অভিশপ্ত সেই নদী এখন রহস্য-রোমাঞ্চে ঘেরা

এক সময় অভিশপ্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল নদীটিকে। এমনকি এর তীরে কেউ বসতি পর্যন্ত স্থাপন করেনি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই নদীটি এখন অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতির সাঁজে সেজেছে সে। রহস্য ও রোমাঞ্চকর সেই নদীর রূপ দেখে আসতে পারেন আপনিও।

চম্বল নদীর ধারে ৫,৪০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত ‘চম্বল অভয়ারণ্য’। ভারতের রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশ–এই তিন রাজ্য জুড়ে বিস্তার অভয়ারণ্যের।

১৯৭৮ সালে শুধুমাত্র মধ্যপ্রদেশের অংশ বলে স্বীকৃতি পেলেও বর্তমানে তিন রাজ্যের অধীনে রয়েছে চম্বল অভয়ারণ্য। পুরাণ অনুযায়ী সবচেয়ে অভিশপ্ত ও অপবিত্র নদী চম্বল। আর্যরাজ রন্তিদেব একবার অসীম ক্ষমতালাভের লোভে গোমেধ যজ্ঞ করেন। যজ্ঞকালে গো বলিদানে চম্বল নদীর জলের রং হয়ে ওঠে লাল।

সেইদিন থেকে আজও বিশ্বাস, ব্রাহ্মণদের দ্বারা শাপিত এই নদী। এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই চম্বলের তীরে বর্তমানেও কোনও জনবসতি গড়ে ওঠেনি, নেই কোনও ধর্মীয় স্থানও।

চম্বলের শাপে বর হওয়ার শুরু সেই অভিশাপের দিন থেকে। অভিশপ্ত এই নদীর পানি ভুল করেও ছুঁয়ে দ্যাখেননি কেউ। ফলে দূষণের লেশমাত্র নেই এই পানিতে।

কালক্রমে বিশু, পরিষ্কার এই জলাধারের চারপাশে বাসা বাঁধে বিরল প্রজাতির পশুপাখি। ক্রমে তাদের স্থায়ী আস্তানা হয়ে ওঠে চম্বলের তীর। রাজস্থানের জওহর সাগর বাঁধ থেকে উত্তরপ্রদেশের চম্বল-যমুনা সংগম পর্যন্ত বিস্তৃত এই অভয়ারণ্য।

বর্তমানে বহু বিরল প্রজাতির পশুপাখির বাস এখানে৷ প্রায় ৩২০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এই অভয়ারণ্যে। চম্বল স্যাংচুয়ারিকে এখন ইম্পর্ট্যাণ্ট বার্ড এরিয়া (আইবিএ) বলে গণ্য করা হয়৷ প্রচুর পরিযায়ী পাখির অস্থায়ী ঠিকানাও চম্বলের তীর।

সুদূর সাইবেরিয়া থেকে এখানে শীতে উড়ে আসে পাখির ঝাঁক। ইন্ডিয়ান স্কিমার, সারস ক্রেন, ইন্ডিয়ান কোর্সার, পাল্লা’স ফিশ ইগল, প্যালিড হেরিয়ার, লেসার ফ্লেমিংগো-র মতো বিরল পাখির দেখা মেলে এখানে।

শীতে এখানে উড়ে আসে ব্ল্যাক-বেলিড টার্নস, রেড-ক্রেস্টেড পোচার্ড, ফেরুজিনাস পোচার্ড, গ্রেটার ফ্ল্যামিংগো-র মতো পাখিরা৷ চম্বল অভয়ারণ্যে রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির অন্তর্গত ঘড়িয়াল, রেড ক্রাউন্ড রুফ টার্টল ও গ্যানজেস রিভার ডলফিন।

মোট জ্জ্ববিরল প্রজাতির কচ্ছপের বাস এখানে৷ রয়েছে মুগ্গার কুমির, স্মুদ কোটেড ওটার, স্টাইপড হায়না ও ইন্ডিয়ান উল্ফ।

এছাড়া চম্বল অভয়ারণ্যে প্রচুর স্তন্যপায়ী পশুর বাস। রেসাস মেকে, হনুমান লাঙ্গুর, গোল্ডেন জ্যাক্ল, বেঙ্গল ফক্স, কমন পাম সিভেট, ইন্ডিয়ান স্মল মঙ্গুজ, ইন্ডিয়ান গ্রে মঙ্গুজ, জাঙ্গল ক্যাট, ওয়াইল্ড বোর, সাম্বার, নীলগাই, ব্ল্যাকবাক, ইন্ডিয়ান গেজেল, নর্দান পাম স্কুইরেল, পর্কুপাইন, ইন্ডিয়ান হেয়ার, ইন্ডিয়ান ফ্লাইং ফক্স ও অন্যান্য।

চম্বল অভয়ারণ্যে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা। সাইট সিয়িং ও ফোটোগ্রাফির জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।- সংবাদ প্রতিদিন



মন্তব্য চালু নেই