আইপিইউ সম্মেলন চলাকালে মেয়র বরখাস্তের ঘটনায় বিব্রত সরকার

ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আপিইউ) সম্মেলন চলা অবস্থায় বিএনপির তিন মেয়রকে বরখাস্ত করার ঘটনায় কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হয়েছে সরকারকে।বিষয়টি ফলাও করে সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরায় চাপেও পড়েছে সরকার। সরকারের দায়িত্বশীল সুত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। একই তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও। যদিও স্থানীয় সরকার বিভাগের আইনে বলা আছে,কোনও জনপ্রতিনিধি ফৌজদারি আইনে অভিযুক্ত হলে, তাকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান আছে।আর এ বিধান অনুযায়ী বরখাস্ত হয়েছেন মেয়ররা।কিন্তু ঢাকায় এত বড় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত আর কয়েকদিন পরেও নেওয়া যেত। এ পরিস্থিতিতে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত তাড়াহুড়ো হয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাদের বরখাস্ত করা হয়নি।কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তাড়াহুড়ো করে এ ঘটনা ঘটানোতে বিষয়টি দৃষ্টিকটু করে তুলেছে। সূত্রগুলো বলছে,বরখাস্তের ঘটনা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে হয়নি।আমরা যতটুকু জানি মন্ত্রণালয় একক সিদ্ধান্তে এটা করেছে।আর তাই কাঁচা কাজ হয়ে গেছে, বললেন দলটির দায়িত্বশীল এক নেতা। এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘মেয়রদের বরখাস্তের ঘটনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতেন না।’

তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বরখাস্তের ঘটনা আইন অনুযায়ী হয়েছে।’ এর বাইরে আর কোনও কথা বলতে রাজি হননি মন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জানার বাইরে হয়েছে।’ এইতো আর কি বলব?’’ জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কজী জাফরউল্ল্যাহ বলেন, ‘বরখাস্তের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না।’ তিনি এলাকায় রয়েছেন বলে জানান।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বরখাস্তের এখতিয়ার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। এর পেছনের যুক্তি ও কারণ মন্ত্রণালয়ই ভালো বলতে পারবে।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা জেনেছি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অবহিত নন। বরখাস্তের ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই খোঁজ নেবেন।’

নীতি নির্ধারণী অন্য নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বরখাস্তের ঘটনা রাজনৈতিক নয়। তবে তাড়াহুড়ো করে এ ঘটনা ঘটানোর ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে সরকার, এটা বলা যায়। ওইসব নেতারা বলেন, ঢাকায় বিশ্ব নেতাদের সম্মেলন চলাকালে বরখাস্তের ঘটনা ভুল বার্তা দিতে পারে, এটা মাথায় রাখা উচিত ছিল।

কয়েকজন নেতা বলেন, বিএনপির মনোনয়ন বা সমর্থণে মেয়র হওয়া এসব জনপ্রতিনিধিরা জ্বালাও-পোড়াও ও হত্যা মামলার অভিযোগে অভিযুক্ত। কিন্তু যে সময়টাতে তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে, তা তাদের পক্ষে চলে গেছে। আর সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, রবিবার সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী চেয়ারে বসার দুই ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় বরখাস্তের আদেশ পান। আর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নানা কাঠখড় পুড়িয়ে মেয়রের চেয়ারে বসলেও,তা মাত্র আট মিনিট স্থায়ী হয়। একইদিনে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি কে গউছও ১১ দিন দায়িত্ব পালনের পর পদ হারান। এই তিনজন আগেও বরখাস্ত হয়েছিলেন। এসব জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা বিচারাধীন আছে।

আজ সোমবার ডেমরায় একটি সড়কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিন মেয়রকে বরখাস্ত করার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মেয়র বরখাস্তের বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এই সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নিয়েছে। এর পেছনে যুক্তি কী, কারণ কী-এটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। তবে আমি যতটুকু জানি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জানেন না।’

অবশ্য সরকার ও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপি-জামায়াতের মনোনয়ন বা সমর্থনে জয়ী জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে যারা মাথা গুঁজে শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করবেন, তাদেরকে হয়রানি করবে না সরকার। তবে চেয়ারে বসে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নে তৎপর ছিলেন, বা হতে পারেন-এমন জনপ্রতিনিধিদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান বজায় রাখবে সরকার।বিশেষ করে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের জনপ্রতিনিধির চেয়ার থেকে দূরে রাখতে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আইনগত সব ধরনের বাধা অব্যাহত রাখবে সরকার।



মন্তব্য চালু নেই