স্ত্রীকে কুয়ো উপহার!

দলিত বলে উচ্চবর্ণের মানুষের কুয়োয় জল তুলতে গিয়ে দারুণ ভাবে অপমানিত হয়েছিলেন বাপুরাও তাজেঁর স্ত্রী। কুয়ো থেকে জল তুললে উচ্চবর্ণের মানুষজনের ‘জাত যাবে’ বলে! দূর দূর করে তার স্ত্রীকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। স্ত্রীর অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজেই একটি কুয়ো খুঁড়ে স্ত্রীকে উপহার দিলেন ভারতের নাগপুরের ওয়াসিম জেলায় কলম্বেশ্বর গ্রামের বাপুরাও তাজঁ।

গত মার্চ মাসে কাজ সেরে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর মুখে সে কথা শুনেই মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল বাপুরাও তাজেঁর। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়েছিল বাজারে। কুয়ো খোঁড়ার যন্ত্রপাতি কিনতে। সেই সব যন্ত্রপাতি দিয়ে পরের দিন সকাল থেকেই কুয়ো খোঁড়া শুরু করেছিল দিন আনা, দিন খাওয়া শ্রমিক বাপুরাও।
প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা করে বাপুরাও মাটি খুঁড়তেন। কিন্তু শুধুই তো কুয়ো খুঁড়লে চলবে না। কাজে না গেলে পরিবারের সবাই না খেয়ে থাকবে। তাই দিনে আট ঘণ্টার দিন মজুরির কাজেও বাপুরাও ফাঁকি দেননি এক দিনও। সেই কাজে যাওয়ার আগে, সকালে ঘুম থেকে উঠে চার ঘণ্টা করে মাটি খুঁড়তেন বাপুরাও। আবার কাজ সেরে বাড়ি ফিরে বিকেল দু’ঘণ্টা করে মাটি খুঁড়তেন তিনি।

কেউ পাশে দাঁড়াননি বাপুরাওয়ের। স্ত্রী, আত্মীয়-পরিজনরাও টিপ্পনি কেটেছেন। পাড়া-পড়শিরা, অন্য দলিতরাও মুচকি হেসেছেন তখন বাপুরাওকে দেখে।দিনে ১৪ ঘণ্টা হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে ৪০ দিনে শেষমেশ মাটির ১৫ ফুট তলায় প্রচুর জলের হদিশ পেয়ে গিয়েছেন বাপুরাও। বানিয়ে ফেলেছেন ৬ ফুট চওড়া কুয়ো। চাইছেন, আরও ৫ ফুট গভীরতায় খুঁড়তে। আর চাইছেন, কুয়োটাকে অন্তত ৮ ফুট চওড়া করতে। এখন পাড়া-পড়শিরা তার কুয়ো থেকেই জল নিয়ে যায়।

বাপুরাওয়ের স্ত্রী বলেন, ‘কেন যে ওই দিনগুলোয় ওকে অত গঞ্জনা দিয়েছি, এখন কষ্ট হয়!’ তারপরও আমি আনন্দদিত আমার অপমান সহ্য করতে না পেড়ে আমার স্বামী দিন-রাত পরিশ্রম করে আমাকে একটি কুয়ো উপহার দিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই