অবিশ্বাস্য দামি আট বস্তু
কথায় বলে ‘শখের তোলা আশি আনা’। বাংলা ভাষায় প্রচলিত শৌখিলদের সম্পর্কে এই প্রবাদও কখনো কখনো হার মানে। কারণ কিছু মানুষের বিলাশিতার মাত্রা এতটাই উচ্চ যা আপনার ধারণারও বাইরে। যেমন ধরুন রাশিয়ার জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিকনটাকটের কোটিপতি মালিক পাভেল ডুরভের কথা। তিনি নাকি তার অফিসের জানলা দিয়ে ডলারের তৈরি কাগুজে বিমান বানিয়ে মানুষের মাথার ওপরে উড়িয়ে দিতে দু-মিনিটও ভাবেন না। আবার এমন অনেকেই আছেন যারা অজস্র অর্থ খরচ করে থাকেন বিনা কারণে।
কেবলই শখের বশে কোটি টাকা খরচ করা মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই কম নয়। এমন বহু উদাহরণ রয়েছে আমাদের চারপাশেই। আজকের এ প্রতিবেদনে এমনই কয়েকটি বস্তুর কথা বলব যেগুলো বাজারে মহা মূল্যবান হলেও সেগুলো কাজে লাগে না কখনই।
১. সবচেয়ে দামি মিষ্টির বাক্স
ছোট থেকে বুড়ো- প্রায় সবারই পছন্দের তালিকায় দেখা রয়েছে চকলেট। তবে এমন একটি চললেটের বাক্সের কথা বলব এখন যার দাম দেড় মিলিয়ন। আপনার কাছে বিষয়টি অসম্ভব মনে হলেও লে চকলেটের তৈরি এই ব্যয়বহুল চকলেট বাক্সটির দাম প্রায় দেড় মিলিয়ন ডলার! তা হবেই বা না কেন? শুধু তো চকোলেট নয়, এটি কিনলে আপনি পাবেন পান্না আর নীলাকান্ত মণির সুন্দর অলংকারও! ঠিক ধরেছেন। চকলেটের স্বাদ কেমন সেটা প্রাধান্য না পেলেও এই বিশেষ চকলেটের বাক্সটিতে মূল্যবান অলংকার আর রত্ন যেন সুন্দর করে সাজানো থাকে সেদিকটাতেই বেশি নজর রেখেছে এর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি।
২. সেলফোন
সেলফোন মানুষ ব্যবহার করে কেন? অবশ্যই দৈনন্দিন কাজে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য। তবে পিটার অ্যালোইসনের ডিজাইন করা স্মার্ট ফোন ডায়ামন্ড ক্রিপটোর কাজটা এরচাইতে একটু বেশি কিছু। নাম শুনেই নিশ্চয় বুঝে গিয়েছেন যেন-তেন ফোন নয় এটি। তবে কেবল হীরাই নয়, এই মহামূলবাম সেলফোনটিতে রয়েছে গোলাপী ও প্ল্যাটিনাম রঙয়ের স্বর্ণ। পাশাপাশি সেলফোনের দুই পাশে ৫০টি হীরেসহ মোট ৮০ টি হীরে এর পুরো শরীরজুড়ে রয়েছে। এসব বাদেও সেলফোনটির প্রতিটি বোতামে রয়েছে অনেকগুলো হীরের টুকরো। কোন গয়নার চাইতে পিছিয়ে না থাকা এই সেলফোনটি কিনতে আপনাকে মোট খরচ করতে হবে ১.৩ মিলিয়ন ডলার।
৩. হ্যালো কিটি
জাপানি কার্টুন চরিত্র হ্যালো কিটিকেকে না পছন্দ করে। কিন্তু সেতো টিভি পর্দায় কিংবা ছোটখাটো পুতুলের বেশে। ভাবুন তো এমন এক কিটি পুতুলের কথা যার শরীরে সাজানো রয়েছে হীরে, রুবি, গোলাপী নীলাকান্তমণি ও আরো বহু মূল্যবান রত্ন! ভাবছেন, এমনটাও আছে নাকি? হ্যাঁ আছে। আর এই প্ল্যাটিনামে তৈরি কিটি পুতুলটির প্রস্থ ৩.৮ সেন্টিমিটার আর দৈর্ঘ্য ৫.৬ সেন্টিমিটার। তবে ছোটখাটো হলেও এর ওজন ৫৯০ গ্রাম। আর দাম প্রায় ১৬৩,০০০ ডলার। ২০০৬ সালে এক শৌখিন বিত্তশালী এই দামেই কিনে নেন রত্ন খচিত কিটি পুতুলটিকে।
৪. পিৎজা
সাধারণ পিৎজার তুলনায় একটু অন্যরকম এই পিৎজাটিতে কোনরকম রত্ন না থাকলেও রয়েছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও দূর্লভ কিছু উপাদান। নিউ ইয়র্কে অবস্থিত নিনোস বেল্লিসিমা পিৎজার পিৎজারিয়াতে গেলে খুব সহজেই হাতের নাগালে পেয়ে যাবেন এই খাবারটিকে। তবে সেটা মুখের ভেতরে পুরতে হলে এর প্রতিটি অংশের জন্যে মোট ১২৫ ডলার গুনতে হবে আপনাকে। মোট আটটি টুকরোর এই পিৎজাটির ভেতরে রয়েছে ক্রিম ফিশ, শিভ- অনিয়ন, চার রকমের ক্যাভিয়ার, অতলান্তিকের চিংড়িমাছের চিকন করে কাটা লেজ, শ্যামন মাছের পুর আর খানিকটা ওয়াসাবি। আটজনের জন্যে যথেষ্ট এই পিৎজাটিকে এখন অব্দি পৃথিবীর সবচাইতে দামী পিৎজা বলে মনে করা হয়।
৫. হাতব্যাগ
মেয়েদের ক্ষেত্রে বাইরে বের হতে গেলে হাতব্যাগ বহন করা একটি দারুণ জনপ্রিয় ফ্যাশন। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সব নারীরই হাতব্যাগের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে। তাই সবার মন যোগাতেই গিনজা তানাকা প্রতিষ্ঠানটি ২০০৭ সালে টোকিয়োর একটি ফ্যাশন শো তে উন্মুক্ত করে নিজেদের তৈরি সবচাইতে সুন্দর আর সবচেয়ে দামী হাতব্যাগটি। প্ল্যাটিনাম আর ২,১৮২ টি হীরের টুকরো দিয়ে তৈরি এই হাতব্যগটি দেখতে না যেমনই হোক না কেন দামটা ঠিকই খুবই চড়া। এটি পেতে গেলে আপনাকে খরচ করতে হবে পুরো ১৬,৩০,০০০ ডলার।
৬. ক্রিকেট বল
নিশ্চয়ই ভাবছেন, সোনা-রুপোয় মোড়া ক্রিকেট বল দিয়ে কি আর খেলা হয়? নিশ্চয়ই সেসবের ধারে কাছে নেই এটি। পৃথিবীর সবচাইতে দামী এ ক্রিকেট বলটির গায়ে রয়েছে ৫,৭২৮ টি হীরে। ৬৮,৫০০ ডলারের এই অসম্ভব সুন্দর বলটিকে অবশ্য খেলতে নয়, ২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেরা খেলোড়ারের পুরস্কার হিসেবে তৈরি করা হয়।
৭. টি-ব্যাগ
রোজ সকালে যে জিনিসটা ছাড়া আমাদের চলেই না সেটি হচ্ছে এক কাপ চা। কিন্তু চায়ের মতন অতি জনপ্রিয় পানীয়ের ব্যাগকে অযথাই রত্ন দিয়ে মুড়িয়ে দিয়ে জবরজং আর ব্যয়বহুল করে তুলেছে ব্রিটেনের অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান পিজি টিপস। তাদের হয়ে চায়ের ব্যাগকে মহামূল্যবান অলঙ্কারে সাজিয়ে দিতে সাহায্য করেছে বুডলস। তবে একেবারে এমনিতেই নয়, পিজি টিপসের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ২৮০ টি হীরে দিয়ে সাজানো চায়ের ব্যাগ তৈরি করে পিজি টিপস। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৪ হাজার ডলার!
৮. টেলিভিশন
বর্তমানে সকলের আগে অন্য যেকোনো ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী থাকুক বা না থাকুক টিভি নেই এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকর। এর আবশ্যকতাও তো কম নয়। প্রতিদিনের খবর, দরকারী সব তথ্য সম্পর্কে জানার পাশপাশি বিনোদন মাধ্যম হিসেবেও এটি দারুণ কার্যকর। এই টিভিকে আরো বেশি আকর্ষনীয় করতে এলসিডি টিভি ইয়ালোস ডায়ামন্ড নির্মাণ করা হয়। যেটা কিনতে গেলে আপনার খরচ পড়বে প্রায় ১,৩০,০০০ ডলার। তবে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। আর প্রশ্নটা হচ্ছে, মানুষ এই টিভি দিয়ে টিভিতে সম্প্রচার অনুষ্ঠান দেখবে নাকি খোদ টিভিকেই? উত্তরটা জানা না থাকলেও ইচ্ছে হলে আপনিও কিনতে পারেন বিশাল আকারের সাদা স্বর্ণ আর ২০ ক্যারটের হীরে দিয়ে মোড়ানো এই মূল্যবান টিভি।
মন্তব্য চালু নেই