আতিয়া মহলে কি শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুসা আছে?

সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমায় শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে শীর্ষ জঙ্গি নেতা মাঈনুল ইসলাম মুসা আছে বলে ধারণা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আস্তানায় বড়মাপের কোনও জঙ্গি নেতা থাকতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

রবিবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘মনে হচ্ছে, আতিয়া মহলে বড় কোনও জঙ্গি নেতা থাকতে পারে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভাষ্য, বাড়িটির নিচতলা নব্য জেএমবির কেন্দ্রীয় আস্তানা হিসেবে ব্যবহার হয়ে এসেছে। মূলত এজন্যই অনেক বেশি বিস্ফোরক মজুদ আছে এখানে। ফলে জঙ্গিরা বাড়ির ভেতর থেকে বিস্ফোরক ছুড়তে পারছে। আর বাড়ির ভেতরে-বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখতে পেরেছে প্রচুর বিস্ফোরক।

‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ অভিযানের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেছেন, ‘জঙ্গিরা আস্তানার আশেপাশে অনেক আইইডি (ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে ১০-১২টি আইইডির বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা।’

সিটিটিসি সূত্র জানায়, সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহলের নিচতলায় নব্য জেএমবির আস্তানা। প্রযুক্তির সহায়তায় এর সন্ধান পায় সিটিটিসি ইউনিটের একটি দল। তাদের কর্মকর্তারা বলছেন, নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মাইনুল ইসলাম মুসা, বোমা তৈরিতে দক্ষ হাদীসুর রহমান সাগর, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, আব্দুস সামাদ ওরফে আরিফ ওরফে মামুসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গি নেতা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা আত্মগোপনে থেকে নব্য জেএমবিকে পুনরায় সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছিল।

আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানায় শীর্ষ কোনও না কোনও জঙ্গি নেতা আছে বলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোর অভিযানে তারা সর্বোচ্চ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা। তাদের মতে, পাঠানপাড়ায় যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, সেটিও ভেতরে থাকা জঙ্গি নেতার নির্দেশনায় হয়ে থাকতে পারে। একই নির্দেশনায় আত্মঘাতী হামলা চালায় বিমানবন্দর সংলগ্ন গোলচত্বরের পুলিশ বক্সের সামনেও। সূত্র বলছে, শীর্ষ নেতা গ্রেফতার বা অভিযানে নিহত হতে পারে এই আশঙ্কায় মরিয়া হয়ে উঠেছে জঙ্গিরা।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ মার্চ মধ্যরাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানাধীন শিববাড়ি এলাকায় ‘আতিয়া মহল’ নামে পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে জানতে পারে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। রাতেই বাড়িটি ঘেরাও করে অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু ২৪ মার্চ সকাল ৮টার দিকে আতিয়া মহলের ভেতর থেকে বাইরের দিকে গ্রেনেড ছোড়া হয়। এ কারণে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াতকে পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সন্ধ্যা থেকে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো দল। পরদিন তারা ওই ভবনের অন্যান্য বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে আনে।

তবে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের পাশে দুই দফা কাউন্টার অ্যাটাকে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন র্যা বের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানসহ অন্তত ৫০ জন। রবিবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, অভিযানে তাদের হাতে অন্তত দুই জঙ্গি নিহত হয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই