আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি হবে : শেখ হাসিনা
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে মঙ্গলবার সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি হবে, অন্যরা আসলে অবনতি হবে।”
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। বিএনপি জোটের বর্জনের মধ্যে ওই নির্বাচন নিয়ে সে সময় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠলেও সরকারের মেয়াদের প্রায় তিন বছর পার করে ইতোমধ্যে পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে শেখ হাসিনার দল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগকে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় রাখতে দলের নেতা-কর্মীদের এখন থেকেই জনগণের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন দলীয় সভানেত্রী হাসিনা।
পানি সম্মেলন উপলক্ষে হাঙ্গেরি সফররত প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বুদাপেস্টের ফোর সিজনস হোটেল গ্রেশাম প্যালেসে প্রবাসীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসেও একই আহ্বান জানান।
ইউরোপের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “মানুষ উন্নতি চায়? না অবনতি? – এই প্রশ্নটা করতে হবে।
“আওয়ামী লীগ আন্তরিকতার সাথে দেশের উন্নয়ন চায়। কারণ আওয়ামী লীগ দেশের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। দেশের উন্নতি করাই আওয়ামী লীগের কর্তব্য। ইনশাল্লাহ, আমরা তা করে যাবো”, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। আওয়ামী লীগ যে ভাবে দেশের উন্নতি করবে, আর কেউ তা পারবে না।”
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফেরর পর থেকে দেশের যে উন্নয়ন করেছে, অন্যরা সরকারে থেকে সেই কাজ করতে পারেনি কেন- এমন প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা।
প্রবাসীদের প্রত্যেককে বাংলাদেশের ‘এক একজন রাষ্ট্রদূত’ হিসাবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে হবে।”
২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সবাইকে সেজন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন তিনি।
ওই নির্বাচন সামনে রেখে সবার সঙ্গে আলোচনা করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবও দিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “কিছু কিছু লোক আছে, তাদের কোনো কিছুতেই ভালো লাগে না। সব কিছুতেই ‘কিন্তু’ খোঁজা, আর আন্দোলন করা।
“আন্দোলন তো বাংলাদেশের মাটিতে করতেই হবে। একেকটা ইস্যু নিয়ে রাস্তাঘাটে মিছিল করুক। আর দেশের উন্নয়নে আমরা কাজ করতে থাকি।”
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও ‘পর্দার আড়ালে থেকে’ কাজ করে যাচ্ছে। আর তিনি আছেন সামনে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ২০১৫ সালের শুরুতে বিএনপির টানা ৯২ দিনের হরতাল-অবরোধের সময় নাশকতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, তারা দেশের মানুষকে কী দেবে?
“যারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলে, তাদের ওপর মানুষের আস্থা থাকবে কেন?”
ওই বছর খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বিএনপি নেত্রীর গুলশান কার্যালয়ে ঢুকতে না পারার কথাও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
“কতটা ছোটলোক হতে পারে। ছেলে মারা গেছে… আমি দেখতে গেছি, মেইন গেইট তালা দিয়ে বন্ধ করে রাখল। সাইড গেইটও বন্ধ করে লাখল। আমাকে ঢুকতে দিল না।… কত বড় অপমান চিন্তা করেন।”
এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়ে তখনকার সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদাকে নিয়ে কিছু স্মৃতিও মনে করেন হাসিনা।
তিনি বলেন, “৩২ নম্বরের বাড়িতে মোড়া পেতে বসে থাকত। তার চোখের পানি মুছে দিল কে?
“আমার বাবা। আমার বাবা মিসেস জিয়ার পরিচয় ফিরিয়ে দিল। তারপর তো স্বামী-স্ত্রী দুজনে মোড়া পেতে বসে থাকত।”
পানি সম্মেলনে যোগ দিতে গত রোববার বুদাপেস্টে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। তিন দিনের সফর শেষে বুধবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই