বিএনপি-জামায়াতে আতঙ্ক
আন্দোলনের আগেই ‘দমন’ নির্দেশনা!

বরিশাল বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম আকার ধারন করেছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। যে কোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার হতে পারেন- এমন আশঙ্কায় অনেকেই নিরাপদে থাকছেন।
আগামী ৫ জানুয়ারি সরকারের বর্ষপূর্তিতে বিএনপির সম্ভব্য আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বরিশালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়ায় এ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় জেলা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বরিশাল বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতাই চলে গেছেন আত্মগোপনে।
তবে সরকারের এমন নির্দেশনা বরিশাল পুলিশ বিভাগে আসার খবরে গোপনে সভা করে কর্মীদের সতর্ক থাকায় নির্দেশ দিয়েছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
ঢাকার একটি সূত্র জানায়, আগামী ৫ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তিতে ২০ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া সরকারপতনের এক দফা আন্দোলনে নামার জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই দিনে বরিশালে আন্দোলনের নামে ব্যাপক নাশকতা চালাতে পারে বিএনপি-জামায়াত।
এমন ধারণা অনুমানে এনে আন্দোলন মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও প্রস্তুত থাকতে বলেছে প্রশাসনের উচ্চ মহল। পাশাপাশি ঢাকা থেকে বরিশালের ২২৪ জন বিশেষ ব্যক্তিকে নজরদারিতে রাখার জন্য একটি তালিকাও চূড়ন্ত করা হয়েছে। ওই তালিকায় অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, পেশাদার অপরাধী ছাড়াও রয়েছে সরকারবিরোধী জোট বিএনপি-জামায়াতের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নাম।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, তালিকাটি ইতোমধ্যে বরিশাল পুলিশ কর্তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে।
বরিশাল পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রমতে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে খবর রয়েছে ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে বড় ধরনের নাশকতার ঘটতে পারে। যে কারণে নাশকতা প্রশ্নে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জিরো টলারেন্সে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে জেলার পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঢাকা থেকে প্রেরিত তালিকা অনুসারে এ মাসের শেষ সপ্তায় গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরিশাল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছে না বরিশাল পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তবে তাদের নানামুখী পদক্ষেপে বিএনপি নেতাকর্মীদের আশঙ্কার আভাষ পাওয়া গেছে।
দলীয় সূত্রমতে, বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার নেতাকর্মীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন। ওই রাতে তার বাসায় উপস্থিত বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী অনেক নেতাকর্মীই এখন সেভসাইডে থাকছেন।
সতর্ক অবস্থায় থাকা নেতাকর্মীদের ধারণা, আগামী ৫ জানুয়ারির আন্দোলন দমিয়ে রাখতে যে কোনো সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গণগ্রেপ্তার চালাতে পারে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে থাকা নেতাকর্মীরাই তাদের মূল টার্গেট।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল দক্ষিণ বিএনপির কর্ণধার মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘খবরটি মিথ্যে নয়। কিন্তু ৫ জানুয়ারির আন্দোলনে নামতে নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। এখন শুধু কেন্দ্র থেকে চূড়ন্ত নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।’
বরিশাল জেলা বিএনপির অপর একটি সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির আন্দোলন কর্মসূচি জোরদার করার লক্ষে বেশ কয়েকটি উপজেলায় সভা করেছেন নেতারা। ওইসব সভায় বিএনপি-জামায়াতের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। দলীয় নেত্রী ঘোষিত আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে জেলা পর্যায়ের নেতারা তাদের নানা কৌশলে রাজপথে দখল নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সৈবাল কান্তি চৌধুরী বলেন, সম্ভব্য আন্দোলন অর্থাৎ নাশকতার বিষয়টি মাথায় রেখে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অপরাধীদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ওসিদের বলা হয়েছে।
ঢাকা থেকে পাঠানো বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের তালিকা সম্পর্কে প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য না করে এড়িয়ে যান।
মন্তব্য চালু নেই