আইপিএলের বড় বড় ক্রিকেটারদের নিলামে তোলেন যিনি

সোমবার হয়ে গেল ক্রিকেটের সবচেয়ে ধনশালী টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএলের ক্রিকেটার কেনাবেচার নিলাম। এই নিলামের জন্য অপেক্ষা করেন পৃথিবীর সেরা ক্রিকেটাররা, কারণ এই টুর্নামেন্টে খেলে এক একজন ক্রিকেটার যে পরিমাণ অর্থ আয় করেন – তা এক সময় কেউ বিশ্বাস করতেন না যে ক্রিকেট খেলে এত টাকা আয় করা কখনো সম্ভব হবে ।

এবারের দশম আইপিএলে খেলার জন্য নিলাম হবে ৭৩০ জন ক্রিকেটারের, প্রতিটি দল কিনতে পারবে সর্বোচ্চ ২৭ জন খেলোয়াড়কে ।
আইপিএলের কোন টিম কোন খেলোয়াড়কে কিনলো তার জন্য অপেক্ষায় থাকেন এসব দলের সমর্থকরাও।

তাই ক্রিকেটার কেনাবেচার এই অনুষ্ঠানটি নিজেই তার অভিনবত্ব, নাটকীয়তা আর তারকাদের উপস্থিতির জন্য একটা আকর্ষণীয় ইভেন্টে পরিণত হয়েছে। এই নিলামে খেলোয়াড় কেনাবেচা যিনি পরিচালনা করেন একটা কাঠের হাতুড়ি হাতে , তিনিও পৃথিবীর সবচেয়ে নামকরা নিলামকারীদের একজন – যার নাম রিচার্ড ম্যাডলি। যিনি

তিনি একজন ইংরেজ, যিনি ২০০৮ সালের প্রথম আইপিএল থেকেই এই নিলাম করছেন। এত বড় বড় খেলোয়াড়দের দাম হেঁকে নিলাম করার অভিজ্ঞতা ঠিক কেমন? বিবিসির কাছে তাই বর্ণনা করেছেন রিচার্ড ম্যাডলি।

তিনি বলছেন, “দু’হাজার আট সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম যে নিলাম হয়েছিল, তখন আমরা কেউই অনুমান করতে পারি নি যে এই টুর্নামেন্টটা কতটা সফল হবে। কিন্তু এখন বলা যায় যে সেদিন থেকেই বিশ্ব ক্রিকেট বদলে গেছে। আমার জন্য তো অবশ্যই এটা এক বড় পরিবর্তন ছিল। ”

“আমি মু্ম্বাইতে নামলাম তার আগের দিন, হোটেলে গেলাম, আমাকে বলা হলো একটা প্রেস ব্রিফিংএ যেতে হবে। আমরা গেলাম ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে, সেখানে প্রায় ৫০-৬০ জন সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যান ছিলেন। তারা সবাই পরের দিনের নিলাম বিষয়ে আমার সাথে কথা বলতে চাইছিলেন। এর পরদিন নিলাম হওয়া পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা সময় যে কিভাবে কেটেছিল তা বলে বোঝানো যাবে না।

“নিলাম হয়েছিল সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত। আমার জন্য এটা ছিল একটা ওয়ান-ম্যান-শো। যখন এক দফায় কয়েকজন বড় বড় খেলোয়াড় বিক্রি হচ্ছে – তার পর কিছু ক্ষণের জন্য বিরতি নিচ্ছিলাম আমরা। ললিত মোদি একটা সংবাদ সম্মেলন করছিলেন, জানাচ্ছিলেন যে কোন খেলোয়াড় কত দামে বিক্রি হয়েছেন। দুপুর একটার সময় ছিল মধ্যাহ্নভোজের জন্য ৪০ মিনিটের বিরতি। এর মধ্যে আমি স্নান করলাম, শার্ট বদলালাম – নিলামের পরের পর্বের জন্য তৈরি হলাম। প্রথমবার আমি একাই ছিলাম। আমাকে সহায়তা দেবার জন্য কোন প্রযুক্তি ছিল না – যেমনটা এখন আছে।”

“কখনো কোন খেলোয়াড়ের দাম হাঁকা নিয়ে নিয়ে – যাকে বলে বিড – যদি কোন মতভেদ হয় – তাহলে এখন প্রযুক্তির সাহায্য নেয়া হয়। যেমন আমি হয়তো কারো দাম হাঁকা দেখতে পেলাম না, বা শুনতে পেলাম না। এমনটা দুবার হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আমরা ভিডিও রিপ্লে দেখতে পারি। সেখানে দেখা সম্ভব যে আমার হাতুড়ির আঘাতটা ঠিক কখন পড়লো, তার আর আগেই ক্রেতা দাম হেঁকেছিলেন কিনা।”

“মজার ব্যাপার হচ্ছে , এই নিলামের সময় এত ব্যস্ত থাকতে হয় যে আমার হাত দিয়ে সর্বোচ্চ কত দামে একজন খেলোয়াড় বিক্রি হয়েছেন – তা মনেই থাকে না। কারণ আমার মনোযোগ সব সময়ই থাকে – এর পর যে খেলোয়াড়টি নিলামে উঠবেন – তার ওপর। কেভিন পিটারসেন বা ফ্রেডি ফ্লিনটফের দামটা অবশ্য মনে আছে। তারা দু জনেই বিক্রি হযেছিলেন ১৪ লাখ ডলারে। তবে এ সংখ্যাগুলো প্রায়ই মনে থাকে না, কারণ পরের খেলোয়া্ড়টির নিলাম হয়তো শুরু হলো ১০ বা ২০ হাজার ডলার থেকে। কিন্তু নিলামকারী হিসেবে আমার পক্ষে তাকে একটুও কম মনোযোগ দেয়া সম্ভব নয়। কারণ তখন ঘটনা ঘটতে থাকে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে।-বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই