লালমনিরহাটে দরিদ্র মানুষের আহাজারী

অবরোধ হরতাল দরিদ্রদের দারিদ্রতার নীচে পদদলিত করছে

যেদিন থাকি অবরোধ শুরু হইছে সেদিন থাকি মোর স্বামী কাজত যায়, আর কাজত যেয়া কি লাভ, বাজতো আর নাই। বাড়ীর সগাইগুলা এ্যালা হামরা খায়া নাখায় থাকছং” আঞন্চলিক ভাষায় এমনটি জানালেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার খোড়ারপুল গ্রামের কদবানু বেগম। ”ছওয়া দুইটা অনাহারে স্কুলত যায়, আর বাড়িত আসিও অনাহারে থাকে। ভাতের জন্য কান্দে, ঘরোত খাবার নাই, হামরাও স্বামী-কষ্ট পাং উপায়তো আর নাই,” কদবানু জানালেন।

কদবানুর স্বামী শফিকুল ইসলাম একজন পরিবহন শ্রমিক। গত ৫জানুয়ারী বিএনপি নেতৃত্বাধিন ২০ দলীয় জোট লাগাতার অবরোধ আর ফাকে ফাকে হরতাল ডাকায় সম্পুর্ন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ছোট কুড়েঘরটি মেরামত করার জন্য কদবানু ও তার স্বামী শফিকুল সাড়ে সাতশ টাকা জমিয়েছিলেন কিন্তু অবরোধের প্রথম চারদিনে জমা টাকা শেষ। এখন ওই পরিবারে ভাতের জন্য চলছে আহাকার।

দুইদিন আগে দিনরাত উপোস থেকে ঘুম ভাঙ্গে কদবানুর পরিবারের লোকজনের। ঘুম থেকে উঠেই ক্ষুধার জ্বালায় বাঁদতে থাকে তার দুই সন্তান তৃতীয় শ্রেনীর সাদিয়া আক্তার ও প্রথম শ্রেনীর সিমু আক্তার। প্রতিবেশী জোলেখা বেগমের কাছে ধার করে এক পোয় (২৫০ গ্রাম) চাল। কদবানু ছোট একটি পাতিলে চুলার উপর দিয়ে চাল সিদ্ধ করছে ভাতের জন্য আর চুলার পাশে ভাতের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে শিশু দুটি।

তরকারী ছাড়াই তাদের দুই মেয়ে একপোয়া চালের ভাত খেয়েছে আর তারাা স্বামী-স্ত্রী অনাহারে। পরে সুদের উপর কিছু টাকা ধার করেই কোনরকমে চলছে তাদের সংসার, এমনটি জানিয়ে কদবানু বল্লেন,”আর বুঝি হামার কুড়েঘরটা মেরামত হলোনা। আরো রিন করলং। হামরাগুলা গরীব আরো গরীব হবার নাগছং। হরতাল অবরোধ হামাকগুলা গরীব বানবার নাইকছে।”

কদবানুর মেয়ে সাদিয়া ও সিমু জানালো তারা এখন না খেয়ে স্কুলে যায় আর বাড়ীতে এসেও না খেয়ে থাকতে হয়। রাতের বেলা কোনরকম দুমুঠো ভাত জুটছে তা অনেকসময় পেটও ভরেনা।

কদবানুর স্বামী শফিকুল ইসলাম জানালেন পরিবহনে কোন কাজ নেই। অবরোধ আর হরতাল তাকে বেকার বানিয়েছে তার আয় করতে না পরায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ”অবরোধ হরতালের পক্ষে আর বিপক্ষে কোন দলই আমাদের গরীবের কথা ভাবেন না। তারা শুধু নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। আমরা এই রাজনীতির ভয়ংকর ছোবল থেকে মুক্তি চাই,” শফিকুল জানালেন।

কদবানুর প্রতিবেশী মোসলেমা বেগম জানালেন, অবরোধ হরতাল আসার কারনে তাদেরকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তার রিক্সাচালক স্বামী খোরশেদ মিয়ার রোজগার কমেছে ৮০ শতাংশ। স্বামীর রোজগার কমার জন্য তাদের জ্নী যাপনে নেমে এসেছে স্খবিরতা।
মোসলেমার স্বামী খোরশেদ মিয়া জানালেন, অবরোধ আর হরতালের কারনে আতংকিত সাধারন মানুষজন। খুব একটা বেশী প্রয়োজর ছাড়া মানুষ শহরে আসছেন না, আর সেকারনেই রিক্সার যাত্রী কমেছে অধিকাংশে। ”অবরোধের আগে আমি প্রতিদিন গতে ২৫০ থেকে ৩০০

টাকায় করতাম আর অবরোধ হরতালের কারনে আমার আয় হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকা,” জানালেন খোরশেদ মিয়া।
আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী এলাকার কৃষি শ্রমিক শমসের আলী জানালেন, অবরোধ হরতালের কারনে তাদের দিনমজুরী কাজ কমে গেছে বহুলাংশে। সামান্য জমানো পুজি শেষ করে নির্ভর করতে হচ্ছে সুদের টাকার উপর। ”হরতাল অবরোধের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই চড়া সুদের ব্যবসা শুরু করেছে। আর আমরা দিনমজুর শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে চড়া সুদে টাকা ধার নিচ্ছি। একসময় সুদ আসল মেটাতে গিয়ে আমরা দারিদ্রতার কশাঘাতে হাবু ডুবু খাবো,” জানালেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম, স্থানীয় কলেজ শিক্ষক জানালেন অবরোধ আর হরতাল দরিদ্র মানুষকে আরো বেশী দরিদ্র করতে বড় হাতিয়ার কারন দরিদ্র মানুষরা এসময় জমানো পুজি হারিয়ে নুতনভাবে চড়া সুদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। ”ঘর মেরামত করতে না পারায় সামান্য ঝড়ে তা লন্ডভন্ড হয়ে যায় আর পুনরায় নির্মান করতে গিয়ে দরিদ্র মানুষগুলো চিরদিন দারিদ্রতার বোঝা বহন করে থাকে। আর বলয় থেকে তারঅ কোনদিনই বেড়াতে পারেনা,” এমনটি জানালেন তারা।

অবরোধ হরতাল মানুষকে দারদ্রি করার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। অবরোধ হরতালকে চিরতরে গলাটিপে মারতে না পারলে সাধারন মানুষ কখনই দারিদ্রতার বলয় থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবেন না আর ডিজিটাল বিনির্মানে শতভাগ সাফল্যও আসবেনা বলে সচেতন মহল মনে করছেন।



মন্তব্য চালু নেই