আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে! এসো হে বৈশাখ, এসো এসো
শুভ বাংলা নববর্ষ-১৪২১।
“এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/ তাপস নিঃশ্বাস বায়ে/ মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক.. ” কবিগুরুর এই শুভ প্রত্যয়কে ঘিরেই বাঙালি জাতি ঘরে ঘরে নববর্ষকে বরণ করে নিতে উন্মুখ। ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ চিরায়ত বাঙালির জীবনে নতুন সম্ভাবনা বয়ে আনবে নতুন বছর এমনটিই প্রত্যাশা সবার।
নতুন বছরে বিশ্বের সব প্রান্তের বাঙালিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশ-জাতির সুখ সমৃদ্ধি কামনা করে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।
রাজনৈতিক ডামাডোল, সহিংসতা, অশুভ সাম্প্রদায়িতক তৎপরতা মোকাবিলা করে নতুন বছরে নতুন উদ্যমে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে বছরের শুরুটা ভিন্ন মাত্রাও পেয়েছে।
বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়েই শুরু হবে নতুন বছরের আনুষ্ঠানিকতা। একইভাবে রাজধানী জুড়ে বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিতার কমতি নেই কোথাও। রমনার বটমূল ঘিরে এদিন শাহবাগ, টিএসসিসহ পুরো ঢাকা বিশ্ববিদালয় এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা, মৎস ভবন, শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশে নতুন বছর বরণে হাজারও মানুষের ঢল নামবে।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, সাল গণনার সীমা ছাড়িয়ে ষাটের দশকে এই উৎসব মিলিত হয়েছে আমাদের জাতিসত্তা আবিষ্কারের অন্যতম সূত্রবিন্দুতে। অতীতের সব গ্লানি ও বিভেদ ভুলে বাংলা নববর্ষ জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমাদের ঐক্য আরও সুদৃঢ় করবে এবং বয়ে আনবে অফুরন্ত আনন্দের বারতা-এটাই সকলের প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক শক্তির কোনো অপচেষ্টাই সফল হয়নি। বাঙালি জাতি নববর্ষকে ধারণ করেছে তার জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হিসেবে। আমি আশা করি, পহেলা বৈশাখে বাঙালি সংস্কৃতির এ চর্চা আমাদের জাতিসত্তাকে আরও বিকশিত করবে। আমাদেরকে আরও ঐক্যবদ্ধ করবে। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা ও দেশবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার শক্তি যোগাবে।
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বাঙালিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, নববর্ষে পরস্পরের শুভকামনা করে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাইকে এ বছরটিকে সাফল্যের বছর হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। সঙ্কট নয়, সমঝোতা ও উন্নয়নই হোক নতুন বছরের পথ চলা।”
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শুভেচ্ছা বাণীতে তিনি দেশবাসীর সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
নতুন বছরে ‘বিপন্ন দেশ ও জাতিকে রক্ষা’ করতে চান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি।
তিনি বলেন, বিগত ১৪২০ সালের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে মুছে ফেলে আমরা আগামী বছরের সময়টুকুকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই বিপন্ন দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার মধ্য দিয়ে। নতুন বছরে জীবনের পুঞ্জীভূত সমস্যার সমাধানে অগ্রগতি হবে।
এ দিনটিতে সরকারি ছুটি রয়েছে। বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ হবে।
বাংলা নববর্ষের দ্বিতীয় দিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সুধীবৃন্দ, নেতৃস্থানীয় লেখক, কবি, সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে বিভাগীয় শহর এবং ৫৭টি জেলা সদরে (বিভাগীয় সদর ব্যতিত) ও সকল উপজেলায় (সদর উপজেলা ব্যতিত) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ সম্ভাব্য ক্ষেত্রে আলোচনা সভা ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটসমূহ ও বিসিক নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে।
নববর্ষ উপলক্ষে দেশেল সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ও কারাবন্দীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও রয়েছে। সব জাদুঘর ও প্রত্মস্থান সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। শিশু-কিশোর, প্রতিবন্ধী ও ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা টিকেটেই এ সুযোগ দেওয়া হবে।
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্ব-স্ব ব্যবস্থাপনায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করা হচ্ছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করছে। সব পাঁচ তারকা হোটেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।
সব সরকারি, বেসরকারি টিভি ও বেতার বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং স্ব-উদ্যোগে বাংলা নববর্ষের উপর বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি চ্যানেলসমূহ রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে।
বাংলা নববর্ষ ১৪২১ উদ্যাপনকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
মন্তব্য চালু নেই