অনেক বকবক হয়েছে, মুখ বন্ধ করো!

এশিয়া কাপে তাঁর উদ্‌যাপন ভঙ্গি বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় গল্পগাথায় চিরদিনের জন্য ঠাঁই করে নিয়েছে। টানা চার ম্যাচে চার ফিফটি করার পর আঙুল গুনে দেখিয়ে দিয়েছিলেন: ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর!

আজকের উদ্‌যাপনটি কি আরেকটি বার্তা দিল? সাঈদ আজমলকে চার মেরে পৌঁছালেন সেই কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে। যে তিন অঙ্কের জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে পাক্কা দু্ই বছর। এই দুই বছরে কম কথা হজম করতে হয়নি। সেঞ্চুরিতে পৌঁছেই তামিম যে ভঙ্গিতে উদ্‌যাপন করলেন, তার দুটো মানেই হতে পারে। ‘নিন্দুকেরা, তোমরা বড্ড বেশি বকবক করো।’ কিংবা, ‘অনেক হয়েছে, এবার থামো।’

কী ভীষণ চাপে ছিলেন, সেটা তিনিই জানেন। মাঠের বাইরে সমালোচনায় জর্জরিত। মাত্র চার ইনিংস আগেই ৯৫ রান করেছেন, এটা যেন ভুলে গেছে সবাই। তার চেয়ে বেশি চোখে পড়ছে বিশ্বকাপের শেষ তিন ইনিংসে তাঁর ২, ১৩, ২৫ রানের ইনিংস তিনটি। বিসিএলে দুই ম্যাচে করলেন ১০ আর ৫। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৯।

দেয়ালে পিঠ থেকে গেলেই নাকি গর্জে উঠে সত্যিকারের বাঘ। রাগে ফুঁসতে থাকা সেই বাঘের থাবায় ক্ষত-বিক্ষত হলো পাকিস্তানের বোলাররা। ১১২ বলে সেঞ্চুরি ছুঁলেন, ১২টি চার, দুইটি ছক্কা। ফিফটি করতে লেগেছিল ৭৫ বল। পরের ৫০ এল মাত্র ৩৭ বলে। তাঁর পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির তালিকায় তাঁর ওপরে আছেন সাকিব আল হাসান (৬)। কিন্তু এক জায়গায় সাকিবকে ঠিকই পেরিয়ে গেলেন তামিম।

দুই বন্ধুর মধ্যে ‘লড়াই’টা বেশ কিছু দিন ধরেই চলছিল। অবশেষে আজ সাকিবকে টপকে ওয়ানডে ইতিহাসে তামিমই এখন বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের মালিক।

এই ম্যাচের আগে সাকিবের রান ছিল ৪ হাজার ১৭৩। তামিমের ৪ হাজার ১২৫। সাকিবের চেয়ে ৪৮ রান পেছনে ছিলেন তামিম। মজার ব্যাপার হলো, ঠিক ৪৭ রানে গিয়ে আউট হতে পারতেন তামিম। তাঁর একটি সহজ ফিরতি ক্যাচ হাতে লাগিয়েও মুঠোয় জমাতে পারেননি সাদ নাসিম। কে জানে, হয়তো ক্রিকেট-ভাগ্যই আজ ঠিক করে রেখেছিল, বাংলাদেশের ওয়ানডে রানের মুকুটটা তামিমের মাথাতেই উঠবে। নাসিমের ওই বলেই এক রান নিয়ে সাকিবের পাশে বসেছেন তামিম। ওভারের শেষ বলে স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে পৌঁছেছেন ৪৯-এ। পৌঁছেছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে রানের শিখরে। তাঁর রান এখন ৪ হাজার ২৫৭।

শেষ পর্যন্ত ১৩৫ বলে ১৩২ করে আউট হয়েছেন। ১৫টি চার, তিন ছক্কা। বাউন্ডারি থেকেই এসেছে ৭৮ রান। এটাই পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো বাংলাদেশির সর্বোচ্চ ইনিংস।

এই একবারই সুযোগ দেওয়া তামিম আজ শুরু থেকেই খেলেছেন দুর্দান্ত। বেশি বিস্ফোরক হয়েছেন সেঞ্চুরির পর। সবচেয়ে চড়াও হলেন সাঈদ আজমলের ওপর। যে আজমল আগের ৬ ওভারে মোটে ২৫ রান দিয়েছেন, তাঁর সপ্তম ওভারেই উঠল ১৮। দুটো চার এক ছক্কাসহ তামিমই তুললেন ১৭। মাঝেমধ্যেই ডাউন দ্য উইকেটে গেছেন। শুরু থেকেই ছিলেন ‘মেজাজি’। যেন আজ পণ করেই নেমেছিলেন, সবাইকে মনে করিয়ে দেবেন, ফর্ম ইজ টেম্পরারি, ক্লাস ইজ পারমানেন্ট!

আউট হয়ে ফেরার সময় ‘তামিম’ ‘তামিম’ গর্জন গ্যালারিতে। তামিম যেন চেয়ে দেখেও দেখলেন না। বিস্ফোরক, বিধ্বংসী একটা ব্যাটসম্যানের মধ্যে কোমল একটা হৃদয়ও তো আছে। সেই হৃদয় রক্তাক্ত হয়েছে বারবার।
এই তামিম বড্ড অভিমানীও!



মন্তব্য চালু নেই