অবরোধ তুললেও সংলাপের গ্যারান্টি নেই : ইমাম

বরাবরের মতো বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রতি হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি তুলে নিতে আহ্বান জানালেও কর্মসূচি তুলে নিলেই যে সংলাপ হবে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এবার অনুষ্ঠানের ১০৩তম পর্বে এইচ টি ইমাম ছাড়াও প্যানেল সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্টাস্ট্রির সভাপতি হোসেন খালেদ।

অনুষ্ঠানে দর্শকদের প্রথম প্রশ্ন ছিল- রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমাদের আর কতদিন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে হবে?

উত্তরে এইচ টি ইমাম বলেন, সরকারিভাবে যতটুকু সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।সহিংসতা আগে থেকে অনেক কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, “শহরের বাইরে গ্রাম ও ইউনিয়নগুলোতেও জনগণ এগিয়ে এলে খুব তাড়াতাড়ি এ সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাবো।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের কেউ কিন্তু বোমা মারছে না। আওয়ামী লীগ বিরোধীরাই করছে। আজকের বাংলাদেশে যারা এ কাজ করছে তারা, একাত্তরেও বাংলাদেশের বিরোধিতা করে এ কাজ করেছিল।”

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আজকে জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী এমন কাজ করছে। এর সঙ্গে বিএনপি’র কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যে মুহূর্তে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ঘোষণা দেয়া হবে, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে, তখনই হরতাল-অবরোধ পালন করা থেকে সরে আসবে জনগণ।”

হোসেন খালেদ বলেন, “আমরাও নিরাপত্তাহীনতা বোধ করি। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে আমাদের বাজেট ছিল ১৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা আয় করা। সেভাবে প্রতিদিন সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কন্ট্রিবিউশন থাকার কথা। সেখানে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।”

ফারাহ কবির বলেন, “ব্যক্তি, মা বা উন্নয়নকর্মী হিসেবে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। প্রতিদিন গণমাধ্যমে খবর আসছে দেশের কোথাও না কোথাও সহিংসতা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমরা কি করে ফিরে পাবো?”

আরেক প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, “নির্বাচনে না গিয়ে তারা সন্ত্রাস করছে। সবার গ্রহণযোগ্য সরকার এসেছে। এরপর হঠাৎ করে এসে তালগাছটি চাই বললে হবে? এখন হরতাল-অবরোধ বন্ধ করুক, পরে যখন নির্বাচন হবে, তখন নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে কথা হতে পারে।”

ফারাহ কবির বলেন, “জনগণের জন্যই নাকি রাজনীতিবিদরা সব করেন। তাহলে সমস্যার সমাধান যদি সংলাপ হয়, তবে সংলাপে বসতে হবে আপনাদের।”

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকারে আছে তাদেরকেই এই একমাত্র সমাধান সংলাপের ডাক দিতে হবে।”

এইচ টি ইমাম বলেন, “যারা দেশে সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন, তারা আগে বন্ধ করুন, জনগণকে মুক্তি দিন।”

কর্মসূচি বন্ধ হলে যে আলোচনা হবে তার গ্যারান্টি কী- এ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা স্পষ্ট জানিয়ে দেন “তার গ্যারান্টি নেই। বন্ধ হলেই যে আলোচনা হবে তা নয়। ‘তালগাছটি আমার’- এ অবস্থান থেকে তারা সরে আসুক, তখন জনগণই বলবে এ সমস্যার সমাধান করতে।”

অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ এবং উপস্থাপনা করেন আকবর হোসেন। বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন এবং বিবিসি বাংলার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। এতে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত বিষয়ে দর্শকরা সরাসরি প্যানেল সদস্যেদর কাছে প্রশ্ন বা মতামত প্রকাশ করতে পারেন।

‘বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ’ অনুষ্ঠানটি বিবিসি বাংলায় প্রচার হয় প্রতি রোববার রাত আটটায় এবং পুনঃপ্রচার হয় মঙ্গলবার রাত আটটায়। এছাড়া চ্যানেল আইয়ে অনুষ্ঠানটি প্রচার হয় সোমবার রাত সাতটা ৫০ মিনিটে এবং পুনঃপ্রচার হয় প্রতি মঙ্গলবার সকাল পাঁচটা এবং দুপুর তিনটা পাঁচ মিনিটে।



মন্তব্য চালু নেই