আখের রসের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
তীব্র গরমের সময়ে আখের রস পান করলে তা শুধু শীতলতাই দান করেনা বরং শক্তিও সঞ্চার করে। তাই আখের রসকে ম্যাজিকেল ড্রিংক ও বলা যায়। আখকে দেশীয় ভাষায় গেন্ডারি ও বলা হয়। ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, পটাসিয়াম, ভিটামিন এ, সি ও বি-কমপ্লেক্স ইত্যাদি পুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকে আখের রস। আখের রসের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য উপকারিতার বিষয়ে জানবো আজ।
১। ব্রণ দূর করে
আখের রস ব্রণের মত ত্বকের সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। এজন্য আখের রসের সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্টটি মুখে ও ঘাড়ে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। তারপর ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুখ ও ঘাড় মুছে পরিষ্কার করুন। সপ্তাহে একদিন এটি ব্যবহার করুন। আখের রসে আলফা হাইড্রক্সি এসিড থাকে যা অনেকটা গ্লাইকলিক এসিডের মতোই কাজ করে। ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেলে ব্রণের সৃষ্টি হয়। আখের রস ত্বককে এক্সফলিয়েট হতে সাহায্য করে এবং মরা চামড়ার জমার পরিমাণ কমায়।
২। ইনস্ট্যান্ট এনার্জি বুস্টার
যদি আপনি ডিহাইড্রেশনে ভুগে থাকেন তাহলে এক গ্লাস আখের রস পান করুন। কারণ আখের রস তাৎক্ষণিক ভাবে এনার্জি প্রদানের সবচেয়ে ভালো উৎস। আখের রসে চিনি বা সুক্রোজ থাকে যা খুব সহজেই শরীরে শোষিত হয়। এই চিনি শরীরের হারিয়ে যাওয়া চিনির মাত্রাকে পুনরায় পূর্ণ করতে কাজে লাগে।
৩। নিরাপদ গর্ভধারণ নিশ্চিত করে
আখের রস গর্ভবতী নারীদের খাদ্যতালিকায় যুক্ত করলে উপকার লাভ করা যায়। এটি গর্ভধারণে সাহায্য ও নিরাপদ গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করে। আখের রসে প্রচুর ফলিক এসিড বা ভিটামিন বি ৯ থাকে যা স্পিনা বিফিডা এর মত জন্মগত ত্রুটি থেকে সুরক্ষা দেয়। এছাড়াও গবেষণায় জানা হয় যে, নারীর ডিম্বস্ফুটনের সমস্যা কমায় এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
৪। নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ ও দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করে
যদি আপনার দাঁত ক্ষয়ের পাশাপাশি নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের সমস্যাও থাকে তাহলে আখের রস পান করাই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো ঘরোয়া প্রতিকার। আখের রসে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মত খনিজ উপাদান থাকে যা দাঁতের এনামেল গঠনে সাহায্য করে। নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ পুষ্টির ঘাটতির কারণেও হতে পারে যা আখের রস পান করার মাধ্যমে পূরণ করা যায়।
৫। হাড় ও দাঁতের উন্নয়নে সাহায্য করে
বাড়ন্ত শিশুরা যদি আখ চিবিয়ে রস পান করে তাহলে দাঁতের সমস্যা কম হয়। আখের রসে ক্যালসিয়াম থাকে যা দাঁত ও হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৬। ফেব্রাইল ডিজঅর্ডার নিরাময়ে
ফেব্রাইল ডিজঅর্ডার এর সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে আখের রস। ফেব্রাইল ডিজঅর্ডার এর সমস্যায় উচ্চমাত্রার জ্বর থাকে। এর ফলে শরীরের প্রোটিন কমে যায়। আখের রস প্রোটিনের ক্ষতি পূরণে সাহায্য করে।
৭। যকৃতের কাজে সহযোগিতা করে
যকৃতের রোগ যেমন- জন্ডিস নিরাময়ে সবচেয়ে ভালো উপাদান হচ্ছে আখের রস। পিত্তরস জমে গেলে লিভারের কার্যকারিতা কমে যায় বলে জন্ডিস হয়। শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রেখে দ্রুত রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে আখের রস। এছাড়াও আখের রস ক্ষারীয় প্রকৃতির হওয়ায় শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করায় সাহায্য করে। জন্ডিসে আক্রান্ত হলে প্রতিদিন দুই বেলা আখের রস পান করুন।
এছাড়াও আখের রস ব্রেস্ট ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, পরিপাকের সমস্যা দূর করে, কিডনির কাজে সহযোগিতা করে, কিডনি পাথর ও মূত্রনালীর সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি যে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ও উপকারী আখের রস। কারণ এতে যে প্রাকৃতিক চিনি থাকে তার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে। তবে অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে পান করতে হবে।
মন্তব্য চালু নেই