অবশেষে প্রবাসীর টাকায় সেই সেতু

প্রবাসীর অর্থায়নে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় বাসিয়া নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলার কোনারাই বাজার ও কাহিরঘাট বাজারের সংযোগস্থলে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মুজিবুর রহমান তাঁর দাদি মোছা. ফুলেছা বেগমের নামে সেতুটি নির্মাণ করেছেন।

সেতুটি নির্মাণের ফলে সিলেটের বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার মানুষের যাতায়াতের ঝুঁকি ও কষ্ট কমেছে। সরকারের অনুমতি নিয়ে ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থের সেতুটির নির্মাণকাজ ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়। নির্মাণকাজ শেষে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘মোছা. ফুলেছা সেতু’র উদ্বোধন করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম।

এলাকার অনেকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে এখানে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। অবশেষে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে সেই দাবি বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছেন মুজিবুর রহমান। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।

এলাকার শিক্ষক আকবর আলী বলেন, মহৎ মনের অধিকারী না হলে কেউ এমন কাজ করতে পারেন না। সেতুটি নির্মাণের ফলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয়েছে। রোগীদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা হলো।

ইউপি সদস্য খায়রুল আমিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের চেষ্টা চললেও বাস্তবায়ন হচ্ছিল না। অবশেষে মুজিবুর রহমানের কল্যাণে তা সম্ভব হয়েছে। এলাকাবাসী চিরদিন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তাঁকে স্মরণ করবেন।

বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আসাদুল হক বলেন, এ ধরনের সেতু নির্মাণ করতে উপজেলা পরিষদের আনুমানিক চার বছর সময় লাগবে। কিন্তু মুজিবুর রহমান এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্বল্প সময়েই তা বাস্তবায়ন করেছেন। সত্যিই এ কাজের জন্য তিনি সবার প্রশংসার দাবিদার।

বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতাসংগ্রাম থেকে শুরু করে সব সময় এলাকার প্রবাসীরা নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। অন্য উপজেলার বাসিন্দা হয়েও প্রবাসী মুজিবুর রহমান বিশ্বনাথে সেতুটি নির্মাণ করে তা আবারও প্রমাণ করলেন। মানবকল্যাণে তাঁর মতো যেসব প্রবাসী কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের জানাই হাজারো সালাম।’

বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া বলেন, ‘সেতুটি নির্মিত হওয়ায় তিনটি উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ উপকৃত হবে। মুজিবুর রহমানকে আমরা (এলাকাবাসী) আজীবন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মনে রাখব।’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সিলেটের প্রবাসীরা আন্তরিক। তাই সব সময় তাঁদের পাশে থেকে কাজ করতে চাই। মুজিবুর রহমানের মতো মানুষের সংখ্যা সমাজে কম। তাঁর মতো এলাকার সব বিত্তবান ও প্রবাসীকে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে। এত টাকা দিয়ে সেতু নির্মাণ করে মুজিবুর রহমান উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’

সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার পূর্ব মান্দারুকা গ্রামের মো. আবদুল মানিক ও মোছা. দিলারা বেগম দম্পতির ছেলে মুজিবুর রহমান ১৯৭৮ সালে ছয় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এযাবৎ তিন-চারবার দেশে বেড়াতে এসেছেন তিনি। সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বছর তিনেক আগে আমার দাদি মোছা. ফুলেছা বেগম গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু বাসিয়া নদীতে সাঁকো না থাকায় চিকিৎসক আসতে দেরি হয়। একপর্যায়ে দাদি মারা যান। চিকিৎসক দ্রুত আসতে পারলে হয়তোবা আমার দাদি বেঁচে যেতেন। এ ঘটনায় আমি বেশ কষ্ট পাই। আর কেউ যাতে এমন কষ্ট না পায় এবং শিশুরা যাতে নিরাপদে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় যেতে পারে, সে জন্যই এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিই। মানুষের কল্যাণে কিছু কাজ করার জন্য বাড়িতে দালান কিংবা সিলেট শহরে বাড়ি নির্মাণ না করে প্রথমে সেতুটি নির্মাণ করি। আর সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষেই মাত্র ১৪ দিনের জন্য দেশে এসেছি।’



মন্তব্য চালু নেই