অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের ছদ্দবেশে তৎপর শিবির

জগন্নাথ বিশ্ববিদালয়ের বিভিন্ন অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা। ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ঢুকতে না পেরে অন্য সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছে তারা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, ডিবেটিং সোসাইটি, বাঁধন ও আবৃতি সংসদসহ বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে শিবিরের পাঁচ শতাধিক কর্মী। ওইসব সংগঠনের অফিস কক্ষ রাজনৈতিক কাজেও ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইসলামি ছাত্র শিবিরের সব ধরনের কার্যক্রম ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ছয় বছরের বেশী সময় ধরে তারা ক্যাম্পাসে কোন কর্মসূচী পালন করতে পারেনি। তাই বলে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা থেমে নেই। অরাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের দিকে ঝুঁকেছে তারা। এসব সংগঠনের অফিস, টেলিফোন ইত্যাদি ব্যবহার করে বিভিন্ন নাশকতায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নিচ্ছে তারা। অরাজনৈতিক সবগুলো সংগঠনের অফিস জবির চারতলা অবকাশ ভবনে অবস্থিথ। গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে সবগুলো ছাত্র সংগঠনের অফিস বন্ধ করে দিয়েছে জবি প্রশাসন।

এ বিষয়ে জবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, নাশকতাকারীরা ছদ্দবেশে হামলা করছে। অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনে নতুন সদস্য গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় পর্যালোচনা করা হবে। নতুন কোন সংগঠন খুলতে গেলেও একই পথ অবলম্বন করা হবে। গত ২২ জানুয়ারী ভিসি ভবনের সামনে বিস্ফোরিত ককটেল অবকাশ ভবন থেকে ছোড়া হয়েছে সন্দেহে ভবনটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি এফএম শরিফুল ইসলাম বলেন, যেসব সংগঠনে শিবিরের অনুপ্রবেশের অভিযোগ পাওয় গেছে সেসব সংগঠন সম্পর্কে জবি প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। এসব সংগঠনে সদস্যের উপর গোয়েন্দা নজর রাখতে প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসকে শিবিরমুক্ত রাখতে ছাত্রলীগ সব সময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাঁধন জবি ইউনিটে দুই শতাধিক সদস্য শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির এজেন্ডা বাস্তবায়নের স্বার্থে জামায়াত শিবিরের হাই কমান্ড তাদের ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি বাঁধনের সভাপতি ফাহাদ বলেন, রাজনৈতিক কোন কর্মীকে বাঁধনের সদস্যপদ দেয়া হয়না। তবে সদস্য হওয়ার পর রাজনীতিতে জড়িত হলে তা আমাদের দেখার বিষয় না।

বিএনসিসি জবি ইউনিটের অর্ধ শতাধিক সদস্য শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিবিরের হাই কমান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী ক্যাম্পাসে নাশকতা ও বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে  প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে তারা সাহায্য করছে বলে জানা গেছে। বিএনসিসির সদস্যের ছদ্দবেশে সহজেই তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া ছাত্রী সংস্থার সদস্যরাও বিএনসিসিতে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিএনসিসি ক্যাডেট ইনচার্জ আবদুল মোমিন বলেন, রেগুলেশন অনুযায়ী রাজনীতির সাথে যুক্ত কোন শিক্ষার্থী বিএনসিসি’র সদস্য হতে পারবেনা। কোন রাজনৈতিক কর্মী বিএনসিসিতে নেই বলে জানান তিনি।

জবি আবৃতি সংসদ শিবিরের একটি আস্তানায় পরিণত হয়েছে। বর্তমান কমিটি দায়িত্বগ্রহণের পরেই অফিস কক্ষে টানানো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ছবি খুলে ফেলা হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে আবৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারন সম্পাদক ও জবি ছাত্রলীগের সভাপতি এফএম শরিফুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর ছবি টানানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু তিন মাসেও ছবি টানানো হয়নি। এ বিষয়ে সংসদের সভাপতি আরিফুর রহমান লিখন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবিটি এমনিতে খুলে পড়ে যায়। পরে আর টানানো হয়নি।

তিনি আরো বলেন, সংসদে কোন শিবিরকর্মী থাকলে তারদায়দায়িত্ব তিনি নিবেন। এছাড়া, রোভার স্কাউট, রেঞ্জার ইউনিট ও ডিবেটিং সোসাইটিতে শিবিরের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসব সংগঠনের অফিস কক্ষে নির্ভিঘ্নে বিভিন্ন পরিকল্পনা করতে তারা। অফিসের টেলিফোন ব্যবহার করে নিরাপদে তথ্য আদান প্রদান করছে শিবিরের সদস্যরা। এ বিষয়ে জবি শিবিরের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।



মন্তব্য চালু নেই