চর্যাপদ মুখস্ত করলেন ঢাবি ছাত্র
হাজার বছর আগে বাংলাভাষায় রচিত প্রথম গ্রন্থ ‘চর্যাপদ’ সম্পূর্ণ মুখস্থ করা প্রায় দুঃসাধ্য কর্ম। আর এই দুঃসাধ্য কর্মটি করে দেখিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের ছাত্র জাকেরুল ইসলাম কায়েস। খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যরা।
এ ব্যাপারে জাকেরুল ইসলাম কায়েস বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার শুরু থেকে চর্যাপদের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ ছিল। এক সময় চিন্তা করলাম এটি মুখস্ত করা যেতে পারে। সেখান থেকেই মুখস্ত করা। আসলে ইচ্ছে করলে মানুষ অনেক কিছুই পারে।’
এদিকে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আরসি মজুমদার মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘চর্যাপদ’ মুখস্ত পরিবেশন করবেন বলে জানান তিনি।
অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইসরাফিল আলম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এবং সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি; ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম এমপি; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল এবং কবি, লেখক ও শিল্পী মো. আব্দুর রশিদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রসিদ্ধ অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘চর্যাপদ মুখস্ত করা প্রকৃত পক্ষে কঠিন ও দুঃসাধ্য কাজ। কিন্তু জাকেরুল তার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এটি মুখস্ত করেছে। এটি তার মুখে শুনে মানুষ বুঝতে পারবে আমাদের ভাষা হাজার বছর আগে কেমন ছিল।’
উল্লেখ্য, চর্যাপদের ভাষা বাংলা কি না সে বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, যদিও পরবর্তীতে সেটির অবসান হয়। এটি সৃজ্যমান বাংলা ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। চর্যাপদের রচয়িতা বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যরা সংস্কৃতে পারদর্শী হলেও তারা তৎকালীন অপরিণত বাংলাতেই পদগুলো রচনা করেছিলেন। চর্যাপদের ভাষা বাংলা ভাষার অদ্যাবধি আবিষ্কৃত আদিতম রূপ। হিন্দি, উড়িষ্যা বা মৈথিলি বিজ্ঞজনেরা এই ভাষায় নিজেদের পূর্বসুরিত্বের সন্ধান করলেও ভাষাবৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ফল বাংলা ভাষারই অনুকূল। এই ভাষা সম্প্রদায় বিশেষের সাধন-সংগীতের ভাষা বিধায় অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য; যদিও এতে উল্লিখিত ছন্দ ও রাগ-রাগিনী পরবর্তীকালের বাঙালি কবিদের পথনির্দেশিকারূপে কাজ করে।
মন্তব্য চালু নেই