‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকলাপ নজরে রাখুন, পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে’

২০ দল তাদের নেতাকর্মীদের প্রতিটি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতিটি পদক্ষেপ ও কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। তাদের নাম, পরিচয় তালিকাভুক্ত করে রাখারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান স্বাক্ষরিত ২০ দলীয় জোটের এক বিবৃতিতে এ পরামর্শ দেয়া হয়।

বিবৃতি বলা হয়, “জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এক নির্বাচনী প্রহসনে ক্ষমতাসীন বর্তমান অবৈধ সরকার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা এখন মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে দমন-পীড়ন ও হত্যা-রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। গণবিচ্ছিন্ন শাসকগোষ্ঠী এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীসমূহের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।”

বিবৃতি বলা হয়, “রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে অবৈধ ক্ষমতা রক্ষার পাহারাদার বা লাঠিয়াল হিসেবে অপব্যবহারের উদ্দেশে ক্ষমতাসীনেরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণের ভার দলবাজ, বিতর্কিত, স্বার্থান্বেষী ও সুবিধাভোগী কিছু কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়েছে। পক্ষপাতদুষ্ট কতিপয় অতি উৎসাহী কর্মকর্তা এখন আইন, নিরপেক্ষতা ও মানবাধিকার ভঙ্গ করে আমাদের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সুনাম, ঐতিহ্য ও নিরপেক্ষতা নষ্ট করছে এবং দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এই বাহিনীগুলোর সদস্যদের গৌরবময় অংশগ্রহণের ধারাবাহিতকতাও অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে।”

এতে আরো বলা হয়, “এই পটভূমিতে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহের সর্বস্তরের সদস্যদের প্রতি আমরা পুরো পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সচেতন হবার আহ্বান জানাচ্ছি। নিজ নিজ বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে সুবিবেচনা অনুযায়ী কাজ করার অনুরোধ করছি।”

বিবৃতি বলা হয়, “বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটের অধিকারসহ জনগণের সমস্ত অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং আইনের শাসন ও মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এটি। এই আন্দোলন জনগণের আন্দোলন। এই আন্দোলন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়, অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে। পুলিশ-বিজিবি-আনসার-র্যাব হচ্ছে রাষ্ট্রের তথা জনগণের বাহিনী। কোনো দলকে রক্ষা করা নয়, দলমত নির্বিশেষে সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আজকের সমস্যা শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়। এটি রাজনৈতিক সংকট, কাজেই রাজনৈতিক পন্থায় এর নিরসন করতে হবে। তা না করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ক্ষমতাসীনেরা কূটকৌশলে ঠেলে দিচ্ছে জনগণের আন্দোলনের বিরুদ্ধে। এটা সকলকে অনুধাবন করতে হবে।”

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “আমরা বারবার বলছি, ২০ দলের আন্দোলন মানুষের জীবননাশের আন্দোলন নয়। যানবাহনে বোমা হামলা চালিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে এ সবের দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে বিরোধী দলকে নিষ্ঠুর পন্থায় দমন করাই ক্ষমতাসীনদের ঘৃণ্য অপকৌশল। আমাদের আহ্বান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ভাই-বোনেরা, আপনারা এই অপকৌশল বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবেন না।”

২০ দল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলে, “আপনারা নিজেরাই জানেন এবং নিয়ন্ত্রিত সংবাদ-মাধ্যমে ছিঁটেফোঁটা যেসব তথ্য আসছে তা থেকেও দেখছেন যে, বোমা হামলার ঘটনাস্থল থেকে আওয়ামী গোষ্ঠীর লোকেরা বোমা-অস্ত্র-গুলিসহ আটক হলেও উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তাদের ছেড়ে দিতে হচ্ছে। বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে তাদের দলের লোকদের ঝলসে যাবার ঘটনাও সংবাদপত্রে প্রায়শই প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের কারো বিরুদ্ধেই আপনারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। অথচ পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মী, এমন কি আটক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পর্যন্ত বিনা তথ্য-প্রমাণে মামলা করা হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে সাজানো বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলা হচ্ছে। পায়ে ও শরীরে গুলি করে গুরুতর জখম ও পঙ্গু করা হচ্ছে। যেখানে সেখানে পাওয়া যাচ্ছে বিরোধী দল সমর্থকদের এবং অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের অসংখ্য লাশ। গুম-অপহরণ নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ১৭ হাজারের বেশি গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করে ও রিমান্ডে নিয়ে অবর্ননীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও হেনস্তা করা হচ্ছে। বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হানা দিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুঠতরাজ ও পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে।”

২০ দল অভিযোগ করে, “শাসক দলের সন্ত্রাসীরা আপনাদের পাহারায় নানা জায়গায় মহড়া দিচ্ছে। অথচ বিরোধী দলের অফিসে তালা। আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে পথে নামলেই গুলি, টিয়ার গ্যাস, লাঠিচার্জ। মিডিয়ার সামনে কথা বললেও গ্রেফতার। এ কোন সমাজ? আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার এমন আচরণ কোনো মানদণ্ডেই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনারা চাকরি ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের কথা বলতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন, আইন ও বিধিতে পরিষ্কার বলা আছে যে, আপনারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ-নির্দেশই কেবল মানতে বাধ্য, কোনো অবৈধ নির্দেশ নয়। আপনারা মানবাধিকার রক্ষা করে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে আইনসম্মতভাবে কাজ করুন। কতিপয় সুবিধাভোগী কর্মকর্তার জন্য আপনারা কেন নিজেদের সুনাম ও বাহিনীর ঐতিহ্য ক্ষুন্ন করবেন? মনে রাখবেন, জনগণের আশা-আকাংখার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কেউ কখনো সফল হতে পারেনি। ন্যায়ের পথে থাকার কারনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো সদস্যকে এখন যদি বেআইনিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় তবে ভবিষ্যতে তাকে যথাযথ মর্যাদায় পুনর্বাসিত করা হবে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের আহ্বান, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করুন। বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন, গুলি করে আহত করা, পাইকারী গ্রেফতার, বাড়িঘরে হানা দেয়া বন্ধ করুন। শাসকদের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা না দিয়ে তাদের গ্রেফতার করুন।”

২০ দল বলে, “আমাদের এ আহ্বানের পরেও আর যদি একটি বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটে, অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতন, গুম-অপহরণ বন্ধ না হয়, তাহলে এর সঙ্গে জড়িতদের আমরা আগামীতে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হবার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলবো। খুনি ও অত্যাচারী এবং তাদের দোসরদের ভবিষ্যতে আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না।”

বিবৃতিতে ২০ দলের নেতাকর্মী ও জনসাধারণকে কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রতিটি এলাকা পর্যন্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের প্রতিটি পদক্ষেপ ও কার্যকলাপ সতর্ক পর্যবেক্ষণে রাখার আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে ২০ দলের নেতাকর্মীদের বলা হয়, “খুনি, নির্যাতনকারী ও গণবিরোধী ভূমিকা পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপকর্ম ও নাম-পরিচয় আপনারা তালিকাভুক্ত করে রাখবেন। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে রাখবেন। আগামীতে এদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

বিবৃতিতে এ বিষয়ের দিকে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই