অকালেই ঝরে গেল ঢাবির মেধাবী ছাত্রীর জীবন
অকালেই ঝরে গেল দুর্ভাগা তরুণী সাবিনা জাহান নাহিদের (২৭) জীবন। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল মেয়েটি। উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছে কৃতিত্বের সঙ্গে। এমবিএতেও প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিল সে। সোনালী ভবিষ্যৎ যার জন্য অপেক্ষা করছিল।
পরিবারের অভিযোগ, হত্যার পর তার স্বামী সোহেল রানা কাঞ্চন লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছিল। স্বামী সোহেল রানা কাঞ্চন পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ নিয়ে নাহিদের সঙ্গে সব সময় কলহ লেগেই থাকতো। এর জের ধরেই শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় নাহিদকে। পরে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে কাঞ্চন। এ ঘটনায় নাহিদের মামা হারুন-উর-রশিদ বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ নাহিদের স্বামী কাঞ্চনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
নাহিদের স্বজনরা জানান, বছর কয়েক আগে নাহিদের সঙ্গে কাঞ্চনের পরিচয় হয়। কাঞ্চন ২০০১ সাল থেকে দুবাই থাকতো। পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে মোবাইল ফোনে কথা হতো। কাঞ্চন এসময় নিজেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেছে বলে পরিচয় দেয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১২ সালের ৪ মে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের। কিন্তু বিয়ের পরই নাহিদ বুঝতে পারে কাঞ্চন তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সে এমএ পাসের বিষয়টি মিথ্যা বলেছে। এছাড়া, তার একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে প্রায়ই নাহিদের সঙ্গে ঝগড়া হতো। গত বছর এই দম্পতির একটি সন্তান হয়।
নাহিদ তার পরিবারের সঙ্গে তালতলা সরকারি কলোনির কল্লোল-ঙ-৩০৪ বাসায় থাকতো। মাসখানেক আগে কাঞ্চন দুবাই থেকে দেশে আসে। এরপর আবারো তাদের নানা বিষয় নিয়ে কলহ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ওই বাসায় নাহিদের লাশ পাওয়া যায়। নিহত নাহিদের ভাই তৌহিদ হাসান জানান, তার জন্মের এক মাস আগেই তার বাবা মারা গেছেন। মা সরকারি চাকরি করেন। মায়ের সঙ্গে তারা দুই ভাইবোন সরকারি কলোনির বাসাতেই থাকতেন।
দুবাই থেকে আসার পর কাঞ্চনও তাদের বাসায় থাকতেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে তার মা অফিসে চলে যান। দুপুরের দিকে তৌহিদ নিজেও বাইরে কাজে যান। এ সময় বাসায় তার বোন, বোন জামাই ও তাদের একমাত্র সন্তান ছিল। দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ তার বোনজামাই ফোন করে জানান নাহিদ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে তারা দ্রুত বাসায় আসেন। এর মধ্যেই কাঞ্চন তার বোনকে সিলিং ফ্যান থেকে নিচে নামিয়ে রাখে।
তৌহিদ জানান, ঘটনার পর তারা বুঝতে পারেন নাহিদকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলে লাশ যে রকম থাকার কথা তার কোন চিহ্ন ছিল না লাশের শরীরে। ঘটনার তিন দিন পরে তাদের অভিভাবক মামা হারন-উর- রশিদ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তৌহিদ হাসান জানান, তার বোন খুব মেধাবী ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে। ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছিল। পরীক্ষাও ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাকে কোন চাকরি করতে দিতে চাইতো না। এছাড়া, তার স্বামীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকা এবং পরকীয়ায় লিপ্ত থাকায় তার বোনের ওপর অত্যাচার চালানো হতো। এসব নিয়ে ঝগড়ার কোন এক পর্যায়ে তার বোনকে হয়তো শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
তৌহিদ হাসান জানান, তার বোনকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য আগে থেকেই সে তার নিজের প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র, পাসপোর্ট, কর্মস্থলের আইডিকার্ড, ব্যাংকের চেকবই ও জমা রসিদ, কাপড়চোপড় এবং তার বোনের সব অলংকার সরিয়ে ফেলেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলানগর থানার এসআই নৃপেন বলেন, এ ঘটনায় একমাত্র আসামি সোহেল রানা কাঞ্চনকে দুই দফা চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সে হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করেছে। সোহেল রানার ভাষ্য, মান-অভিমানের জের ধরে তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। এসআই নৃপেন বলেন, আমরা পোস্টমর্টেম রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছি। এই রিপোর্ট হাতে পেলে বিষয়টি হত্যা না আত্মহত্যা তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
মন্তব্য চালু নেই