৩৪ বছর পর বদলে গেলো ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ
![](https://archive1.ournewsbd.net/wp-content/uploads/2017/01/Islami-Bank-700x450.jpg)
টানা ৩৪ বছর জামায়াতের করায়ত্তে থাকার পর এবার বদলে গেলো ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। বৃহস্পতিবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ও পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ারকে সরিয়ে পরিচালনা পর্ষদকে জামায়াতমুক্ত করা হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক সচিব আরাস্তু খান। ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি আব্দুল হামিদ মিঞা আগামী সপ্তাহেই নতুন এমডি হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকটির একজন স্বতন্ত্র পরিচালক শনিবার বলেন, ‘ব্যাংকটিকে সর্বজনীন করার অংশ হিসেবে পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। রবিবার থেকে নতুন চেয়ারম্যান অফিসে বসবেন। প্রয়োজনে ম্যানেজমেন্টেও পরিবর্তন আনা হতে পারে। তবে এই পরিবর্তনে আমানতকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’
১৯৮৩ সালের ১৩ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম ইসলামি ব্যাংক হিসেবে এই ব্যাংকের যাত্রা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে জামায়াত নেতারাই ছিলেন। তাদের মধ্য থেকেই চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানসহ সব স্তরেই ওই ঘরানার জনশক্তিই বেশি।
যদিও গত বৃহস্পতিবার গুলশানের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রথমবারের মতো জামায়াতের বাইরের ব্যক্তি আরাস্তু খানকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। সেখানে একসঙ্গে পদত্যাগ করেন আবদুল মান্নান, ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ার ও এম আযিযুল হক। ওই সভাতেই ব্যাংকের নতুন এমডি নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি ব্যাংকের কোম্পানি সচিব হিসেবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কোম্পানি সচিব জাহিদুল কুদ্দুস মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
পর্ষদ সভা থেকেই ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে নির্বাচিত করা হয়। নতুন নেতৃত্ব ১২ ও ১৩ জানুয়ারি সোনারগাঁও হোটেলে সব শাখার প্রধানদের সম্মেলনে দিকনির্দেশনা দেবে।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর ধরে জঙ্গি কর্মকাণ্ডসহ রাজনৈতিক সহিংসতায় অর্থায়নের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটিকে জামায়াতমুক্ত করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় বিভিন্ন মহল। বিষয়টি তদন্তের জন্য প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ব্যাংকটিকে জামায়াতমুক্তের কাজ শুরু হয়। এরই অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের জুন মাসে পরিবর্তন আনা হয় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে। জামায়াতনেতা সাবেক চেয়ারম্যান আবু নাসের মুহাম্মদ আবদুজ জাহেরের স্থানে বসানো হয় প্রকৌশলী মোস্তফা আনোয়ারকে।
এরপর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বতন্ত্র পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান এনআরএম বোরহান উদ্দিনকে ব্যাংক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
অবশ্যই এর আগে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ক্ষতিকর কার্যকলাপ প্রতিরোধে এই ব্যাংকটিতে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে ব্যাংকটি উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) নিয়োগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করে। এরপর পরিচালনা পর্ষদ থেকে বিদায় নেন অধ্যাপক ড. একে এম সদরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, মো.আবদুস সালাম, হুমায়ুন বখতিয়ার, ইঞ্জিনিয়ার ইস্কান্দার আলী, ড. আবদুল হামিদ ফুয়াদ আল খতিব, মো. আবুল হোসাইন, নাসের আহমদ আল খোন্দকার এবং এএইচজি মহিউদ্দিন। এই পরিচালকদের সরিয়ে বসানো হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম, পূবালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হেলাল আহমদ চৌধুরী ও এম আযিযুল হককে। যদিও গত বৃহস্পতিবার এম আযিযুল হককেও সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে যোগ দেন বিডিবিএলের সাবেক এমডি জিল্লুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আবদুল মাবুদ, অধ্যাপক অধ্যাপক ডা. কাজী শহিদুল আলম ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের সদস্য বোরহান উদ্দিন আহমেদ।
একইভাবে নিয়োগ পান মেজর জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন, মো. সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল করিম, আইনজীবী মিজানুর রহমান, রূপালী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি জয়নাল আবেদীন, শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেডের সিইও মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। তবে আইডিবির প্রতিনিধি ড. আরেফ সুলেমান আগের অবস্থানে রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘আগে ইসলামী ব্যাংকে শিবিরের লোক ছাড়া কাউকে নিয়োগ দেওয়া হতো না। আশা করি, এই পরিস্থিতি থেকে ব্যাংকটিকে উদ্ধার করে স্বাভাবিক ব্যাংকিংয়ে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে নতুন পরিচালকরা ভূমিকা রাখবেন।’
অর্থনীবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, ‘পরিচালনা পর্ষদে কেবল নতুন লোক নিয়োগ দিয়ে এই ব্যাংকে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। ব্যাংকের সব স্তরেই পরিবর্তন আনতে হবে।’
বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ১৬ জন পরিচালক। এরমধ্যে ৭ জনই স্বতন্ত্র পরিচালক। এর আগে এই ব্যাংকে পরিচালকের সংখ্যা ৯ থেকে ১১ জনের মধ্যে সীমিত ছিল।
মন্তব্য চালু নেই