অবৈধ সন্তান নিয়ে যার অমরত্ব আসলে অভিশাপ, প্রিয়জনের মৃত্যু দেখার অভিশাপ!

আই হার্ট মাইসেলফ টুডে
টু সি ইফ স্টিল আই ফিল
আই ফোকাস অন দ্য পেন
দি ওনলি থিংগ দ্যাট’স রিয়েল
সারাজীবন শুধুমাত্র কষ্ট পেয়ে এসেছে একটা লোক। অবৈধ সন্তান। বাড়ি নেই, সংসার নেই এমনকী, লক্ষ্যটুকুও তো নেই জীবনের! সেই লোকটা এ গান গাইবে না তো কে গাইবে বলুন! বলবেন, দুঃখবিলাসী একটা মানুষ। নাহ্, সেটাও কি বলা চলে তাকে? সে তো মিউট্যান্ট, যাকে কখনও শেষ করে দিতে চায় আমেরিকার সরকার, কখনও গবেষণাগারে যথেচ্ছভাবে ‘এক্সপেরিমেন্ট’ করা হয় তার উপর। মানুষ হয়েও সে বেমক্কা সুপারহিরো। তাই সে বলে, আমাকে আমার মতো ছেড়ে দাও। তোমাদের কোনও ব্যাপারেই আমি নেই।

উলভারিন সেই লোকটার নাম, যার মনে হয় অমরত্ব আসলে অভিশাপ। একের পর এক প্রিয়জনের মৃত্যু দেখে যাওয়ার অভিশাপ। নিজের কোলে পিতৃতুল্য প্রোফেসর চার্লসের (প্যাট্রিক স্টুয়ার্ট) মৃতদেহ বয়ে বেড়ানোর অভিশাপ। এমন কিছু ক্ষমতা থাকার অভিশাপ, যা আসলে কুরে কুরে শেষ করে দিচ্ছে একটা মন। শরীর তো পরের কথা! সেখানে যদি এক টুকরো মিষ্টি গন্ধ এসে নাকে ঢোকে, যদি মরুভূমিতে রংবেরঙের ফুল ফোটে, তাহলে তো উলভারিনের মতো উদাসীনের মন উদাস হতেই পারে! বাইরে যতই অ্যাডামেন্টিয়াম ধাতুতে গড়া হোক সে, হৃদপিণ্ডে তো এখনও রক্তক্ষরণ হয়। তাই তারই জিন দিয়ে তৈরি মেয়েকে যখন দেখে, আঁকড়ে ধরতে চায় সে। আবেগটা আসলে লুকিয়ে রাখতেই শেখানো হয়েছে কিনা প্রোফেসর চার্লসের মিউট্যান্ট-স্কুলে।
এই ছবিটা যতটা উলভারিনের, ততটাই হিউ জ্যাকম্যানের। উলভারিন তো আর শুধু এক্স-ম্যান নয়, আপাদমস্তক একটা মানুষ। হয়তো শুধুমাত্র উলভারিন হলে, এখানেও তার সব ক্ষত, সব ঘা শুকিয়ে যেত। কিন্তু গেল না তো! যে অ্যাডামেন্টিয়াম তার শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেটাই তো তাকে শেষ করে দিল। আসলে কিছু ক্ষত মরে না, দগ্ধে দগ্ধে শেষ করে। এটাই তো শিখিয়ে গেল উলভারিন।

সুপারম্যান তো সুপার আদমি। ব্যাটম্যানের কত কেতা। আয়রনম্যান হাই-ফাই। তাহলে মানুষটা কোথায়? মানুষটা উলভারিনে। লোগানে। তার ক্ষিপ্র ঔদাসীন্যে। তার ‘আউটরেজে’। পরিচালক জেমস ম্যানগোল্ড সেই চিত্রনাট্য যত্ন করে সাজিয়ে দিয়েছেন। যাতে হিউ জ্যাকম্যান সেই এক্স-মানব হয়ে উঠেছেন, যে মনে করে ভাল হোক বা খারাপ, দেয়ার ইজ নো লুকিং ব্যাক। যে তার শিক্ষক চার্লসকে বাবার মতো দেখভাল করতে পারে। যে তার মেয়েকে বাঁচাতে মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। ঠিক যেন আদর্শ ফ্যামিলি-ম্যান!

এতদিন যে স্ট্যান্ড-অ্যালোন ছবিগুলোতে উলভারিন এসেছে, সেখানে অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হয়েছে। ‘লোগান’এ তার অবকাশ ছিল না। মেয়ে লরার (ড্যাফনে কিন) সঙ্গে কেমিস্ট্রির কথাই ধরা যাক। অদ্ভুত লাভ-হেট রিলেশনশিপ তাদের। ড্যাফনে কিন একটা আবিষ্কার বটে। বাবার পাথুরে কবরে ক্রসটাকে হেলিয়ে এক্স করে দেওয়াটা মনে থেকে যাবে। তবে ‘ডেডপুল’এর পর মনে হচ্ছে ‘মার্ভেল’ এবার ভায়োলেন্ট থেকে ‘ভায়োলেন্টতর’ হওয়ার দিকে এগোচ্ছে।

এত কথা একটা লোককে নিয়ে, অথচ গল্পটা কী? আসলে গল্পটা সরলরেখায় চলা একটা কাহিনি। ক্যানসার রিসার্চের নাম করে মিউট্যান্ট শিশুদের ধরে এক্সপেরিমেন্ট চালায় একটি সংস্থা। সেখান থেকেই পালায় লরা। দেখা হয় উলভারিন এবং চার্লসের সঙ্গে। মিউট্যান্ট শিশুদের বন্দি করতে চায় ওই সংস্থা। কিন্তু এসে পড়ে উলভারিন। তারা কি শেষমেশ পালাতে পারে? মেক্সিকোর সীমান্তে ওয়েস্টার্ন ধাঁচের একটা গোটা ছবি। এটুকুই। এসব ছাপিয়ে অন্য কিছু হয়েছে বলেই না লোগানকে নিয়ে এত কথা!
সেলাম হিউ। সেলাম লোগান। সেলাম উলভারিন।



মন্তব্য চালু নেই