আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন না খালেদা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার দিনে জন্মদিন পালন করায় তা বন্ধের মামলায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও চিন্তিত নন খালেদা জিয়া। এছাড়াও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাওয়ার ব্যাপারেও কোন সিদ্ধান্ত নেননি। এই মামলার আইনী বিভিন্ন দিক বিবেচনা করতে ও পরবর্তীতে কি হতে পারে এই জন্য তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলবেন। এছাড়াও তিনি দেখতে চাইছেন, এই মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কত দিনের মধ্যে থানায় পৌঁছায় ও সরকার কি ব্যবস্থা নেয় সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন খালেদা জিয়া।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, তিনি আপাতত ওই মামলায় কোন ধরনের আইনী পদক্ষেপ নিতে চাইছেন না। কারণ তার সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তিনি ১৫ আগষ্ট তার জন্মদিন পরিবর্তন করবেন না। আবার জন্মদিন পালন করবেন না এমনটাও ভাবছেন না। তিনি স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করে যেতে চান এবং নথিপত্র অনুযায়ী তিনি ১৫ আগষ্ট জন্মদিন লিখতে চান। এর আগে এই ব্যাপারে তিনি তার আইনজীবীদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে মামলা হওয়ার পর আলোচনা করেছেন। আইনজীবীরা আপাতত এই ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিবেন না বলে তাকে জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তারা বিষয়টি কি অবস্থায় গড়ায় সেটাও দেখতে চাইছেন। তিনি কোন ব্যবস্থা নিতে হলে এই ব্যাপারে আইনজীবীরা তাকে যে পরামর্শ দিবেন সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিবেন।

এর আগে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম ৩০ অগাস্ট এই বিষয়ে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নেন ও বেগম খালেদা জিয়াকে ১৭ অক্টোবর আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। জন্মদিন পালন বন্ধের আর্জি জানিয়ে করা মামলায় আদালতের সমনে হাজির না হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, তাকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলো। কিন্তু তিনি আদেশের প্রেক্ষিতে হাজির হননি। তিনি যখন তার আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেন তারা তাকে জানান যে এই সময়ে এই মামলায় আমরা কোন হাজিরা দেব না। কারণ এটাতে হাজিরা দেওয়া মানে হচেছ তা আমলে নেওয়া। রাষ্ট্রপক্ষ যদি আমাদের না যাওয়ার প্রেক্ষিতে ও অনুপস্থিতিতে বিচার সম্পন্ন করতে চায় তা করতে পারে। কারণ এই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সুযোগ নেই এমনটাও বলা হয়েছিলো। তাই খালেদা জিয়া তাদেরকে অপেক্ষা করতে বলেন, সেই সঙ্গে পরিস্থিতিও দেখার জন্য বলেন। আইনজীবীরা খালেদা জিয়াকে বিষয়টি নিয়ে কোন ধরণের চিন্তিত না হওয়ার জন্য বলেন। এখনও খালেদা জিয়াকে তারা একই বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার জন্মদিন কবে এটা তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা জানেন। সেই অনুযায়ী তিনি লিখেন। একই ধরণের নথিতে জন্মদিন ভুল হয়ে থাকলে এটা যারা কাজ করেছেন তাদের ভুল হতে পারে। কিন্তু তিনি ইচ্ছাকৃত কোন ভুল করেননি। তার জন্মদিন নিয়ে ও এই জন্মদিন পালন করা নিয়ে যে রাজনীতি সরকার শুরু করেছে এটা ঠিক না। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতেতো আরো অনেক মানুষের জন্ম হয়েছে তাহলে তারাও কি জন্মদিন পালন করা বন্ধ করে দিবেন, না জন্মদিন পরিবর্তন করবেন?

বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা বলেন, ম্যাডামের সিদ্ধান্ত তিনি তার জন্মদিনেই জন্মদিন পালন করবেন এবং প্রয়োজনীয় সব জায়গায় ও নথিতে তাই লিখবেন। যতক্ষণ না আদালত থেকে কোন নির্দেশনা আসছে এই ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। এরপর আদালত যদি আদেশ দিয়েও দেয় তাহলে সরকার সেই আদেশ কার্যকরে কিভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিবে সেটা দেখতে হবে। কারণ কারো ব্যক্তিগত জন্মদিন পালনে সমস্যা থাকার কথা নেই। কারণ জন্মদিনতো আর আদালতে পরিবর্তন হবে না।

বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত মামলায় ঢাকার মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এতে বিএনপির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এর আগে আদালতের কার্যক্রমের দিনে খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত না হওয়ার কারণে বাদী তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং এর উপর শুনানি করে বিচারক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।

বাদীর আইনজীবী দুলাল মিত্র বলেছেন, আসামিকে গ্রেপ্তার করা গেল কি না তা প্রতিবেদন আকারে ২ মার্চ আদালতকে জানাতে হবে। এই জন্য বিচারক পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এখন থানা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।

এদিকে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনকে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে হেয় করতেই খালেদা জিয়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে ১৫ অগাস্ট জন্মদিন পালন করেন। তার একাধিক জন্মদিনের কথা বাদীর আইনজীবীও উল্লেখ করেছেন আদালতে। এই ব্যাপারে তারা নথিপত্রও দিয়েছেন। নথিপত্রের মধ্যে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের কপি, কাবিননামা, এসএসসি পরীক্ষার মার্কশিট, দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত জীবনবৃৃত্তান্ত সংক্রান্ত কাটিং জমা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ তাকে বিভিন্ন সময়ে ১৫ অগাস্ট শোকের দিন কেক না কাটার আহ্বান জানান।

এদিকে তার বিরুদ্ধে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে রাজনৈতিক বলে মনে করছেন খালেদা জিয়া। এই ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তির নির্দেশেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এ ধরনের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় না, কখনো না।



মন্তব্য চালু নেই