পেনশন সমর্পণকারীরা পেনশন প্রতিস্থাপন পেতে যাচ্ছেন
শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশন প্রতিস্থাপন পেতে যাচ্ছেন। যাদের বয়স ৭০ বছর পার হয়েছে, শুধু তারাই এ সুযোগ পাবেন। এজন্য বছরে অতিরিক্ত ৩২ কোটি টাকা ব্যয় হবে সরকারের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে ‘শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরাম’এর সদস্য সচিব এবং সরকারের প্রাক্তন সচিব এ জেড এম শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দেখা করে। বৈঠকে ৭০ বছরের বেশি বয়সি পেনশনভোগীদের জীবনমান তুলে ধরে পেনশন প্রতিস্থাপনের দাবি জানানো হয়।
সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী পেনশনভোগীদের জীবনযাপনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত হন এবং বিষয়টি সুবিবেচনার আশ্বাস দেন। এ সময় তিনি বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের অনেকেই নানা ধরনের সামাজিক সমস্যায় পড়েছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের দাবি পূরণ করা হবে।
সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশনে যাওয়ার পর প্রতিমাসে পেনশনের টাকা পেয়ে থাকেন। তাদের অবর্তমানে উত্তরসুরীরা এ পেনশন পেয়ে থাকেন। তবে ১৯৮০ সাল থেকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, যে কেউ ইচ্ছে করলে পেনশনের পুরো টাকা একবারে তুলে নিতে পারেন। অনেক চাকরিজীবীই পরিবারের নানা প্রয়োজন মেটাতে পেনশনের পুরো টাকা একবারে তুলে নেন। কেউ এ টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, ফ্ল্যাট কিনেছেন কিংবা সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় ব্যয় করেছেন।
সূত্র জানায়, পুরো পেনশন একসঙ্গে তুলে নেওয়া চাকরিজীবীদের মধ্যে যাদের বয়স ৭০ এর বেশি হয়েছে এরা অনেকেই অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন সচিব জানান, বিএনপি সরকারের সময় তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। অবসরে যাওয়ার পর তিনি তার পেনশন শতভাগ সমর্পণ করেন। পেনশনের টাকা দিয়ে তিনি ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন। কিন্তু সে ফ্ল্যাটটি বেচে ছেলে-মেয়ের উচ্চ শিক্ষার পেছনে ব্যয় করেন। বর্তমানে তিনি অনেকটা পরমুখাপেক্ষী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তিনি বলেন, আমি আমার পেনশন শতভাগ সমর্পণ না করলে আজ আমাকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হতো না। বেঁচে থাকার তাগিদে আজ আমাকে সরকারে কাছে পেনশন প্রতিস্থাপনের অনুরোধ জানালে অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
বৈঠকে সংগঠনের সদস্য সচিব এ জেড এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ৭০ বছরের বেশি যাদের বয়স, তারা বেশিরভাগই স্বাস্থ্যগতভাবে অক্ষম, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি কিংবা প্রবীণ নিবাসে আছেন। সন্তানাদি থেকেও অনেকে বিচ্ছিন্ন। তারা উৎসব ভাতা বা চিকিৎসা ভাতা পান। বৈশাখী ভাতার প্রাপ্যতা আছে। পিপিওর আওতাধীন থাকায় তারা সরকারের সঙ্গে একীভূত, সে কারণে তাদের সংখ্যা নিরুপণে কোনো জটিলতা নেই।
তিনি বলেন, ২০০৩-২০০৪ সালে ৩২ হাজার, ২০০৭-২০০৮ সালে প্রায় ১৪ হাজার কর্মচারী শতভাগ পেনশন সমর্পণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে ৭০ বছর সীমা ধরায় প্রাপ্তিযোগ্য কর্মচারীর সংখ্যা খুবই কম হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা ৫ শতাংশের বেশি হবে না। এ ছাড়া অর্থের সংশ্লেষণ খুবই কম। বর্তমান হিসাবে মাসিক ২-৩ কোটি টাকা, যা বার্ষিক ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা হতে পারে। নতুনভাবে বাজেটে বরাদ্দের প্রয়োজন হবে না। বর্তমানে পেনশনের জন্য অনুন্নয়ন বাজেটের ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা আছে, যার পরিমাণ ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পেনশনারদের সংখ্যা মৃত্যুজনিত কারণে ক্রমাগত হ্রাস পাবে, বিধায যে পরিমাণ অর্থ অব্যয়িত থেকে যাবে তা থেকেই মেটানো যাবে। রাজস্ব খাতের অব্যয়িত অর্থও ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষেত্রে যোগ হতে পারে।
তিনি বলেন, পেনশন সমর্পণকারীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে। যারা জীবিত থাকবেন পেনশন প্রতিস্থাপন হলে বৃদ্ধ বয়সে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। সিডিআর ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হলেও সমর্পণকারীদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। যতটুকু জানা যায়, ২০০৯ পে-কমিশন যারা শতভাগ সমর্পণ করেছেন তাদের বেলায ১৫ বছর পুর্তিতে পেনশন পুনঃস্থাপনের জন্য সুপারিশ করেছিল ১ টাকায় ২০০ টাকা হিসেবে, যা আসলে ১০০ টাকা হিসেবে। ভারত এবং পাকিস্তানেও অনুরূপ পেনশন পুনঃস্থাপন ব্যবস্থা চালু আছে। কোথাও ১৫ বছর, কোথাও ১২ বছর। আমাদের ক্ষেত্রে ১০ বছরই যথেষ্ঠ।
মন্তব্য চালু নেই