আটকে পড়া গাড়ি ছাড়ে এফবিসিসিআইর সুপারিশ
মংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানি করা বিপুল সংখ্যক গাড়ি ছাড়ের বিষয়ে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনিহার কারণে আমদানিকারকরা গাড়িগুলো ছাড় করতে পারছেন না।
এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
আটকে পড়া গাড়ির মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি যেমন আছে, তেমনি আছে নতুন গাড়িও। এসব গাড়ির বর্তমান বাজারমূল্য আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকা।
এবিষয়ে ৩০ ডিসেম্বর এফবিসিসিআই সভাপতির দপ্তর থেকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গতকয়েক বছর ধরেই এ নিয়ে গাড়ির আমদানিকারক এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে টানপোড়েন চলছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি তার চিঠিতে আমদানি নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে অনুমোদিত বয়সসীমার বেশি বয়সের গাড়ি আমদানি করায় শুল্ক জটিলতা দূর করে বন্দরে পড়ে থাকা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ওপর ৮০ শতাংশ অবচয় সুবিধা দিয়ে গাড়িগুলো খালাসের অনুরোধ জানিয়েছেন। এর আগে বারভিডার নের্তৃবৃন্দ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ৯০ শতাংশ অবচয় সুযোগ চেয়েছিলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি তার চিঠিতে বলেন, খালাসের অপেক্ষায় থাকা গাড়ির বিপরীতে বিপুল পরিমান মুদ্রা পরিশোধ করা হয়েছে, ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের বিপুল পরিমান টাকা ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে এবং আমদানিকারকরা বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে প্রায দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় এ সংকট থেকে উত্তরণে অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ২০১৪ সালের ৩ জুলাই রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশেন (বারভিডা) প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টার সুপারিশসহ একটি চিঠি অর্থমন্ত্রীর কাছে দেয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে একই মাসের ৭ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সৃষ্ট জটিলতা দূর করার জন্য অনুশাসনের একটি আদেশ জারি হয়। এর আওতায় শুল্কায়ন জটিলতার কারণে সৃষ্ট জটিলতা নিস্পত্তি করা সম্ভব হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন বাস্তবায়নের আগেই গত ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আরো একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সভায় ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে শুল্কায়ন জটিলতার একহাজার ৫৬৭টি গাড়ি এবং আমদানি নীতি বহির্ভূত ৫১২টি গাড়িসহ মোট দুই হাজার ৭৯টি গাড়ি মংলা বন্দর থেকে পুলিশ প্রশাসনের তত্বাবধানে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সূত্র জানায়, উক্ত প্রেক্ষাপটে বারভিডা গত ১৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে ৭ অক্টোবরের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আবেদন করে এবং একই সঙ্গে অর্থ ও বানিজ্য মন্ত্রীকে বিষয়গুলো অবহিত করে সংকট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তেক্ষেপ কামনা করে।
গত ১৪ নভেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রীর সভাপতিত্বে মংলা বন্দর সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে শুল্কায়ন জটিলতায় আটকে থাকা গাড়িগুলো খালাসের লক্ষ্যে আলোচনা হয় এবং সংকট উত্তরনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। এছাড়াও গত ৩০ নভেম্বর বারভিডার নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান, সদস্য (শুল্ক) এবং মংলা কাস্টম হাউজের কমিশনারও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ৯০ শতাংশ অবচয় (মূল্যাপকর্ষণ) ধরে গাড়ির শুল্কায়নের সুযোগ চায়। তবে অর্থমন্ত্রী তাদের দাবি অনুযায়ী অবচয় দেওয়ার কথা স্বীকার না করলেও বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো আমদানি পণ্যই বন্দরে পৌঁছার পর ৩০ দিনের মধ্যে খালাস করতে হয়। তা না হলে বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই পণ্য নিলামে তোলে।
জানা যায়, ২ হাজার ৭৯টি গাড়ির মধ্যে ৫১২টি গাড়ি আমদানি নীতি মেনে আমদানি করা হয়নি। এসব গাড়ি ৫ বছরের বেশি পুরোনো হওয়ায় খালাস করতে দেওয়া হয়নি। আর ৮৮৪টি গাড়ি শুল্কায়ন ও মূল্য জটিলতার কারণে খালাস হয়নি। আমদানির সময় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির অবচয় হার ছিল ৩৫ শতাংশ। কিন্তু পরে অবচয় হার নির্ধারণ করা হয় ৪৫ শতাংশ। ফলে কম পুরোনো গাড়ির দাম বাজারে কম হয়ে যায়। তাই বেশি পুরোনো এই ৮৮৪টি গাড়ি আর খালাস হয়নি।
বাকি ৬৮৩টি গাড়ি এই বছরের মার্চের আগে আমদানি করা হয়। এগুলোর বেশির ভাগই নতুনের মতো। কিন্তু বছরের শুরুতে লাগাতার হরতাল-অবরোধের কারণে এসব গাড়ি খালাস করতে পারেননি আমদানিকারকেরা। এ নিয়ে তখন সংবাদ সম্মেলনও করেছিল বারভিডা।
এ বিষয়ে বারভিডার প্রেসিডেন্ট মো.আব্দুল হামিদ শরীফ বলেন, ‘বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। আমদানিকারকরা বিপুল লোকসান গুনছেন। ব্যাংক ঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে প্রতিমাসে। অর্থমন্ত্রী বিদ্যমান সমস্যা দূর করে গাড়িগুলো খালাসের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে ৯০ শতাংশ অবচয় ধরে গাড়ি খালাসের দাবি জানিয়েছিলাম। ৯০ শতাংশ অবচয় মানে মূল শুল্কের উপর এটা কোন প্রভাব ফেলবে না।’
মন্তব্য চালু নেই