আন্তর্জাতিক চাপ পাত্তা দিচ্ছে না সরকার
জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর যখন সময়ের ব্যাপার তখনই আবদার তুললো জাতিসংঘ-স্থগিত করতে হবে দণ্ড। মানবতাবিরোধী অপরাধীর পক্ষে একই সুরে দাবি তুললো ইউরোপীয় ইউনিয়নও। এই দুই সংস্থার অবস্থান নিয়ে সরাসরি কিছু জানায়নি সরকার। তবে সরকার দল আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, নানামুখি চাপ অগ্রহ্য করেই মুক্তিযুদ্ধের চার দশক পর শুরু হয়েছে এই বিচার। আর কারও চাপের মুখে থেমে যাবে না তা।
একাত্তরে শেরপুরের সোহাগপুরে গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ। চূড়ান্ত রায় পর্যালোচনা করতে জামায়াত নেতার আবেদনও খারিজ করে দেয়ার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চলছে দণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি।
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)বিবৃতিতে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখার আহ্বান জানায়।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক এই সংস্থাগুলো মানবাধিকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বললেও বরাবর অপরাধীদের পক্ষ নেয়। আরেক মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লার রায় কার্যকরের আগেও একই অবস্থান নিয়েছিলো তারা। কিন্তু সরকার সেসব পাত্তা না দিয়েই কার্যকর করে দণ্ড।
কাদের মোল্লার রায় কার্যকর করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এই ফাঁসি কার্যকর না করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমমন্ত্রী জন কেরিও ফোন করেছিলেন তাকে। চাপ দিয়েছিলো জাতিসংঘও, কিন্তু সে চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি তিনি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘কারো দয়ায় নয়, আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি। স্বাধীন দেশের আদালতের রায় দেশের বাইরের কারও কথায় বন্ধ হয়ে যাবে না। অতীতেও এধরণের অনেক চাপ এসেছিল। কিন্তু সরকার কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না’।
এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘যেসব দেশের সংগঠনগুলো আমাদের দেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে তাদের দেশে আমাদের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। তাদের উচিত সেসব নিয়ে কথা বলা’।
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সরকারকে আন্তর্জাতিক সংস্থাকে স্পষ্ট করে বলতে হবে, জামায়াত অপরাধ করছে। সেই অপরাধের বিচার করছি আমরা। এই রায়ের ব্যাপারে কথা বলা মানেই আমাদের বিচার ব্যবস্থার উপর অনাস্থা প্রকাশ করা’।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে কি কেবল দুই জামায়াত নেতার ফাঁসির আদেশ হয়েছে? সারাবছরেই বিভিন্ন মামলায় আদালত মৃত্যুদণ্ড দেয়। কার্যকরও হয় সেসব রায়। এসব নিয়ে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা অন্য কোনো সংস্থা কোনো কথা বলে না। কেবল জামায়াতের কারও দণ্ড কার্যকর করলেই সোচ্চার হয়ে উঠে তারা’।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘তারা জামায়াতের টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। জামায়াত টাকা দিয়ে আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করছে সে কারণেই তারা কথা বলছে। পাকিস্তানের ১৮০ জনের ফাঁসি কার্যকর হলেও কেউ তো এ নিয়ে কিছু বলেনি’।
মন্তব্য চালু নেই