আনন্দ অশ্রুতে ভিজলেন পরীমনি!

‘আনন্দের কান্নার জলে ভেজালাম নিজেকে। আনন্দে মানুষ নাকি হাসে না, কখনো কখনো কাঁদেও- কাল সেটা বুঝলাম।’ বলছিলেন পরীমনি। নিজের প্রথম সিনেমা দেখতে সোমবার তিনি গিয়েছিলেন মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হলে। হল ভর্তি উপচে পড়া দর্শক। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে পরীমনি যখন ঢুকলেন সিনেমা হলে সিনেমা তখন শুরু হয়ে গেছে।

চোখ দিয়ে কাকে যেন খুঁজছিলেন পরী। মোবাইল স্ক্রিনে পরীমনির নাম্বার ভেসে উঠলো। ফোন চোখের সামনে নেড়ে বোঝালাম, পাশেই আছি। হ্যাণ্ডশেক করলেন পরী। একটু হাসি বিনিময়। তারপর চোখ চলে গেলো সিনেমার পরীর দিকে। পুরো সিনেমা জুড়েই পরী ম্লান করে দিলেন পর্দায় অন্যদের উপস্থিতি। একাই টেনে নিলেন দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধের মতো। সিনেমার নানা ত্রুটি, অসংলগ্নতা স্বত্ত্বেয় পরীমনিকে যেভাবে তুলে আনলেন নির্মাতা শাহ আলম মণ্ডল সে জন্য দর্শকদের ধন্যবাদ তিনি পেতেই পারেন। বাংলা চলচ্চিত্রে যখন নায়িকা সংকট চরমে তখন এমন ফুটফুটে একজন নায়িকাকে পর্দায় পরিচিত করানো কি কম কৃতিত্বের কথা? পরী মনি প্রসঙ্গেই বলি, কেননা পরীমনিকেই দেখতে যাওয়া..

পরী মনি একদিন বলেছিলেন, প্রথম সিনেমায় তার অভিনয়ে অভিজ্ঞতার কথা। লজ্জায় ভয়ে আড়াই ঘন্টা বাথরুমে গিয়ে লুকিয়ে ছিলো যে মেয়ে, ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেই যার এত ভয়, সে যে এত চমৎকার অভিনয় করবে এটা কি তিনি নিজেই জানতেন? পুরো সিনেমায় তাতো বুঝতেই দিলেন না তিনি। রূপের আগুনে পুড়ে ছাঁই করে দর্শককে তিনি হয়তো সকলকেই প্রেমিক করে ছাড়লেন। অভিনয়ে, এক্সপ্রেশানে, শরীরি ভাষায়, চোখের কাজে কোথায় পরীর ঘাটতি খুঁজতে চাইলাম খুব। পেলাম না।

রোমান্টিক নায়িকার খোলশ থেকে বেরিয়ে যখন তিনি ভিলেনের সঙ্গে আইটেম গানে নাচলেন, তখন সে অন্য এক পরীমনি। নিজেকেই বদলে আইটেম গার্ল এর মেজাজ ধারণ করা, নান্দনিক শরীরি উপস্থাপনে দর্শককে মাতাল করে ছাড়লেন তিনি। পাশে বসা সহঅভিনেতার ফোন আসছিলো বারবার। নিজের ভেতর ডুব দিয়ে পরী তখন শুধু নিজেকে দেখছেন আর কাঁদছেন। ফোন কেড়ে নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিলেন। তারপর আবার নিজের ভেতর ডুব। বিরতিতে কথা বলতে চাইলেন। অশ্রুমাখা পরীর চোখে তখন অনেক কথা। কিন্তু ভক্ত আর সহকর্মীদের চাপে তা আর হল কই?

নানা জটিলতার ভেতর দিয়ে কাহিনীর সফল সমাপ্তি টানলেন শাহ আলম মণ্ডল। বাণিজ্যিক ঘরানার গতানুগতিক বাংলা ছবি যেমন তার মতোই একটা সিনেমা উপহার দিলেন। এর বেশি কিছু নয়। বেশি কিছু যা তা হলো পরীমনি। সিনেমা শেষে হল ভর্তি দর্শকের হাত তালি হয়তো সে কথাই বলছিলো। আর সহ অভিনেতারা চিৎকার করে শ্লোগান তুলছিলো পরীমনি জিন্দাবাদ।

দর্শক বেরিয়ে গেলে নির্মাতা শাহ আলম মণ্ডলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন পরী। এ আনন্দের অশ্রুর কথাই বলছিলেন তিনি। সবার মাঝখান থেকে পরী টেনে নিয়ে গেলেন আলাদা করে। কি যেন বলতে চাইলেন। শোনা হলো না। শুধু সেলফি তোলা হল।

সিনেমা হল থেকে নামতে নামতে শাহ আলম মণ্ডল পরীকে অনেক পরামর্শ দিচ্ছিলেন। মন দিয়ে শুনছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের নবাগতা নায়িকা পরী।

সিনেমা মুক্তি পাবার আগেই ১৩টি ছবির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ছবিগুলো মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছে। ১৭টি ছবির কাজ চলছে। আরো নতুন নতুন ছবিতে যুক্ত হচ্ছেন তিনি। পরীমনিকে ঠেকায় কে? পরীমনি নিজেই বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। বাংলা সিনেমায় নিজের অবস্থানকে আমি সর্বোচ্চ অবস্থানে নিতে চাই। এটাই আমার চ্যালেঞ্জ। প্রথম দিনের মুখোমুখি হওয়া দর্শকদের কেউ আমাকে বলছে শাবানার মেয়ে, কেউ বলছে পূর্নিমার ছোট বোন নাকি? আমি নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছি এ জন্যই শুকরিয়া।’

পরী চলে গেলেন তার খয়েরি গাড়িতে করে। ফেরার সময় হাটতে হাটতে ব্যাক্তিগত উপলব্ধির জায়গা থেকে মনে হলো বাংলা চলচ্চিত্র হয়তো একজন বড় নায়িকা পেতে যাচ্ছে। পরী পারবে তো? তখন হঠাৎ পরী মনির ফোন। ধরতে গিয়ে ধরা হলো না।

তার না বলা কি যেন কথা… শোনাই হল না.. নায়িকার সব কথা শুনতে নেই!



মন্তব্য চালু নেই