অবহেলিত প্রবীণদের সুখের ঠিকানা আমেনা বশর বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র

টেইলারিং কাটার মাস্টার দুলাল দাশ কাজ করেছেন নিউ মার্কেট খ্যাতিমান টেইলারিং দোকান ইলোরা, এভারগ্রীণে। পটিয়ার এলাকার বাসিন্দা দুলালের শরীরে যতদিন কর্মক্ষমতা ছিল ততদিনের অর্জিত আয়ের টাকায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বেশ সুখে ছিলেন। সকলকে নিয়ে তিনি সংসার চলছিল সুখে দুখে বেশ সাছন্দে। বয়সের ভারে ক্লান্ত এই ব্যক্তির গায়ে এখন শক্তি নেই, চোখে দেখেন ঝাপসা, বয়স এখন ৭৮ কোঠায়। তাই তিনি কর্মহীন। তার কর্মহীনতায় এখন পরিবারের সদস্যরা কেউ তাকে পাত্তা দেয় না। সন্তান, স্বজনরা তাকে করেন অবজ্ঞ। দেয়া হয় না বেঁচে থাকার মত খাবার ও ঔষধ। দুলাল দাশের স্ত্রী আগেই বিয়োগ হয়েছে। তার এই দন্যদশার মাঝে একমাত্র ছেলেটি সংসার পেতেছে খাগড়াছড়িতে গিয়ে।

জীবন মরনের এই সন্ধিক্ষণে অসহায় দুলাল দাশের এখন ঠিকানা হয়েছে রাউজানের নোয়াপাড়া আমেনা বশর বয়স্ক পুনর্বসন কেন্দ্রে। তাকে এখানে পুনবাসনে সহায়তা করেছেন পরিচিত জনেরা। দুলাল দাশ এখানে আসার পর থেকে অন্যান্য পুনবারপসিত বয়স্কদের সাথে বেশ সুখেই আছেন। বিনা খরচে সুন্দর পরিবেশে থাকার পাশাপাশি এখান থেকে পাচ্ছেন প্রয়োজনীয় খাবার ও ঔষধ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে মধ্যে প্রতিষ্ঠিত বিশাল এই কেন্দ্রের ক্যা¤পাসের মধ্যে ঘুরে ফিরে তিনি এখন মুক্ত মনে দিনকাটান। গত ১ মে শুক্রবার ছিল আমেনা বশর বয়স্ক পুনবাসন কেন্দ্রের প্রথম বর্ষফুর্তি অনুষ্ঠান।

এ উপলক্ষে এখানে এক দোয়া মাহফিল ও সুধি সমাবেশ আয়োজিত ছিল। এই কেন্দ্রের আশ্রয়ে থাকার অনেকের সাথে কথা বলে ধারণা পাওয়া যায় এখানে আসা সকল প্রবীণরাই তাদের সন্তান ও স্বজনদের অবজ্ঞার শিকার হয়ে পূনবাসন কেন্দ্রে এসেছেন। এখানেই এসে তারা পরম সুখে ও শান্তিতে বাকি জীবন কাটিয়ে পরপারে যাত্রা করতে চান। ময়মনসিংহ থেকে আসা প্রবীণ মালেক মণ্ডল নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন পরিবারের সদস্যদের অবজ্ঞার শিকার হয়ে এখানে এসেছি, মনের ভিতর স্ত্রী সন্তানের জন্য বিচ্ছেদের আগুন জ্বললেও এখানে এসে এখন শাররীক মানষিক ভাবে খুবই খুশি। খাবার, ঔষধ চা নাস্তা সব কিছু চলে আসে যথাসময়ে। সুন্দর পরিবেশে নামাজ আদায় করা যায়, এটিই এখন তার শেষ ঠিকানা।

নোয়াপাড়া পথেরহাটের প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত এলাকায় এই বয়স্ক পুনবাসন কেন্দ্রটি কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন। প্রায় দুই একর জায়গা জুড়ে থাকা এই কেন্দ্রের অভ্যন্তরে রয়েছে বড় পুকুর, বাগান ও কবরস্থান। প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে মনোরম নক্সায় নির্মিত চার তলা ভবনটি পূনবাসন কেন্দ্রের জন্য সংরক্ষিত। ভবনের ভিতর আছে মসজিদ ও রান্নাঘরসহ সব ধরণে সুযোগ সুবিধা। ভবনের নিচের একটি কক্ষ ব্যবহৃত হচ্ছে ডাকঘর হিসাবে। এই ভবনের প্রতিটি তলায় আট হাজার বর্গ ফুটের রয়েছে চারটি ফ্লোর। ৩৫টি কক্ষ সাজিয়ে রাখা হয়েছে দুই’শ প্রবীণ ব্যক্তিকে পূনবাসন করার উপযোগি করে। কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ শামশুল আলম বলেছেন কোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যাক্তি গোষ্ঠির সাহার্য্য ছাড়া তিনি সমাজের বঞ্চিত প্রবীণ শ্রেণীর মানুষের কথা বিবেচনা করে এই কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।

তিনি জানান কিছু নিয়ম কানুন মেনে সমাজে অসহায় অবস্থায় থাকা যেকোনো ধর্ম ও এলাকার মানুষ এই কেন্দ্রে আসতে পারবেন। জানা যায় এখানে প্রবীণদের পূনবাসনের জন্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শর্ত হচ্ছে- পারিবারিক ভাবে অসহায়ত্বের মধ্যে থাকা ছোয়াঁচে রোগমুক্ত প্রবীণদের বয়স ষাটোর্ধ হতে হবে, আশ্রয় প্রার্থীদের শাররীক শক্তি সামর্থে একা হাঁটাচলা করার ক্ষমতা থাকতে হবে, নিজ নিজ ধর্মানুসারে নিয়িমিত প্রার্থনায় যোগ দিতে হবে এবং মানষিক ভাবে সুস্থ হতে হবে। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলেছেন আশ্রয় প্রার্থীরা নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। যোগাযোগ করা যেতে পারে ০১৮৫৯২০০৭৭১ নাম্বারে। এখানে উপস্থিত সুধি জনদের মধ্যে একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেছেন আমেনা বশর বয়স্ক পুনবাসন কেন্দ্রটি সমাজের ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিদের চোখ খুলে দিয়েছে। প্রতিজন সচ্ছল ব্যক্তি নিজের সাধ সাধ্যানুসারে গরীব মানুষের কল্যাণে কাজ করলে একদিকে বঞ্চিত শ্রেণী উপকৃত হয়, অন্যদিকে এসব কর্মকাণ্ডের ফলাফল হিসাবে তার জন্য পরকালের মুক্তির পথ অবধারিত থাকে।



মন্তব্য চালু নেই