৃন্দ, দফতরের নেতৃবৃন্দ, আইনজীবি ফোরামের নেতৃবৃন্দ এবং বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের যারা অবস্থান করছেন, তাদেরকে অবহিত করার জন্য নির্দেশনা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তুনমূল থেকে ব্যাপকভাবে গুলশান কার্যালয়ে ফোন আসছে। এগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। আর কার্যালয়ে অবস্থান করা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমান রহমান, উপদেষ্টা এম এ কাইয়ুম ক্ষতিগ্রস্থ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের নির্দেশ দিচ্ছেন। কখনো কখনো বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই ক্ষতিগ্রস্থদের সঙ্গে কথা বলছেন।

জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে যেসব নেতা-কর্মী গ্রেফতার ও কারাবরণ করছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় দলীয় আইনজীবীদের এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

‘অজ্ঞাত আসামীর’ নামে মামলা দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে, অভিযোগ করে খন্দকার মাহবুব জানান, ‘আন্দোলনের এই দুই মাসে প্রায় ২০ হাজারের মতো নেতাকর্মীকে আসামী, ১০ হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামী দিয়ে পুলিশ হয়রানি করলে আমাদের কিছু করার থাকেনা।’ তবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান বিএনপির এই নেতা।



মন্তব্য চালু নেই