আইটেম গান মানেই কি অশ্লীলতা?
ইতো কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের চলচিত্রের আকাশ ছিলো কালো মেঘে ঢাকা, সেই কালো মেঘ কিছুটা কাটতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। নতুন পরিচালক, নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রী, চলচিত্রের সকল ক্ষেত্রেই আসছেন নতুনরা। তরুণদের মাঝেও বাংলা সিনেমা নিয়ে শুরু হয়েছে উন্মাদনা। চলচিত্রে সুবাতাস না বইলেও, অদূর ভবিষ্যতে যে নিশ্চিত চলচিত্রের সুদিন আসতে চলেছে সম্প্রতি ব্যাবসা সফল ও আলোচিত কিছু ছবির সাফল্যে তার জোরালো আবহ পাওয়া যাচ্ছে।২০১৫ সালকে চলচিত্র বোদ্ধারা চলচিত্রের পুনঃ জাগরণের বছরও বলছেন, কিন্তু যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রজ্ঞায় আজ চলচিত্র সমৃদ্ধ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ও চলচিত্রের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার নামে এক ধরনের মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আইটেম গান নামক একধরনের ফর্মুলা বলিউড, টালিউড হয়ে ঢালিউডে প্রবেশ করেছে। এটা সময়ের চাহিদা, সাধারণ দর্শক নির্মল বিনোদন হিসেবে এটাকে সাদরে গ্রহন করলেও কিছু হলুদ সাংবাদিক কিছুটা খোলামেলা পোশাককে অশ্লীলতা আখ্যা দিয়ে পাঠককে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। কিছুদিন আগেও এমনি অপ-সাংবাদিকতার স্বীকার হয়েছিলেন হালের চলচিত্র অভিনেত্রী সাদিয়া আফরিন। তখন বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ ডট কমকে তিনি বলেন, কিছু সাংবাদিক যেনো আমার পিছু লেগেছে, শুধু নেতিবাচক নিউজ করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, আইটেম গান মানেই কি অশ্লীলতা?
শুধু সাদিয়াই নয় বাংলাদেশ চলচিত্রের জন্য ক্ষতিকারক এমন অনেক সংবাদই তারা দেদারছে যে যার ইচ্ছে মতো প্রকাশ করে যাচ্ছেন। তাদের ভাষায় যারায় আইটেম গানের দৃশ্যায়নে অংশ গ্রহন করছেন, তারা সকলেই অশ্লীল।
জানা যায়, বেশ কয়েক মাস ধরেই কিছু “ভুঁইফোড়”(যাদের এলেক্সা রেঙ্কিং ১০,০০০ এর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না, ২০০ পাঠক আছে কিনা সন্দেহ) অনলাইন নিউজ পোর্টাল আইটেম গানকে অশ্লীলতা আখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ালেও সেই কাতারে এখন প্রথম সারির ২/১ টা অনলাইন নিউজ পোর্টাল যোগ দিয়েছে (যাদের এলেক্সা রেঙ্কিং ভালো হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রহনযোগ্যতা একেবারেই কম, পাঠকও কম)। সাংবাদিকতার এথিক্সের কারনে নাম উল্লেখ করছি না কিন্তু বড় বিনিয়োগে গড়ে উঠা ছোট ১টি অনলাইন পোর্টালের কথা উল্লেখ না করে পারছিও না। তারা এইসব বস্তাপচা সংবাদ প্রকাশ করেন শুধুমাত্র পাঠক টানার স্বার্থে অথচ এসব সংবাদ চলচিত্রের ক্ষতির কারন হয়ে দাড়ায়। সেই পোর্টালটি বস্তাপচা খবর প্রকাশ করেই আগে থেকেই তাদের বিনোদন বিট শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। কিন্তু পচা সিমেন্ট দিয়ে বাড়ী বানালে কি বাড়ি ঠিকে? ঠিকে না। ধসে পড়ে। তাই পাঠক টানতে সক্ষম হলো না এলেক্সা রেঙ্কিং এ ভালো অবস্থানে থাকা অজনপ্রিয় ও বড় বাজেটের ছোট পোর্টালটি।
এইতো কিছুদিন আগে শুধুমাত্র টাকার জোরে অন্য একটি পোর্টালের হাই প্রোফাইল বিনোদন সাংবাদিককে বিনোদন বিটের প্রধান করে নিয়োগ দেওয়া হয় হলো।কিন্তু সংস্কৃতি ভাষায় “নৈবচ নৈব” বলে শব্দ আছে যার সহজ বাংলা করলে দাড়ায় আগের মতোই।এক্ষেত্রেও হলো তাইই। বিশেষ সেই নিউজ পোর্টালটির বিনোদন বিটের নতুন প্রধানও আগের পথেই হাঁটলেন, তাইতো তার বিভাগের তথাকথিত বিনোদন সাংবাদিকেরা “কে দুয়ার খুলে নাচলো কে দুয়ার বন্ধ করে নাচলো” এই ধরনের সংবাদের সাথে দৃষ্টিকটু ভঙ্গির ফ্রেমের ছবিও প্রকাশ করে থাকেন। এখানে আপনি বলতেই পারেন আপনি নাচলেন কেন? কেন আপনি বোরখা পড়ে আইটেম গানে নাচলেন না। সাধারণ পাঠক একটু মাথা ঘামালেই এটুকু বুঝতে পারবেন যে একই দৃশ্য শুধু মাত্র ফ্রেমের কারনে অশ্লীল করে ফেলা যায়।বড় পোর্টাল থেকে টাকার লোভে ছোট পোর্টালে আসা সেই হাই প্রোফাইলের বিনোদন সাংবাদিকের কাছে আমার সরল মনের সহজ প্রশ্নটা হলো ভালোটাকে ভালো বলতে আপনার সমস্যাটা কোথায়? বাংলা সিনেমার ক্ষতি করে আপনার লাভ কি? দীর্ঘদিন যাবত বিনোদন সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় আপনিও খুব ভালো করে জানেন যে, আরও অনেক টপিক আছে যে বিষয় গুলো বাংলাদেশের সিনেমার অগ্রযাত্রার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আপনার টিমকে কাজে লাগান। সিনেমাতে কাজ করা ভদ্র ঘরের নিরীহ নারী শরীর দেখিয়ে শুধু পাঠক বাড়ানোর দিকে নজর দিলে আপনার এতো বছরের বিনোদন সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা কি কাজে লাগবে বলুন?
ভুঁইফোড় গুলোর কথা বাদ দেওয়ায় ভালো কিন্তু বড় কোম্পানির মালিকের বড় বিনিয়োগে গড়ে উঠা একটা প্রফেশনাল অনলাইন পোর্টালের উচ্চ বেতনভুক্ত বিনোদন প্রধান ও সাংবাদিকদের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন সংবাদ পরিবেশনা চলচিত্রের এবং চলচিত্র কর্মীদের সন্মান হানি করা কতটা শালীনতা, প্রশ্নটা মনে এসেই যায়। তাই বুকে হাত দিয়ে বলুনতো আমার বিনোদন সাংবাদিকতার সহকর্মী বন্ধুরা, এটা কি সাংবাদিকতার নামে অশ্লীলতা নয়?
আত্মপক্ষ সমর্থন করে অতি বিনয়ের সাথেই বলছি, ১৪ বছর সাংবাদিকতার সাথে জড়িত থাকার পরও আমার মেধা খুবই সামান্য তাই অবুঝ মানুষের মনে আসা সরল প্রস্নের জটিল সমীকরণ না করায় শ্রেয়। আরও উল্লেখ্য যে, এই লেখার উদ্দেশ্য কোন প্রতিষ্ঠান বা নির্দিষ্ট কোন ব্যাক্তিকে হেয় প্রতিপন্ন করা নয় বরং একসাথে বাংলাদেশের চলচিত্রের মান উন্নয়নে যার যার জায়গা থেকে চলচিত্রের ক্ষতিসাধন নয় বরং অবদান রাখা।
মন্তব্য চালু নেই