আচ্ছা, নাসিরের কি চেহারা খারাপ!

স্কোয়াড থেকেও অনেকদিন যাবৎ একাদশে ছিলেন না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ দুই ওয়ানডেতে খেললেন। পারফরম করলেন। এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রাথমিক দলেই নেই। সরি, নাসির হোসেনের বাদ পড়ার পেছনে কোনো ক্রিকেটীয় কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। আচ্ছা, নাসিরের কি চেহারা খারাপ?

দল যখন দিয়েছে, তাতে আলোচনা যেমন হবে, তেমনি হবে সমালোচনাও। এই স্কোয়াডে যেমন প্রশ্ন উঠেছে বেশ কয়েকটা। আর সেখানে এই নাসির ছাড়াও আরও কয়েকটা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

রুবেল – আল আমিন দলে নেই। যেখানে নিউজিল্যান্ডের মত পেসবান্ধব পরিবেশে ওদের বোলিং আমাদের জন্য বিশেষ সহায়ক হয়ে উঠতে পারতো, সেখানে আমরা তাঁদের উল্টো ২২ সদস্যের দল থেকেও বের করে দিয়ে দলে নিয়ে নিলাম এবাদাতকে। এই নির্বাচনের পিছনে যথার্থ যুক্তি হিসেবে কিছু দাঁড় করানোও শক্ত।

প্রথমেই জিজ্ঞেস করি, এবাদাতকে দলে নেওয়ার পিছনের কারণটা কি? যদি সেটা হয় পারফরম্যান্স, তাতে আমি পরিসংখ্যানের সায় তেমন একটা দেখি না। যদি হয় গতি, সেটা তো রুবেলেরও ছিলো! যদি হয় সুইং, সেটা তো ছিলো আল আমিনেরও! সাথে বোনাস হিসেবে ছিলো অভিজ্ঞতা। যদি আল আমিন বা রুবেলের বিপক্ষ যুক্তি হয় বাজে পারফরম্যান্স, তবে এবাদতের পক্ষেও সেটা খুব একটা দাঁড়ায় না। ‘রবি পেসার হান্ট’ থেকে সদ্যই উঠে আসা এই পেসার এখনই নিউজিল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশনের জন্য কতটা প্রস্তুত, সে প্রশ্ন ওঠা কি স্বাভাবিক নয়?

আমি সম্ভবত এখনো আমার পয়েন্ট ক্লিয়ার করতে পারিনি। আমার

প্রশ্ন, এবাদতের দলে আসার ভিত্তিটা কি, সেদিকে চোখ দেওয়াটা জরুরী নয় কি?

এবার আবারও আসুন নাসিরের হঠাৎ বাদ পড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গতে।

সত্যি বলতে, এইটা আমার কাছে খুব একটা বড় ধাক্কা হয়ে আসেনি। গত বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা সাদা চোখেই দেখতে পাচ্ছিলাম নাসিরকে ক্রমাগত অবজ্ঞা করে যাওয়া। তাঁকে যেন রাখা হচ্ছিলো স্পেশালিস্ট ফিল্ডার হিসেবে! কারণটাও বেশ বোঝা যাচ্ছিলো। কোচ কিংবা বিসিবি বোর্ডপ্রধান কারও গুড বুকেই আপাতত নেই নাসির। শুধু সেটাই নয়, দলে তাঁর অন্তর্ভুক্তি মনে হচ্ছিল যেন স্রেফ পরিস্থিতির চাপ! অবশেষে নাসিরকে ২২ জনের স্কোয়াডে বাইরে রাখাটা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হলো, তাঁরা সেটা সম্ভব করলেন। কিন্তু তিনি আসলেই কতটুকু ডিজার্ভ করতেন বাদ পড়াটা? কিংবা প্রতিনিয়ত অবজ্ঞাটাই বা কতটুকু ডিজার্ভ করতেন তিনি?

দেশের বাইরে অন্তত ৫টি বা এর বেশি টেস্ট খেলেছে এমন ক্রিকেটারদের ভেতর নাসিরের ব্যাটিং এভারেজ তৃতীয় সর্বোচ্চ। বিদেশের মাটিতে ৬টি টেস্ট খেলে নাসিরের এভারেজ ৩৪.৬০!

দেশের বাইরে অন্তত ১০টি বা এর বেশি ওয়ানডে খেলেছে এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে নাসিরের ব্যাটিং এভারেজ সবচেয়ে বেশি, ১৬টি ওয়ানডে খেলে ৪৪.৮০!

এইটা যোগ করে দিতে চেয়েছিলাম। তাড়াহুড়ায় ভুলে গেছি :3

দেশের বাইরে অন্তত ১০টি বা এর বেশি টি-টোয়েন্টি খেলেছে এমন ক্রিকেটারদের ভেতর নাসিরের ব্যাটিং এভারেজ চতুর্থ। ১৩টি টি-টুয়েন্টি খেলে নাসিরের গড় ১৯.৭৭!

দেশের বাইরে মোট ৩৫ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন নাসির। যেখানে এভারেজ ৩৩.৫১। যা বাংলাদেশের হয়ে অন্তত ১০টির বেশি ম্যাচ দেশের বাইরে খেলেছে এমন ক্রিকেটারদের ভেতর সবার সেরা!

মূল প্রশ্ন এখানেই নয় শুধু।

নাসিরই প্রথম এই ঘটনার শিকার নন। একই রকম ঘটনার শিকার এর আগে হয়েছেন শাহরিয়ার নাফীস, নাঈম ইসলাম, লিটন দাসরাও। জাতীয় দলে যথেষ্ট ভালো পারফরম্যান্স করা সত্ত্বেও দল থেকে বাদ পড়ে গেছেন তাঁরা, এরপর এখনো কেউই আর দলে ফিরতে পারেননি। যথেষ্ট সুযোগ পাওয়ার আগেই বাদ পড়েছেন মমিনুল হক, অথচ তিনি হতে পারতেন সব ফরম্যাটে আমাদের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান! অথচ গড়পড়তার চেয়েও নিচু পারফরম্যান্স সত্ত্বেও দলে টিকে আছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদেরকে বারবার সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও তাঁরা নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বারবারই!

কিন্তু যারা বাদ পড়েছেন, তাঁরা কোন মানদন্ডে ফিরবেন দলে? আমাদের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট হয় নামকাওয়াস্তে, কখনো কখনো সেটাও হয় না। আমাদের বিকল্প দল বলে কিছু নেই, না আছে এ দল, না আছে একাডেমি দল। তাঁরা কোথায় প্রমাণ করবেন নিজেদের? আর যারা নতুন সুযোগ পাচ্ছেন, তাঁদেরই বা দলে অন্তর্ভুক্তির মূল ভিত্তিটা কি? অনেকে তো বিনা অভিজ্ঞতাতেই ঢুকে যাচ্ছেন দলে। অনেকে নাটকীয় পারফরম্যান্স করে দলে টিকেও যাচ্ছে। কিন্তু তাতে আমাদের ক্রিকেটের ভিত কি শক্ত হচ্ছে আদৌ? সময় এখন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার। প্রিয় বিসিবি, একটু এদিকে তাকাবেন কি?-খেলাধুলা



মন্তব্য চালু নেই