আত্মহত্যাই করেছেন দিশা, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট

অভিনেত্রী দিশা গাঙ্গুলির দেহ উদ্ধারের পরে প্রাথমিকভাবে কোনো রহস্যের গন্ধ পায়নি পুলিশ। শুক্রবার তারা জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে দিশার মৃত্যুকে আত্মহত্যাই বলেছেন চিকিৎসকেরা। দেহ উদ্ধারের সময়ে দিশার মা-বাবা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। খবর পেয়ে এ দিনই তারা ফিরেছেন। তবে রাত পর্যন্ত মেয়ের মৃত্যু নিয়ে কোনো অভিযোগ জানাননি তারা।

বৃহস্পতিবার বেহালা পর্ণশ্রীর ফ্ল্যাট থেকে দিশার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। কোনো সুইসাইড নোট মেলেনি। তবে ওই দিন বিকেলেই একটি ঘটনা নাড়া দেয় তদন্তকারীদের। দিশার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাওড়ায় রেললাইনের পাশ থেকে এক তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ মারফত তাকে পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল। দিশা এবং ওই তরুণীর মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল বলে পুলিশ জানতে পারে।
দিশার মা-বাবা পুলিশকে জানান, সম্প্রতি দিশার সঙ্গে তার পুরুষ বন্ধুর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সেই যুবকের সঙ্গে দিশার ওই বান্ধবীরও ভালো সম্পর্ক ছিল।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, ব্যক্তিগত জীবনে টানাপড়েনের জেরেই দিশা আত্মহত্যা করেছেন। আর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মৃত্যুর খবর পেয়ে দিশাহারা হয়েই রেললাইনের পাশে বিপজ্জনক ভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন ওই তরুণী।

এ দিন ওই তরুণীর পরিবার সূত্রেও একই ইঙ্গিত মিলেছে। তার মা জানান, বৃহস্পতিবার খেতে বসে দিশার মৃত্যুসংবাদ পান ওই তরুণী। তারপরেই খাওয়া ফেলে বেরিয়ে যান।

তার পরিবার জানিয়েছে, মাস ছয়েক আগে একটি টেলি সিরিয়ালে অভিনয়ের সূত্রে দু’জনের পরিচয় হয়েছিল। অল্প কয়েকদিনেই ঘনিষ্ঠতা হয় তাদের। অনেক সময়ে শ্যুটিংয়ে দেরি হলে রাতে দিশার ফ্ল্যাটেই থেকে যেতেন ওই তরুণী।
পুরুষ বন্ধুর সঙ্গেও দিশার কোনো সমস্যার কথা জানা যায়নি বলে পুলিশের দাবি।

তদন্তকারীরা জানান, বুধবার ওই বন্ধুর সঙ্গেই দিশা আইপিএলের খেলা দেখতে যান। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও সারেন। রাত ১টা পর্যন্ত দু’জনের কথাও হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দিশাকে ফোনে না পেয়ে ওই যুবকই পর্ণশ্রীতে আসেন। তিনিই ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে দিশার দেহ দেখেন।
পুলিশ জানায়, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী বুধবার শেষ রাতে মৃত্যু হয়েছে দিশার। এ দিন ফরেন্সিক দল দিশার ফ্ল্যাটে গিয়েছিল।
পুলিশ বলছে, শুধু পুরুষবন্ধুর সঙ্গে কথা বলেই ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে নিশ্চিত তথ্য মিলবে না। দিশার ওই বান্ধবী এবং বিনোদন জগতের পরিচিতদের সঙ্গেও কথা বলা হবে।

ওই তরুণীর পরিবার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তিনি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পেলেই পুলিশ তার সঙ্গে কথা বলবে।

পুলিশ জানিয়েছে, দিশার ঘর থেকে সুইসাইড নোট মেলেনি। কিন্তু মৃত্যুর বিষয়ে সূত্র পেতে তার মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।
পাসওয়ার্ড লক থাকায় সেটি সঙ্গে সঙ্গে খোলা যায়নি। শুক্রবার এক মোবাইল বিশেষজ্ঞকে দিয়ে ফোনটি খোলানো হয়। তারপরেই পুলিশ জানিয়েছে, দিশা বুধবার ফোন ব্যাঙ্কিং মারফত ৫০ হাজার টাকা লেনদেন করেছিলেন।

পুলিশ জানায়, দিশা ও তার মায়ের যৌথ অ্যাকাউন্ট থেকেই ওই টাকা পাঠানো হয়েছে। তবে সেই অ্যাকাউন্টটির মালিক সংক্রান্ত তথ্য শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশ জানতে পারেনি। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই অ্যাকাউন্টটি এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের। সেই ব্যাঙ্কের কাছে ওই অ্যাকাউন্ট নিয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।’’

দিশার অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, এক পুরুষবন্ধুর সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। বিয়ে নিয়ে দুই বাড়ির অভিভাবকদের মধ্যে কথাও হয়। তারপরেই ৫ এপ্রিল দিশার মা দক্ষিণ আফ্রিকা যান। সেখানে দিশার বাবা থাকতেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত কয়েক দিনে দিশার কথাবার্তায় অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেননি তার মা-বাবা। দিশার মা পুলিশকে জানিয়েছেন, বুধবার মেয়ের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। দিশা নিজেই মাসখানেক পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার কথা বলেছিলেন।

সেই দিশাই যে আত্মহত্যা করবেন, তা ভাবতে পারছেন না গাঙ্গুলি দম্পতি। মর্গে মেয়ের দেহ দেখে তুমুল কান্নাকাটি শুরু করেন তারা। কাল দিশার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা



মন্তব্য চালু নেই