অত্যাধুনিক ফ্ল্যাটে অবাধে চলছে জমজমাট দেহ ব্যবসা
চট্টগ্রামে যৌনকর্মীদের নিয়ে ১৯৯৪ সাল থেকে কাজ করে আসা বেসরকারী সংগঠন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর প্রষ্টিটিউটস এন্ড রুটলেস চিলড্রেন (পার্ক)‘র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাসা-বাড়ী ও ফ্ল্যাটে চলে আসা জমজমাট দেহ ব্যবসা চলছে অবাধে।
একটি স্বার্থাম্বেসী মহল অল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফার আশায় এই ব্যবসা পবিত্র রমজান মাসেও চালিয়ে আসছে যা কোন ঈমানদারের কাম্য হতে পারে না।
এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক যৌনকর্মীর উপর কাজ করা হয়েছে , তবে এসংখ্যা ১০,০০০ এর অধিক বলে অনুমান করা হয়।
জানা গেছে,দেহ দানের মাধ্যমে পুরুষকে সেবা দানের এই ব্যবসা বন্ধ করা না হলে মৃত্যু অনিবার্য ‘এইডস’ [অ্যাকোয়ার্ড ইমিউন ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম] এর মত নীরব মরণ ব্যাধি দেশ ব্যাপী মহামারী আকারে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে!
অপরের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ পুশ করলে অথবা একাধিক পুরুষের সাথে সঙ্গমে অভ্যন্ত নারীর সাথে ইনজয় করলে উভয়ের এইডস রোগ হওয়ার সম্ভনার কথা প্রচারিত হলেও এতে কেউ কর্ণপাত করছে না বিধায় ক্রমেই এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী মাদক গ্রহণকারীদের ৪ শতাংশই এইডস ভাইরাসের বাহক। জাতীয় এইডস কমিটির মতে দেশে এইডস ভাইরাস বাহকের সংখ্যা সহস্রাধিক এবং এইডস রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯ শতাধিক। দেশে এইডস ভাইরাস দেখা দেয়ার পর এই ব্যাধিতে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি মারা গেছে।
১৯৪০ সালে এইচআইভি [হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস] আফ্রিকার ক্যামারুনে প্রথম মানব দেহে ধরা পড়ে। বিশ্বে এইডস রোগীর সংখ্যা ৬ কোটিরও বেশি। এইডস রোগে এ পর্যন্ত মারা যায় প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ। ভারত ও চীনে এইচআইভি মহামারী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। চীনে ৬ লাখ ৫০ হাজার,মিয়ানমারে ৩ লাখ ৬০ হাজার,পাকিস্তানে ৮৫ হাজার ও ভারতে ৫২ লাখ লোক এইচআইভি রোগে আক্রান্ত।
বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভি সংক্রমিত রোগ ধরা পড়ে। দেশে প্রতিদিন ৭ জন করে এইডস রোগী সনাক্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে আমাদের দেশে এইডস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। জাতি সংঘের প্রতিবেদনে বলা হয় ২০২০ সালের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে প্রতি বছর ৫ লাখ এইডস রোগী মারা যাবে।
জানা যায়, নগরীর কর্ণেলহাট, মুনছুরাবাদ, লালদিঘি, নিউমার্কেট মোড়, স্টেশন, সদরঘাট, প্রবর্তক, জিইসি, আকবরশাহ, পতেংগা, লালখান বাজার, স্টেডিয়াম, ষোলশহর, খুলশি এলাকার শতাধিক গেষ্ট হাউজে চলে মদ,জুয়া ও দেহ ব্যবসা। কাজ হাসিলের জন্য এখানে প্রায় দেয়া হয় ওম্মা ওম্মা নাইট,থার্সডে নাইট ও ককটেল পার্টি। এসব পার্টিতে দেশী-বিদেশী কলগার্লরা অংশ নিয়ে আগত ভিআইপি অতিথিদের মন রাঙিয়ে তুলে।
এছাড়া শতাধিক হোটেলের পাশাপাশি রেস্তোরা,বিউটি পার্লার,ম্যাসেজ পার্লার, ক্লাব,বার,রেষ্ট হাউজ, ফ্ল্যাট ও বাসাবাড়ীতে চলে আসছে দেহ ব্যবসা। অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলা অবাধ যৌনাচারে সিফিলিস,গনোরিয়াসহ জীবন বিধ্বংসী এইচ আইভি এইডসের মত কঠিন ব্যাধির বিস্তার ঘটছে গোটা দেশ ব্যাপী।
জানা যায়,নগরীর বেশিরভাগ আবাসিক হোটেলে প্রতিদিন সাড়ে ২ হাজার খদ্দেরের সমাগম ঘটে। আর এদের যৌনানন্দ দেয়ার জন্য সাড়ে ৩ হাজার ললনা নিজেদেরকে বিলীয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
যৌন ব্যবসায় লিপ্ত থাকা হোটেল গুলোর মাসিক আয় ২ কোটি টাকা। যৌনকর্মীদের মতে আরোও বেশী।
নগরীর অধিকাংশ বিউটি পার্লার ম্যাসেজ পার্লারে পরিণত হয়েছে। দেশী-বিদেশী সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে এসব পার্লারে চালানো হয় ওরাল সেক্স ও ভ্যাজাইনাল সেক্স। অভিজাত এলাকার হোটেল,গেষ্ট হাউজ,রেষ্ট হাউজ, ক্লাব,বার ও ফ্ল্যাট-বাড়ীতে এলিট শ্রেণীর লোকজন যাতায়াত করে। তবে সাধারণ হোটেল ও ফ্ল্যাট বাড়ীতে সর্বশ্রেণীর পেশার মানুষ যাতায়াত করে।
১৩ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণীরা দেহ দানের মাধ্যমে সেবা দান করে। তাদের ভোগ করতে ১৫ বছরের কিশোর হতে ৭০ বছরের বৃদ্ধ খদ্দর হিসেবে যাতায়াত করে।
ফ্ল্যাট বাড়ী এবং হোটেল ভিত্তিক পতিতা ব্যবসায় ৩টি শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয় ভাবী, ইনটেক ও এ্যাংগেজ। ২৫ হতে ৩০ বছরের বয়সী বিবাহিতা পতিতাকে বলা হয় ভাবী, সঙ্গম করা হয়নি এমন পতিতাকে বলা হয় ইনটেক ও কাঙখিত পতিতা সঙ্গমে লিপ্ত থাকাবস্থায় উহাকে বলা হয় এ্যাংগেজ। প্রতি রাতে প্রায় ২০০-৫০০ ভাসমান পতিতা বিভিন্ন স্পটে খদ্দর ধরার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন বস্তি ছাড়াও তরুণীরা কর্মস্থলে যোগ দেয়ার নামে বোরকা, হাত ও পা মোজা পরে প্রতিদিন সকাল হতে রাত ৮ টা পর্যন্ত বেশ্যাবৃত্তিতে লিপ্ত হয়।
এছাড়া কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্রী ও সমাজের এক শ্রেণীর গৃহবধু এই অসামাজিক কাজে জড়িত। গৃহবধুরা শুধু জৈবিক চাহিদা মিটানোর জন্যই এই পথে পা রাখছে। টাকা-পয়সা তাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়।
দেহ ব্যবসার পাশাপাশি মাদক গ্রহণ করা হয়। মাদকের ব্যবহার হোটেলেই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ বিশেষতঃ মদ। হোটেলের আসরে বাংলা মদ থেকে শুরু করে দামী গ্রীন লেবেল,হুসকি,রয়াল সেলুট ও জীন ভোদকাসহ সবই চলে। সাধারণ মানুষের চোখে ফাঁকি দিতে বিভিন্ন হোটেল থেকে কোক,পেপসী ও আরসি কোলার খালি বোতলে মদ কিনে নিয়ে যায় খদ্দররা।
পতিতার ধরন বুঝে টাকার পরিমান উঠা- নামা করে ৩০০ টাকা হতে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। তবে এ সিংহ ভাগই চলে যায় দালাল আর মাস্তানদের হাতে।
যৌনকর্মীরা তিনটি শ্রেনীতে বিভক্ত : ভাসমান বা সড়ক কেন্দ্রিক, হোটেল ভিত্তিক এবং আবাসিক। শ্রেনী ভেদে এদের আসার কারণ ভিন্ন ভিন্ন।
ভাসমান যৌনকর্মীদের এ পেশায় আসার কারণ মুলত: আভ্যন্তরিণ পাচার। দালাল কর্তৃক চকিুরী কিংবা ভাল বিয়ের প্রলোভান দেখিয়ে এদের শহরে এনে দালালের হাতে তুলে দেয়া হয়। দালাল এদের নিজে কিংবা খদ্দের কর্তৃক জেরপুর্বক প্রথমে ধর্ষন, পরে যৌন পেশায় নিয়োজিত করা হয়। অনেকে আবার চাকুরীর সন্ধানে এসে বাস স্টেশনে দালালের খপ্পরে পড়ে প্রথমে ধর্ষিত হয়, পরে জোর পুর্বক এ পেশায় নিয়োজিত হয়। কেউ কেউ পারিবারিক কলহ বিশেষ করে স্বামী বা শশুরবাড়ির নির্যাতনের শিকার হয়ে গৃহ ত্যাগ করার পর দালালের খপ্পরে পড়ে। এ ক্ষেত্রে একটি অনুল্লেখযোগ্য অংশ দারিদ্রের কারণে স্বেচ্ছায় এ পেশায় জড়িয়ে পরে।
হোটেল ভিত্তিক যৌনকর্মীদের অধিকাংশই পাচারের শিকার। তবে, বেশ কিছু স্কুল-কলেজের ছাত্রী,বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বাড়তি আয়ের জন্য খন্ডকালিন যৌনপেশায় নিয়োজিত হয়। প্রবাসির স্ত্রীরা এ পেশায় আসে মুলত: যৌন চাহিদা মেটাতে।আবাসিক যৌনকর্মীরা মুলত: দালাল কর্তৃক পরিচালিত।
খুলশী থানার ওসি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন নগরীর কোন জায়গায় এ-ধরনে অসামাজিক কার্যকলাপ চলবে না। নগরীর বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং গেস্টহাউসে এরকম অসামাজিক কার্যকলাপ চলে তাহলে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বেসরকারী সংস্থা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর প্রষ্টিটিউটস এন্ড রুটলেস চিলড্রেন (পার্ক)‘র প্রধান নির্বাহী নজরুল ইসলাম মান্না বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ ডট কম’কেবলেন , যৌনপেশায় নিয়োজিত যৌনকর্মীরা আসলে পতিতা নয়, বরং যারা তাদের এ পেশায় নিয়ে আসে কিংবা ভোগ করে তারাই পতিত: এটা ঠিক , কিছু সংখ্যাক ছাত্রি, যুবতী কিংবা গৃহবধু স্বেচ্ছায় এ পেশায় নিয়োজিত হয়। তাদের বাদ দিলে যৌন পেশায় নিয়োজিত সিংহভাগ জোর পুর্বক এবং সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে এ পেশায় নিয়োজিত হয়, কাজেই তাদের পতিতা না বলে যৌনকর্মী বলা উচিত। এসব যৌনকর্মী কিন্তু এ পেশা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবণে ফিরে আসতে চায়, কিন্তু সে সুযোগ পায় না। এদের চাহিদা খুবই সামান্য। কাজেই সরকারের উচিত এদেরে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনসম্পদে পরিনত করে সামাজিক ভাবে পুনর্বাসিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে তাদের দির্ঘ্য মেয়াদী কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজন। করাণ যৌনপেশায় নিয়োগিত হওয়ার প্রক্কালে ধর্ষন ও শারীরিক নির্যাতন, দীর্ঘ্য দিন যৌনপেশায় ধারাবহিকভাবে নির্যাতন ও বঞ্চনার কারণে এদের মধ্যে মানসিক সমস্যা ও মাদকাসক্তি সমস্যা দেখা দেয়।বিডি২৪লাইভ
মন্তব্য চালু নেই