অস্ট্রেলিয়ানরা মেতেছে মুস্তাফিজ বন্দনায়

এই মুহূর্তে ক্রিকেট বিশ্বে সম্ভবত সবচেয়ে সৌভাগ্যবান অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। কারণ, তার হাতে এমন একটি প্রতিভা রয়েছে, যাকে নিয়ে যে কোন অধিনায়কই গর্ব করতে পারে। বাংলাদেশি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান এমনই এক প্রতিভা, যাকে ক্রিকেটে সবচেয়ে বিরল বললেও ভুল বলা হবে না।

অধিনায়ক হিসেবে মুস্তাফিজ সম্পর্কে অনেক কথাই বলতে হয় ওয়ার্নারকে। সব কথাই থাকে প্রশংসায় পূর্ন; কিন্তু আর কত বলা যায়? বিশেষণেরও তো একটা মাত্রা থাকে। অথচ একের পর এক মাত্রাহীন বিস্ময় ছড়িয়ে যাচ্ছেন মুস্তাফিজুর রহমান।

অভিষেকের পর মাত্র ১২ মাস পার করেছেন তিনি। এই ১২ মাসেই বাঁ-হাতি এ পেসার দেখিয়ে যাচ্ছেন তার প্রতিভার ঝলক। ভবিষ্যতের অনেক বড় তারকা যে তিনি হবেন, সেটা এখনও প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নেয়ার পর তার প্রতিভা নিয়ে এখন আর কারও কোন সন্দেহ নেই। অস্ট্রেলিয়ানরা পর্যন্ত উচ্চসিত প্রশংসায় মেতেছে মুস্তাফিজের। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অফিসিয়াল ওয়েব সাইট, ক্রিকেট ডট এইউ ডটকম-এ প্রকাশ করা হয়েছে স্পেশাল নিবন্ধ।

অভিষেকের পর গত ১২ মাসে সব ফরম্যাট মিলিয়ে মুস্তাফিজ খেলেছেন ২৪ ম্যাচ। উইকেট নিয়েছেন ৫২টি। কতটা উুঁচুমানের বোলার তিনি, সেটা এখনই ঠিক বলে দিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ানরা। আইপিএলে ৫ ম্যাচে নিয়েছেন ৭ উইকেট। রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি ৫.৭৫ ইকনোমি রেটে। অথচ, মুস্তাফিজের সঙ্গে তার অধিনায়কের ভাষাগত দুরত্ব এত বেশি যে, সানরাইজার্স হায়দারাবাদকে একজন দোভাষী পর্যন্ত নিয়োগ দিতে হয়েছে।

শুধু তাই নয়, কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ম্যাচের পর সেরার পুরস্কার নিতে গিয়েও বাংলায় কথা বললেন মুস্তাফিজ। বাংলাকে এখন তিনি আইপিএলেও করে তুললেন গ্রহণযোগ্য। মুস্তাফিজের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার বলেন, ‘ম্যাচের পর পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে কিছুটা নার্ভাস ছিল মুস্তাফিজ। কারণ, ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন না তিনি।’

তবে ভাষাগত সমস্যা থাকলেও মুস্তাফিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে বাধ্য হয়েছেন ওয়ার্নার, ‘অসাধারণ প্রতিভা আর কী দারুন প্রয়োগ সেই প্রতিভার!’ মুস্তাফিজ সব সময় ওয়ার্নারকে বলে থাকেন, ‘আমার বোলিংয়ে কোন সমস্যা নেই। তবে কথা বলা এবং ব্যাটিংয়ে যা একটু সমস্যা।’

শুধু তাই নয়, মুস্তাফিজের জন্য দুর্নীতি দমন সংস্থার নিয়ম বহির্ভূত কাজও করতে হচ্ছে ওয়ার্নারকে। নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ চলাকালীন নিজের কাছে ফোন রাখতে পারে না কোন ক্রিকেটার। তবে ওয়ার্নার ফোনটা কাছে রাখেন মুস্তাফিজের বাংলা বোঝার জন্য তার এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে।

মুস্তাফিজের সঙ্গে কিভাবে কথা বলেন, কিভাবে যোগাযোগ রক্ষা হয়? জবাবে ওয়ার্নার বলেন, ‘ম্যাচে নামার আগে গুগল ট্রান্সলেটের সাহায্য নিতে হয়! এছাড়া আমার এক বন্ধু রয়েছেন, যিনি বাংলা জানেন। তার কাছ থেকে সহযোগিতা নিই।’

মাঠে কিভাবে মুস্তাফিজের সঙ্গে যোগাযোগ হয়? ওয়ার্নার বলেন, ‘মাঠে সে তার নিজের পজিশন সম্পর্কে বেশ ভালো করে জানে। সে হিসেবেই মাঠে নিজের অবস্থানটা তৈরী করে নেয় সে। তবে, কখনও যদি এর বাইরে যেতে হয়, তাহলে ফিল্ডিং সাজাতে তার সঙ্গে যোগাযোগ সমস্যা হয় না খুব একটা।’

সানরাইজার্সের অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার মইসেস হেনরিক্স বলেন, ‘দ্য লিটল জিনিয়াস আবারও দুর্দান্ত ফর্মে। আমরা সবাই জানি, সবাই মিলে যদি প্রতিপক্ষের ওপর শুরুর দিকে চাপ তৈরী করতে পারি, তাহলে শেষ দিকে এসে সে এ কাজটাই করে দেবে আমাদের জন্য।’

ইতিহাসও ঘাঁটতে বসে যান হেনরিক্স। তিনি বলেন, ‘আমি যদি ইতিহাসের দিকে ফিরে যাই, তবে দেখবো, একজন বোলার শেষ ৬ ওভারের তিনটিই করছে। এবং শেষ পর্যন্ত মাত্র ৪ ওভার স্পেলে ৮ থেকে ৯ রান দিচ্ছে, তাহলে তাকে বলতে হবে ডেথ ওভারে অবিশ্বাস্য এবং অসাধারণ বোলিং।’

ওয়ার্নার আবারও প্রশংসায় ভাসালেন মুস্তাফিজকে। তিনি বলেন, ‘সে হচ্ছে বিরল এক প্রতিভা। তারমত একজন বোলারকে পেয়েছে বাংলাদেশ। অবশ্যই তাদের গর্ব করা উচিৎ এবং তার যত্ন নেয়া উচিৎ। সে হচ্ছে বিশ্বসেরা একজন ক্রিকেটার এবং এখানে এসে সে প্রতিমুহূর্তে নিজেকে প্রমাণ করছে। আইপিএল এখনও শুরুর দিকে রয়েছে। আশা করছি এই ফর্ম সে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখবে। প্রতি বলে নিজের পেস পরিবর্তণ করা এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তার জ্ঞান সত্যি অসাধারণ।’



মন্তব্য চালু নেই