অর্থমন্ত্রী বলার পরও ‘জাগছে না’ পুঁজিবাজার
প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে পুঁজিবাজার জেগে উঠার কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। কিন্তু বাজেট পরবর্তী প্রথম সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর সেই কথা ভুল প্রমাণিত হলো। তার জেগে উঠার ডাকে সারা নেই শেয়ারবাজারে। কারণ, সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ারবাজারে লেনদেন কমেছে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারসাজি চক্রের তৎপরতা, বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা, তারল্য সঙ্কটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘ দিন ধরে শেয়ারবাজারে চলছে অস্থিরতা। আর ধারাবাহিক দরপতনে নিঃস্ব হয়েছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা তাকিয়ে ছিলো জাতীয় বাজেটের দিকে। কিন্তু বাজেটে পুঁজিবাজার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো প্রস্তাব বা দিক নির্দেশনা না থাকায় হতাশ হয়েছেন বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা।
প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘বাজেট এখনও শেষ হয়ে যায়নি। এখনও আমাদের প্রস্তাবগুলো ভেবে দেখার সুযোগ আছে। আমরা আশা করছি, পুঁজিবাজারের স্বার্থে প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হবে।’
সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গেল সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রথম কার্যদিবস রোববার (৫ জুন) লেনদেন শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১২ হাজার ২১৪ কোটি ৪১ লাখ ৭২ হাজার টাকায় এবং শেষ কার্যদিবসে বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) লেনদেন শেষে বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭৪৬ কোটি ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৮০ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬১ লাখ টাকা বা শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ।
গত সপ্তাহে টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১৬৯ কোটি ৫১ লাখ ১ হাজার ৮৩৭ টাকা। যা এর আগের সপ্তাহের চেয়ে ৪৪৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭২৫ কোটি ৭৭ লাখ ৮৩ হাজার ৫০২ টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইতে কমেছে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ। গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হয়েছে ৩৪৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। যা তার আগের সপ্তাহে ছিল ৪৩৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৮৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম।
গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৬১ শতাংশ, ডিএস৩০ সূচক কমেছে ২৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস কমেছে ১৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ সময় ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৯টির, কমেছে ২১৯টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৮টির আর লেনদেন হয়নি চারটি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারের সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দশমিক ১১ শতাংশ বেড়ে ১৪ দশমিক ৪০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিকে, গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সিএএসপিআই সূচক কমেছে দশমিক ৬৮ শতাংশ। সিএসই৩০ সূচক কমেছে দশমিক ১০ শতাংশ, সার্বিক সূচক সিএসসিএক্স কমেছে দশমিক ৬৬ শতাংশ, সিএসই৫০ সূচক কমেছে দশমিক ৫১ শতাংশ এবং শরীয়াহ সিএসআই সূচক কমেছে দশমিক ৯৮ শতাংশ।
সিএসইতে গড়ে মোট লেনদেন হয়েছে ২৬৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৬টির, কমেছে ১৭০টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২০টির। টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ১২৬ কোটি ৩৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
এদিকে, গত ২ জুন (বৃহস্পতিবার) ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট প্রস্তাব ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। এসময় পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য মার্জিন ঋণ ও সুদ (১০ লাখ টাকা পর্যন্ত) মওকুফের ঘোষণা ছাড়া বিশেষ কোনো প্রণোদনা ঘোষণা উঠে আসেনি প্রস্তাবিত বাজেটে। তবে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের শেয়ারবাজার এখন নিয়মমাফিক পরিচালিত হচ্ছে এবং স্থিতিশীলতা এসেছে। একই সঙ্গে ফটকাবাজির (কারসাজির) অবসান এবং নির্মূল হয়েছে। এ কারণে শেয়ারবাজার এবার জেগে উঠবে। আর অর্থমন্ত্রী শেয়ারবাজার নিয়ে আশাবাদী হলেও সন্তুষ্টি নয় বাজার সংশ্লিষ্টরা।
সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘পুঁজিবাজার উন্নয়নে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের দেয়া প্রস্তাবের প্রতিফলন ঘটেনি।’ তবে বাজেট পাসের আগে পুঁজিবাজার উন্নয়নে সিএসইর দেয়া প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নেবে বলে আশা করছেন তিনি।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘বাজেট বক্তব্যে পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রীর আশাবাদ ইতিবাচক। গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারেরর কাঠামোগত অনেক সংস্কার হয়েছে। যা বাজারে দীর্ঘ মেয়াদী সুফল বয়ে আসবে।’ তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ডিএসইর দেয়া প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মন্তব্য চালু নেই