আইভীর জয়ের পথে সাখাওয়াত ফ্যাক্টর নয়!

কে হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরবর্তী মেয়র? এ নিয়ে স্থানীয়দের পাশাপাশি নির্বাচন বিশ্লেষকদের মধ্যে চলছে নানা রকম হিসাব-নিকাশ। তবে সাধারণ ভোটার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের যত হিসাব-নিকাশই থাকুক, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা আইভীর জয়ের পথে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনকে ফ্যাক্টরই মনে করছেন না। ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় দু’জন নেতা জানান, ‘গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী মূল্যায়নে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও বিএনপির প্রার্থীর তুলনায় আইভীকে অনেকে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া গত বুধবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আইভীকে নির্বাচনি মাঠের স্ট্রাইকার বলেও অভিহিত করেছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

বিএনপি দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনকে আমলে না নেওয়ার পেছনে আওয়ামী লীগ নেতারা বেশকিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন। তাদের মতে, সেলিনা হায়াৎ আইভী বর্তমান মেয়র। গত টার্মে দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে ইতোমধ্যেই তিনি পরীক্ষিত নেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা তিনি নৌকার প্রার্থী। এসব বিবেচনায় নিয়ে আইভীকে মনোনয়ন দেয় ক্ষমতাসীন দল।

এদিকে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের পরিচয় আলোচিত সাত খুন মামলার একজন আইনজীবী হিসেবে। নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে এটুকুই বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াতের পরিচয়। আইভীর কাছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে সাখাওয়াতকে দুর্বল ভাবছে আওয়ামী লীগ। দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, ‘অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন সাখাওয়াত হোসেন। শুধুই সাত খুন মামলার কৌশলী পরিচয় দিয়ে আর যাই হোক সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হতে পারবেন না।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, প্রার্থী হিসেবে তৈমুর আলম খন্দ কার ‘হেভিওয়েট’। নারায়ণগঞ্জে তার রাজনৈতিক যশ, খ্যাতি সবই রয়েছে। ফলে তৈমুর বিএনপির প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগের দুশ্চিন্তার কারণ ছিল। নারায়ণগঞ্জে সাখাওয়াতকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর সেই দুশ্চিন্তা কেটে গেছে ক্ষমতাসীনদের। তারা বলছেন, ‘আইভী ইতোমধ্যেই নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের নেতায় পরিণত হয়েছেন। সেই তুলনায় সাখাওয়াত অনেক দূরে। তৈমুর প্রার্থী হলে বাড়তি কৌশল, বাড়তি চাপ আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিতে হতো। কিন্তু সাখাওয়াত হওয়ায় বাড়তি চাপ আর থাকছে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী আইভী নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে অনেক বুনিয়াদি পরিবারকেও ছাড়িয়ে গেছেন। তার রাজনৈতিক মেধা, বুদ্ধি ও সততায় নারায়ণগঞ্জের মানুষ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। সে তুলনায় বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত এক রকম হঠাৎ উদয় হওয়া নেতা।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার আগে একাধিক তদন্ত করা হয়েছে। প্রত্যেক রিপোর্টেই আইভী ছিলেন এগিয়ে। প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে। তৈমুর আলম খন্দ কার প্রার্থী হলে দুশ্চিন্তা ছিল। এখন আর সেটা নেই।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘প্রার্থী বাছাই করতে গিয়েই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রাথমিক বিজয় অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। যেকোনও নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচন একটি বড় ‘ফ্যাক্টর’। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার বিচক্ষণ বাছাইয়ে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এগিয়ে রয়েছে।’

একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নাসিক নির্বাচনে এতদিন যেসব জরিপ চালিয়ে এসেছে, তাতে বিরোধী শক্ত প্রার্থী হিসেবে প্রায় সব জরিপেই তৈমুর আলম খন্দকারের নাম উঠে এসেছে। তাই তৈমুর নিয়ে বাড়তি টেনশন কাজ করেছিল ক্ষমতাসীনদের ভেতরে। এখন তৈমুর প্রার্থী না হওয়ায় ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন আইভী নিজেও।

জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহ বলেন, ‘আইভীকে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে, তার ব্যাপারে অনেক তথ্য সংগ্রহ করে। তার জনপ্রিয়তার মাপকাঠি, নারায়ণগঞ্জে তার জনসমর্থন অনেক বেশি।’ তিনি বলেন, ‘আইভীকে প্রার্থী করার ফলে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে অনেক বেশি চাপমুক্ত আওয়ামী লীগ। জনপ্রিয়তার দিক থেকে তার আশপাশে আর কোনও প্রার্থী আছে বলে আমি মনে করি না।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘আইভী নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ভীষণ জনপ্রিয় প্রার্থী। তাকে প্রার্থী মনোনীত করতে পেরে আওয়ামী লীগ চাপমুক্ত।’



মন্তব্য চালু নেই