আইভী ও সাখাওয়াতের সঙ্গে ওরা কারা?
নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলা নিয়েই আলোচনায় আসেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন তিনি। ওই মামলা থেকে চূড়ান্ত অব্যাহতি পাওয়া একজনকে এবারে দেখা যাচ্ছে সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। তার সঙ্গেও দেখা গেছে ওই মামলায় অব্যাহতিপ্রাপ্ত একজন আসামিকে। তার বিরুদ্ধেও আছে নানা অভিযোগ।
এসব ব্যক্তির সঙ্গে আইভী ও সাখাওয়াতের ছবি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত জন অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয় জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এ মামলায় নূর হোসেনসহ ছয় জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলার চার্জশিটে নূর হোসেনসহ র্যাবের চাকরিচ্যুত তিনজন আলোচিত কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে। মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে। তারা হলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া, ইকবাল, হাসমত আলী হাসু, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রাজু ও আনোয়ার। এ ঘটনায় ওই বছরের ১১ মে আদালতে সেলিনা ইসলাম বিউটি চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেন। পরে আদালত নারাজি পিটিশন খারিজ করে দেন। এসব নারাজি পিটিশনের আইনজীবীও ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইনজীবী বলেন, ‘সাত খুনের মামলার চার্জশিটের পর তদন্তকারী সংস্থার অব্যাহতি দেওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট ও পরে হাইকোর্টেও রিট করা হয়। অব্যাহতি পাওয়া আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, এ বিষয়ে বারবার যুক্তি তুলে ধরেন সাখাওয়াত।’
অব্যাহতি পাওয়া ওই পাঁচ জনের মধ্যে ইকবাল হোসেনকে দেখা যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। সাত খুনের মামলায় সেলিনা ইসলাম বিউটি যাদের আসামি করেছিলেন, তার মধ্যে ষষ্ঠ আসামি ইকবাল হোসেন। তিনি বিএনপির রাজনীতি ও ভূমি বেচা-কেনার সঙ্গে জড়িত। তিনি নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবেও পরিচিত। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নজরুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন ইকবাল হোসেন। গত কয়েকদিন ধরেই সাখাওয়াতের সঙ্গে প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে তাকে। সাখাওয়াত যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই যাচ্ছেন ইকবাল। দু’জনকে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা করতেও দেখা গেছে। এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকার বিএনপি সমর্থক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সাত খুনের পর যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছিলাম, সেসব ব্যক্তিকে এখন আমাদের প্রার্থী সাখাওয়াত সাহেবের সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি। এটা কষ্টদায়ক। আমরা এতে ব্যথিত। আমরা মনে করি এ বিষয়ে সাখাওয়াত সাহেবের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’
শহরের গোদনাইল এলাকার বিএনপির কর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই সিদ্ধিরগঞ্জে সাখাওয়াত হোসেন খানের সবগুলো প্রচারণায় ছিলাম। ৮ ডিসেম্বর সাত খুন মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া ইকবালকে তার সঙ্গে দেখেছি। এর পর থেকে আমি আর তার সঙ্গে গণসংযোগে যাই না।’
বিষয়টি নিয়ে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করেছেন সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি বলেন, ‘ইকবাল মামলার এজাহারভুক্ত আসামি না। ৩৫ আসামির মধ্যে ইকবাল নামের কেউ নেই। আর প্রচারণার সময় সব শ্রেণির লোকজন ধানের শীষকে ভালোবেসেই আসে। তখন আমি তো কাউকে ফেরাতে পারি না।’
এদিকে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া আরেক আসামি হাজী ইয়াছিনকে গত কয়েকদিন ধরে দেখে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভীর সঙ্গে। হাজী ইয়াছিন মিয়া এখন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাত খুনের ঘটনার পর তিনি পলাতক ছিলেন। তখন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সভা করে ইয়াছিনকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়। ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর ওই বছরের ১৪ জুলাই দেশে ফিরে আসেন হাজী ইয়াছিন। ৩০ জুলাই ইয়াছিন বাদী হয়ে সেলিনা ইসলাম বিউটিসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলাও করেন। ওই বছরের ৯ আগস্ট তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্বহাল করা হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় আইভীর গণসংযোগে কয়েকদিনই দেখা গেছে হাজী ইয়াছিনকে। ইয়াছিনের বাড়িতেও গেছেন আইভী। এ নিয়েও হয়েছে সমালোচনা।
জালকুড়ি এলাকার প্রবীণ আওয়ামী লীগ কর্মী সাইফউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘সাত খুনের পর দেড় বছর হাজী ইয়াছিন ওই এলাকায় ছিল না। তাকে নাকি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এখন তাকে নিয়ে আইভীর একসঙ্গে পথচলাটা দৃষ্টিকটু।’
হাজী ইয়াছিনের দাবি, তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাত খুন মামলার আসামি করা হয়েছিল। তিনি যে কোনও ভাবেই জড়িত না সেটা চার্জশিটে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি এসব খুন-খারাবির সঙ্গে ছিলাম না।’
সাত খুনের ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘সাত খুনের পরে যেসব আসামি অব্যাহতি পেয়েছে তারা আমাকে ও আমার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিয়েছে। আমি তাদের চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজিও দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা আদালত গ্রহণ করেননি। মামলার রায় হবে ১৬ জানুয়ারি। আমি এখন রায়ের দিকে তাকিয়ে আছি। আর এখন কোন আসামিকে কার সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে আর আলোচনা করতে চাই না।’খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
মন্তব্য চালু নেই