আইভী’র বিজয়কে রাজনৈতিক বিজয় দেখছে আ.লীগ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী’র নিরঙ্কুশ বিজয়কে রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক বিরোধী শক্তিগুলোকে আওয়ামী লীগ সমুচিত জবাব দিয়েছে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ নেতারা।খবর ঢাকাটাইমসের।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দেশবাসী এমন একটি সময়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার পেল যখন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হতে যাচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ।

তারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যদি কোনো বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হতো, তাহলে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে পড়ত আওয়ামী লীগ। জনগণের অংশগ্রহণে এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষ পরিচালনায় এমন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য বিরাট রাজনৈতিক বিজয়।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কোনো কারচুপির বা অনিয়মের জোরালো অভিযোগ তুলতে পারেনি। ফলে এই নির্বাচন প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ও গণআস্থা বাড়ছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী’র বড় বিজয়ে দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। সৎ, যোগ্য, দক্ষ, সাহসী ও সঠিক প্রার্থী বেছে নিলে যেকোনো নির্বাচনেই আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

এদিকে জানা গেছে, রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে কেন্দ্রীয় নেতারা দেখা করতে গেলে আইভী’র বিজয় নিয়ে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সেইসঙ্গে এই নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রীয় নেতা দিনরাত পরিশ্রম করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান।

আইভীর বিজয় পর্যালোচনা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলেন, আইভীর সততা, দক্ষতা ও সাহসিকতার জন্যই নারায়ণগঞ্জের মানুষ তাকে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হিসাবে বেছে নিয়েছে। আইভী’র নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলীকে সম্মান জানিয়েছে তারা।

নেতারা মন্তব্য করেন, নারায়ণগঞ্জে আইভী’র হাতে নৌকা তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিচক্ষণতা ও নেতৃত্ব বাছাই করার যোগ্যতা-দক্ষতা আবারও প্রমাণ করেছেন।

তারা বলেন, দলের অভ্যন্তরে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও একক সিদ্ধান্তে আইভী’র হাতে নৌকা তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছিলেন, ‘আমার বাছাই কখনও ভুল হতে পারে না।’ দেশের মানুষকে শেখ হাসিনা কতটুকু অন্তরঙ্গভাবে বুঝতে পারেন, আইভী’র বিশাল বিজয় সেটাই প্রমাণ করে।

কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় নেতৃত্ব ও স্থানীয় দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে আইভীকে বেছে নেন শেখ হাসিনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে দলের অবস্থান নিয়ে চিন্তিত ছিলাম আমরা। এই নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৎপর ছিল অনেক বেশি। নতুন কমিটি হওয়ার পর প্রথম বড় নির্বাচন। কেন্দ্রের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিল নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগেরে প্রতিটি নেতাকর্মীর গতিবিধি। এটা কম দুশ্চিন্তার ছিল না আওয়ামী লীগের জন্যে। সেখানকার দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগের অবস্থার কারণে সুষ্ঠু নির্বাচনে বিজয়ের পথ রুদ্ধ করে দিতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে আমাদের কাছে। কিন্তু আইভীকে নিয়ে শেখ হাসিনার বিশ্বাসের জায়গা খুবই শক্তিশালী ছিল।’

এ নেতা আরও বলেন, ‘জননেত্রীর আরও নির্দেশ ছিল, জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন-নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিয়ে শেখ হাসিনা’র সম্মান বাঁচিয়েছেন। সরকারের সাথে আওয়ামী লীগও বিজয় লাভ করেছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান নওফেল বলেন, ‘শেখ হাসিনা যে যোগ্য নেতৃত্ব বুঝতে পারেন এই বিজয় তারই বহিঃপ্রকাশ।’ তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মিলিত প্রয়াসে আইভী’র বিজয় অশুভ শক্তির সব চক্রান্ত ভেঙে দিয়েছে। এ বিজয় সুষ্ঠু রাজনীতির, এ বিজয় সব মানুষের।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে বড় বিজয় শুধু নৌকার নয়, আমাদের গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে যারা এতদিন প্রশ্নবিদ্ধ করছিল, তাদের জন্য একটি কড়া জবাবও এ নির্বাচন। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে আমাদের রাজনৈতিক বিজয় হয়েছে।’

দলটির আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘এ নির্বাচন আওয়ামী লীগকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ যেকোনো নির্বাচনে জেতার মত জনপ্রিয়তা আওয়ামী লীগের রয়েছে।’

প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, ‘ক্ষমতায় থেকেও যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব আওয়ামী লীগ তা প্রমাণ করেছে। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন নিরপেক্ষতার দিক থেকে ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আইভী’র বিজয় প্রমাণ করেছে জনগণ যোগ্য, দক্ষ ও সাহসী নেতৃত্ব চায়।’



মন্তব্য চালু নেই